রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:১১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জামালপুর জেলার তিন হাজার প্রান্তিক পরিবারকে উন্নত আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে উপভোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে ইসলামপুরে সিডস কর্মসূচির অবহিতকরণ সভা কে হচ্ছেন নগরকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কেশবপুরে সংবাদ সম্মেলন চিলাহাটি প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক মেয়াদের কমিটি গঠন বদলগাছীতে কৃষকের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে কম্বাইন হারভেস্টার বিতরণ উলিপুরে ইউড্রেনের দুই পাশের সংযোগ সড়ক হওয়ায় এলাকাবাসী আনন্দিত কালীগঞ্জে সরকারি স্থান থেকে ফুলের হাট স্থানান্তর: বিপাকে প্রতিবন্ধী ইজারাদার পিআইবি,র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলো নগরকান্দা ও সালথার সাংবাদিক বৃন্দ গজারিয়া স্বপ্নপূরণে ছেলেকে হেলিকপ্টারে বিয়ে করালেন স্কুলশিক্ষক বাবা বরিশালে প্রচন্ড তাপদাহে বাড়ছে তালপাখার চাহিদা

অপারেশনের নামে ‘টর্চার সেলে’ পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন: হারুন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৫ মে, ২০২৪

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমে আশ্রয় নিতে আসা গরিব-অসহায় মানুষগুলোর জন্য শরীরে বিভিন্ন স্থানে পচনের কারণে যখন অপারেশনের প্রয়োজন হতো, তখন নিজে ব্লেড দিয়ে তা কেটে ফেলতো আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার! এতে অসহায় মানুষগুলো অমানবিক কষ্ট পেতেন, আর্তনাথ করতেন। কিন্তু পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন। সে রীতিমতো টর্চার সেল চালাতো। গতকাল রবিবার (৫ মে) দুপুরে মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন উর রশীদ। রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে জানান হারুন।
তিনি বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের মতো সাইকোপ্যাথ কীভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হয় তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি যে নির্যাতন করে, ব্লেড-ছুরিতে নিজেই অপারেশন করতেন, টর্চার সেলে মানুষকে পেটাতেন তাদের তিনি ‘বানর’ বলে অভিহিত করতেন, পিটিয়ে নিস্তেজ করতেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে এসব করে তিনি পৈশাচিক আনন্দ পেতেন। আমরা তার টর্চার সেল থেকে আলামত জব্দ করেছি। কথিত অপারেশন থিয়েটার থেকে ব্লেড-ছুরি জব্দ করেছি।
তিনি আরও বলেন, মিল্টন সমাদ্দার ভয়াবহ অপরাধ করেছেন। একটি দুটি অপরাধ করেননি। তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ তো ভয়াবহ। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। তার অ্যাকাউন্টে এখনও ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আছে। এতোগুলো টাকা থাকার পরও তিনি কাউকে চিকিৎসা করাননি। তিনি নিজেই হয়ে গেছেন অপারেশন থিয়েটারের হেড। তার অপারেশন থিয়েটারে থাকতো একটা ছুরি ও কিছু ব্লেড। তিনি এগুলো দিয়েই নিজেই অপারেশন করাতেন। এরকম ভয়াবহ, অমানবিক আচরণ, অসভ্য আচরণ, এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্যই তো লজ্জাজনক। যারা তার সঙ্গে জড়িত, যারা পেট্রোনাইজড করেছে, সহযোগিতা করেছে, ফেসবুকে ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য যারা পেট্রন করেছে, ফাউন্ডেশনের মেম্বার তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
হারুন বলেন, যে ছেলেটা সেই উজিরপুর থেকে বাবা পিটিয়ে ঢাকায় এসে ওষুধের দোকানে চুরি করেছে, এরপর একটা আশ্রম গড়ে তোলে। যেখানে সে অসহায়, গরীব শিশু, বৃদ্ধ, প্যারালাইজড, বাকপ্রতিবন্ধী, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে সংগ্রহ করে আশ্রমে নিত। তাদের দেখিয়ে সে ফেইসবুকে ফলোয়ারের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতো। সেই টাকা আবার সে খরচ করতো না অসহায়দের পেছনে।
তার আশ্রমে ৯০০ লোক মারা গেছে বলে নিজেই প্রচার করতো উল্লেখ করে হারুন বলেন, মানুষগুলো মারা গেছেন। জানাজা হলো না, রাতের অন্ধকারে কবর দেওয়া হলো। আত্মীয়-স্বজনকে জানানো হলো না। মিথ্যেভাবে সিল-স্বাক্ষর দিয়ে নিজেই ডেথ সার্টিফিকেট দিলো। রেকর্ডেও রাখলো না। এসবই আমাদের তদন্তে আসবে।
যেসব শিশু তার আশ্রমে ছিল তাদের খোঁজ পাওয়ার পর দেখা করতে দেওয়া হতো না স্বজনদের। ওই শিশুদের ক্ষেত্রে আসলে কী ঘটেছিল? বিক্রি করতো? কিছু পেয়েছেন আপনারা? এমন প্রশ্নের উত্তরে হারুন বলেন, একটু ধৈর্য ধরেন। সবই বেরিয়ে আসবে। এরকম আরও যেসব মিল্টন সমাদ্দার বাংলাদেশে যদি আরও থেকে থাকে, তথাকথিত মানবতার ফেরিওয়ালা নামে ধরনের অপকর্ম করে থাকে তাদের ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
মিল্টন সমাদ্দার নিজ্ইে বলেছেন, ৯০০ লোকের প্রাণ নিভে গেলো! কীভাবে নিভে গেলো? তিনি তো তাদের হাসপাতালে নেননি, ডেথ সার্টিফিকেটও নেননি, থানা পুলিশকে অবহিত করেননি। আবার ৯০০ লোকের প্রাণ যাওয়ার যে কথা তিনি বলেছেন, সেটা আদৌ সত্য কিনা, নাকি এটা টাকা ইনকামের একটা কথার কথা! সত্য হলে কী করেছেন। সব তদন্তে নিয়ে আসবো। এই আশ্রমের সঙ্গে আরও যারা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৯০০ লোকের মৃত্যু সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে মিল্টন সমাদ্দার ডিবি পুলিশকে জানিয়েছে, আসলে ৯০০ মানুষ মরেনি। তাহলে কতোজন মারা গেছে? বলেন ১৩৫ জন মারা গেছে। আসলে ৯০০ লোক মারা গেছে। তাদের দাফন করেছি। সেটারও তিনি রেজিস্টার্ড সংগ্রহে রাখেননি। যারা মারা গেলেন তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়নি। এতোগুলো মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে অবশ্যই তাকে জবাব দিতে হবে, বলেন হারুন।
তিনি জানান, অটিজম শিশুদের সঙ্গে যা করা হয়েছে তা লজ্জাজনক। কারণ বঙ্গবন্ধুর নাতনিপ্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম নিয়ে সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক অফিসের (ডব্লিউএইচওএসইএআরও) আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বৈশ্বিক অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল)। আর সেই দেশে অটিজমের নাম ধারণ করে অসহায়, বাক প্রতিবন্ধী ভারসাম্যহীন মানুষ সংগ্রহ করে ফেসবুকে প্রচার করে ফলোয়ারদের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে আত্মসাৎ করেছেন। অন্যদিকে তিনি সেই টাকা খরচা করেননি। এটা তো লজ্জাজনক।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com