প্রায় ৪৫০ বছরের পুরোনো কালোপাথর দিয়ে নির্মিত নওগাঁর ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যের এক অপরুপ নিদর্শন। প্রতিদিনই শত শত মানুষের ঢল নামে পাঁচ টাকার নোটে মুদ্রিত এ মসজিদটিকে ঘিরে। প্রাচীন আমলের দেয়ালগুলোতে কারুকার্য খচিত নকশাগুলো থাকে দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। কুসুম্বা মসজিদটি সুলতানি আমলের একটি পুরাকীর্তি। যা জেলার ইতিহাস ও মুসলিম ঐতিহ্যের উজ্জল নিদর্শন। মসজিদটিতে ৬টি গুম্বুজ থাকলেও ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে ৩টি গম্বুজ নষ্ট হয়েছিল। পরে প্রত্নতত্ব বিভাগ মসজিদটি সংস্কার করেন। মসজিদের ভেতর ২টি পিলার রয়েছে। আর মসজিদের সামনে রয়েছে বিশাল আকৃতির ১০০ বিঘা দীঘি। এখানে দিন দিন বাড়ছে পর্যটকদের সংখ্যা। শুধু দেশ নয়; এই মসজিদটি দেখতে আসেন বিদেশী দর্শনার্থীরাও। এদিকে পুরুষদের পাশাপশি মহিলারাও পৃথকভাবে নামাজ পড়তে পারবেন এখানে। জানা গেছে, ধর্মের প্রতি বিশ্বাস আর ভালোবাসা থেকেই ৯৬৬ হিজরিতে সুলতান গিয়াস উদ্দিন বাহাদুর শাহের শাসনামলে সোলায়মান নামে এক ব্যক্তি দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি নির্মান করেছিলেন। পাঁচ টাকার নোটে মুদ্রিত মসজিদটি জেলা শহর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। মসজিদটির ভেতর আর বাহিরে দেখা মিলবে পোড়ামাটির বাহারি টালি, বিভিন্ন ফুল, লতা-পাতার কারুকাজ। যা এখনও সুলতানী আমলের পরিচয় বহন করে। আর মসজিদ সংলগ্ন উত্তর-দক্ষিনে লম্বা বিশাল দিঘীটি মসজিদের সৌন্দর্যকে নিয়ে গেছে অন্য একমাত্রায়। এরই মধ্যে মসজিদটির দেখভালের দায়িত্ব নেয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। তবে আগের চেয়ে অনেক উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে স্থানটিতে। দর্শনার্থীরা জানায়, মসজিদটিতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে আসেন দুর-দুরান্ত থেকে ধর্মপ্রান মুসল্লীরা। এছাড়া রাজশাহী, ব্রাক্ষনবাড়ীয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন দর্শনার্থীরা। তারা বলেন; এত সুন্দর দৃষ্টিনন্দন ও অপরুপ মসজিদ তারা কখনও দেখেননি। আগে যা দেখেছিলাম তার থেকে এখন আরো বেশি সুন্দর মসজিদটি। বার বার আকৃষ্ট করায় আবারো এসেছেন। সামনে রয়েছে বিশাল দীঘি। এসব দেখতে প্রতিদিনই ছুটে আসেন শত শত নারী-পুরুষ। কুসুম্বা মসজিদ ইমাম হাফেজ মাওলানা ওবায়দুল হক বলেন, সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন ৯১০ হিজরীতে এবং সুলতান গিয়াস উদ্দিন বাহাদুর শাহ এর ৯৬৬ হিজরিতে নির্মান কাজ সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ ৬৬ বছর লেগেছে নির্মান কাজ শেষ করতে। শুধু দেশ নয়; মসজিদটি দেখতে আসেন বিদেশী দর্শনার্থীরাও। শুক্রবার দিনে লোকজন বেশী আসেন মান্নত ও নামাজ আদায় করতে। তিনি আরো বলেন, ঐতিহাসিক নিদর্শন হলেও অনেক সমস্যা রয়েছে এখানে। মসজিদের চারপাশে ময়লা আবজর্না রয়েছে। সেগুলো পরিস্কার করলে দর্শনার্থীদের আকর্ষন আরো বাড়বে। সেই সাথে দিঘীর চারপাশ পরিস্কার করলে দর্শনার্থীরা নির্বিঘ্নে হাটতে পারবে। নওগাঁর জেলা গোলাম মাওলা বলেন, প্রাচীন মজজিদটি দেখতে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা আসেন দেশ-বিদেশ থেকে। ইতোমধ্যেই রেস্ট হাউজ ও পার্ক নির্মান করা হয়েছে। পর্যটন সম্ভবনাকে আরো বৃদ্ধি করার জন্য অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। এতে করে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে।