সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪, ১২:৩০ পূর্বাহ্ন

এমপি আনারের বন্ধু গোপালকে নিয়েও দানা বাঁধছে সন্দেহ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ মে, ২০২৪

বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যাকা-ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন তার দীর্ঘদিনের বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। কিন্তু আনার খুনের পর থেকেই গোপাল বিশ্বাসকে নিয়েও সন্দেহ দানা বাঁধছে। কারণ নিখোঁজ হওয়ার আগে তার বাড়িতেই উঠেছিলেন এমপি আনার। গত ১২ মে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার অন্তর্গত মন্ডলপড়া লেনে অবস্থিত গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন তিনি। পরের দিন অর্থাৎ গত ১৩ মে ডাক্তার দেখানোর নামে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যান। এরপর থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান আনোয়ারুল আজীম আনার।
গত প্রায় দশদিন নিখোঁজ থাকার পর কলকাতার পার্শ্ববর্তী শহরাঞ্চল রাজারহাট নিউটনের বহুতল আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেনসে বিইউ ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটেই ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে শ্বাসরোধ করে খুন করার খবর সামনে আসে। আনোয়ারুল আজীম খুন হওয়ার পর থেকে বরাহনগর থানার অন্তর্গত মন্ডলপড়া লেনে গোপাল বিশ্বাসের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে গেলে কখনো বলা হচ্ছে তার শরীর খারাপ তিনি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন আছেন, আবার কখনো বলা হচ্ছে তিনি বাড়িতে নেই। তবে গোপাল বিশ্বাস সম্বন্ধে মন্ডলপাড়া লেনের বাসিন্দারা কোনো রকম মুখ খুলতে চাইছে না। গোপাল বিশ্বাসের নাম সোনা মাত্রই অনেকেই বলে উঠছে কে গোপাল চিনি না, কেউবা বলছে সোনার ব্যবসায়ী গোপাল? তার সম্বন্ধে আমরা কিছু বলতে পারব না। কেউবা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে বলছে আমরা গোপাল বলে কাউকে চিনি না। খোঁজ করে দেখুন হয়তো আশেপাশে কোথাও আছে। জানা গেছে, কলকাতার পার্শ্ববর্তী বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস পেশায় সোনা ব্যবসায়ী। তিনি সোনা কিনে গহনা তৈরি করে বিদেশে এক্সপোর্ট করেন। এছাড়াও গোপাল বিশ্বাসের নদীয়া জেলার গেদে বানপুরে একটি ইটভাটা আছে। বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস তার এলাকার লোকজনের সঙ্গে খুব একটা মেলামেশা করতেন না। খুব কম কথা বলা মানুষ তিনি। গোপাল বিশ্বাস সচরাচর বিশেষ কোনো কাজ না থাকলে বাড়ির বাইরেও খুব একটা বের হতেন না। এমনটাই জানিয়েছেন মন্ডলপাড়া লেনের বাসিন্দারা।
এদিকে গণমাধ্যমে এমপি আনারের খুন হওয়ার খবর জানতে পেরে গোপাল বিশ্বাস প্রচ- মর্মাহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার ২৪ মে সকালে তার বাড়িতে গেলেও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। এরপর দফায় দফায় একাধিকবার চেষ্টার পর ফোনে পাওয়া গেলে গোপাল বিশ্বাস জানান হৃদরোগ ও অ্যালার্জির সমস্যা নিয়ে তিনি এই মুহূর্তে সল্টলেকের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি আছেন। তিনি বলেন, আমাকে পুলিশের কর্মকর্তারাও গণমাধ্যমের সঙ্গে মুখ খুলতে নিষেধ করেছেন।
যদিও অনেক অনুরোধের পর তিনি বলেন, এই ঘটনার পর আমি এমনি মর্মাহত হয়ে পড়েছি। গতকাল আমি সব টেলিভিশন দেখেই জানতে পারলাম এই ধরনের একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে গেছে।
গোপাল বিশ্বাস বলেন, আমি যখন এই ঘটনা প্রথম টিভিতে দেখে জানতে পারলাম তখন আমার চোখ থেকে আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পড়ছিল। আমি না কাঁদলেও আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমি ভাবতেই পারছি না এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।
কিন্তু কেন আনারকে খুন করা হতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে গোপাল জানান উনার মতো একজন মানুষকে মেরে ফেলতে পারে, এমন ধারণা আমার কোনদিনই ছিল না। কারণ আমি জানি উনার কোনো শত্রু নেই। উনি কোনো ঝামেলায় থাকেন না। কেন এই ধরনের একটা মানুষকে খুন করা হলো? আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না।
গোপাল বিশ্বাস বলেন, এই ঘটনা ঘটার পর তদন্তকারী কর্মকর্তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তারা আমাকে সঠিক তথ্য পরিবেশনের কথা জানান এবং পুলিশের পরামর্শে নতুন করে আরেকটি অভিযোগ পত্র জমা দেন থানায়। বরানগর থানার পুলিশের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ (আইবি), এসবি, সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারাও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গেছে।
তার দাবি, আমি যদি জানতে পারতাম এ ধরনের ঘটনা ঘটবে, তাহলে কি আর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতাম। আমি যখন এই খুনের ঘটনা জানতে পারলাম, তারপরই আমি বরানগর থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করি। এমপি খুনের পর অনেকেই গোপাল বিশ্বাসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে গোপাল বলেন, আমাকে যদি কেউ দোষারোপ করে, আমার এতে কিছু বলার নেই। আমি নির্দোষ। আমি জীবনে কোনদিন কারো ক্ষতি করিনি। এসব বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আমি কোনো ঝামেলায় থাকি না। আমি ব্যবসা করি, আমার কোনো অভাব নেই। আর আমি কেনই বা এর মধ্যে জড়াবো?
আমি যদি কোনো অন্যায় করে থাকি… প্রশাসন যদি মনে করে তাহলে আমাকে ধরবে। নিজের একজন কাছের মানুষকে যদি বাড়িতে রাখা পাপ হয়। তাহলে আর কিছু বলার নেই।
এমপি আনারের প্রশংসা করে গোপাল বলেন, উনি (আনার) আমার উপকার ছাড়া অপকার করেননি। পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার মাজদিয়ার বাসিন্দা সুভাষ আগরওয়ালের মাধ্যমে এমপি আনারের সাথে আমার পরিচয় হয়। এছাড়া উনি যে সেদিন নিজে আমার বাড়িতে আসবেন, সেটাও আমি জানতাম না। উনি আমাকে গেদে থেকে ফোন করে বলল, আমি গেদে থেকে আসছি এবং সুভাষ দার (আনারের পূর্ব পরিচিত সুভাষ আগরওয়াল) মাঝদিয়ার বাড়িতে যাব। উনি নিজেই সুভাষকে ফোন করেছিলেন এবং সুভাষ জানান তার মেয়ের ছেলে হয়েছে। সে কারণে তিনি বাড়িতে নেই। এরপর তিনি আমার বাড়িতে এসে উঠেন।
চিকিৎসা করাতেই এই সংসদ সদস্য কলকাতায় এসেছিলেন বলে দাবি করেন গোপাল বিশ্বাস। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে কোনো রকম আলোচনাও করেনি এবং সেই সময়ও পায়নি। তিনি আমার বাড়িতে আসলেন, আবার পরের দিনই সেখান থেকে চলে গেলেন। আমি তাকে শুধু জিজ্ঞাসা করেছিলাম তুমি কিসের জন্য এই সময় কলকাতায় এসেছো, তখন আমাকে বলল ডাক্তার দেখাতে হবে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার কি সমস্যা হচ্ছে? উত্তরে আমাকে বলল, স্নায়ুরোগের ডাক্তার দেখাতে হবে। তখন আমি তাকে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেই।
তিনি বলেন, এরপর তিনি আমাকে একটি গাড়ির ব্যবস্থা করতে বলেন। আমার বাড়ির কাছে বিধান পার্কে একটি গাড়ির ব্যবস্থা করা হয় এরপর শুভজিৎ মান্না নামের এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসেন। সেদিন বিকেল বেলা ডাক্তার দেখিয়ে গোপালের বাড়িতে ফিরে আসার কথা থাকলেও তিনি দিল্লি চলে যাচ্ছেন বলে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠান ওই আনোয়ারুল আজীম। তারপর থেকেই বেশ কয়েকদিন নিখোঁজ থাকার পর তার খুনের খবর সামনে আসে।
এমপি আনারের লাশ টুকরো করার যে বর্ণনা দিয়েছে ‘কসাই’ জিহাদ: বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার পরে যে ‘কসাই’ তার রাশ টুকরো করেছিল বলে অভিযোগ, তাকে ভারতের কলকাতায় গ্রেফতার করেছে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। শুক্রবার বারাসাত আদালতে তোলা হবে তাকে।
সিআইডির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জানান, জিহাদ হাওলাদার নামে ওই ব্যক্তি বাংলাদেশী নাগরিক এবং তিনি অবৈধভাবে ভারতের মুম্বাইতে বাস করতেন। তার আদি বাসস্থান বাংলাদেশের খুলনা জেলার দিঘলিয়া থানার অন্তর্গত বারাকপুরে।
এই হত্যাকা-ের মূল পরিকল্পনাকারী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান দু’মাস আগে জিহাদকে কলকাতায় নিয়ে যান। গত বৃহস্পতিবার জিহাদকে আটক করে একটানা জেরা করা হয়। তারা নিহত এমপি আনারের লাশ কলকাতা-সংলগ্ন কোনো এলাকায় ফেলে দিয়ে থাকতে পারে, সেটা জানার চেষ্টা করা হয়।
নিহত এমপির লাশের অংশের খোঁজে সিআইডি বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতা পুলিশ এলাকার অন্তর্গত পোলেরহাট থানার কৃষ্ণবাটি সেতুর কাছে বাগজোলা খালে তল্লাশি চালায়। নিউটাউন এলাকার যে ফ্ল্যাটে আনারকে হত্যা করা হয়, সেই আবাসিক কমপ্লেক্সের সামনে দিয়েই এই খালটি বয়ে গেছে। লাশ লোপাটের বীভৎস বর্ণনা: সিআইডির ওই শীর্ষ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সংসদ সদস্য আনারকে হত্যার পরে কিভাবে লাশ লোপাট করা হয়েছিল, তার ভয়ঙ্কর বর্ণনা দিয়েছেন। গ্রেফতার হওয়া জিহাদ সিআইডির জেরায় স্বীকার করেন, আখতারুজ্জামানের নির্দেশে ওই ফ্ল্যাটে সে এবং আরো চারজন বাংলাদেশী নাগরিক এমপি আনারকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
সিআইডির ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘হত্যা করার পরে লাশ থেকে চামড়া ছাড়িয়ে শরীরে মাংস আলাদা করে নেয় তারা। শরীরের মাংস এমনভাবে টুকরো করা হয় যেন তাকে চেনা না যায়। মাংস-খ-গুলি পলি প্যাকেটে ভরা হয়। হাড়ও ছোট টুকরো করা হয়। এরপরে ফ্ল্যাট থেকে প্যাকেটগুলো বের করে বিভিন্নভাবে কলকাতার নানা জায়গায় ফেলে দেয়া হয়।’ ধৃত জিহাদ হাওলাদারকে গতকাল শুক্রবার বারাসাত আদালতে তোলা হয় । আলাদত তার ৮দিনের রিমান্ড মঞ্জুর কেেরছন।
পুরো পরিকল্পনার বর্ণনা ঢাকার ডিবি প্রধানের মুখে: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বৃহস্পতিবার দুপুরে মিন্টো রোডে তার কার্যালয়ে এই হত্যাকা- নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে এ হত্যাকা-ের পরিকল্পনা কোথায়, কখন, কিভাবে ও কারা সঙ্ঘটিত করেছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তিনি জানান, এ হত্যাকা-ের মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান বা শাহীন। শাহীন এমপি আনারের বাল্যবন্ধু। তার সাথে ব্যবসায়িক বিরোধ কী নিয়ে ছিল, সে বিষয়েও তদন্ত করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘২৫ এপ্রিল জিহাদ অথবা জাহিদ এবং সিয়াম কলকাতার সঞ্জিভা গার্ডেনে বাসা ভাড়া করে। এ জন্য ৩০ এপ্রিল ঘটনার মাস্টারমাইন্ড কলকাতায় যায়। হত্যাকাণ্ড সঙ্ঘটিত করবেন উনি ও আরেকজন। সাথে ছিলেন তাদেরই গার্লফ্রেন্ড। তিনজনে মিলে ৩০ এপ্রিল বিমানযোগে কলকাতা চলে যায়। যে বাসা ভাড়া করা হয় সেখানে তারা উঠে। বোঝাতে চায় এখানে পরিবার থাকবে। অপরাধের কোনো কিছু ঘটবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের নথি দিয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া: ভারতে বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে হলে মালিক এবং ভাড়াটিয়া, আর যে দালালের মাধ্যমে ভাড়া নেয়া হচ্ছে, সব পক্ষের ছবিসহ নথি স্থানীয় থানায় জমা দিতে হয়। আখতারুজ্জামান, আমানুল্লা সৈয়দ এবং সিলিস্তি রহমান ওই ফ্ল্যাটে থাকবেন বলে সেটি ভাড়া নেয়া হয়েছিল। মে মাসের এক তারিখে নিউটাউন থানায় এই নথি জমা করা হয়। তার আগেই পুরো দল কলকাতায় পৌঁচায় বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। তিনজন থাকবেন বলে থানায় জমা দেয়া নথিতে লেখা থাকলেও ফ্ল্যাটটি সল্ট লেক অঞ্চলের এক দালালের মাধ্যমে ভাড়া নিয়েছিলেন আখতারুজ্জামানই।
ভাড়া নেয়ার সময়ে নথি হিসেবে তিনি নিউইয়র্কের ড্রাইভিং লাইসেন্সের নম্বরও জমা দিয়েছিলেন। রয়েছে তার ছবিও। পেশা হিসেবে তিনি সেখানে লেখেন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। পশ্চিমবঙ্গের সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী জানান, ‘ওই ফ্ল্যাটটি সন্দীপ রায় নামের পশ্চিমবঙ্গের শুল্ক বিভাগের এক অফিসারের।’
দু’মাস ধরে নজর রাখা হয়: ঘটনার পূর্ব পরিকল্পনা কিভাবে হয়েছে, তা বর্ণনা করতে গিয়ে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘তারা দু’মাস যাবত এটাও খেয়াল করছিল ভিকটিম কবে আসা যাওয়া করে। কলকাতা কখন যায়। কারণ তিনি মাঝেমধ্যে কলকাতা যান। এবার ১২ মে সেখানে যান ও বন্ধু গোপালের বাসায় উঠেন। এখান থেকে তারাও সেখানে যায়। আরো দু’জনকে সেখানে ভাড়া করে।’
তিনি বলেন, ‘কলকাতার এই বাসাতে আসা যাওয়া করবে, এমন দুজনকে ঠিক করে। মাস্টারমাইন্ড সেখানে সব কিছু ঠিক করে, কোন গাড়ি ইউজ হবে, কাকে কত টাকা দিতে হবে। কারা কারা থাকবে সেগুলো সব কিছু ঠিক করে অপরাধ সঙ্ঘটিত করতে পাঁচ-ছয়জনকে রেখে ১০ মে দেশে চলে আসে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এমপি আনার কলকাতায় ১২ মে গিয়ে বন্ধু গোপালের বাসায় ছিলেন। পরদিন হত্যাকাণ্ড যারা ঘটায় তাদের সাথে যোগাযোগ হয় তার। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘১৩ মে উনার ওই চক্রটার সাথে কথা হয়। প্রথমে ফয়সাল নামের একটা ব্যক্তি সাদা গাড়িতে রিসিভ করে। সেখান থেকে নিয়ে কিছু দূরে যে মূল হত্যাকাণ্ডটা সঙ্ঘটিত করে সে, ফয়সাল ও ইন্ডিয়ান ড্রাইভার ছিল রাজা। সে (রাজা) আসলে কিছুই জানে না, সে ছিল ক্যারিয়ার। সে তাদেরকে নিয়ে ওই বাসায় যায়। ওই বাসায় যাওয়ার পরই মোস্তাফিজ নামে আরেকজন ঢুকে। জিহাদ ও সিয়াম আগেই ওই বাসায় ছিল।’
বিভ্রান্ত করতে এমপির ফোন থেকে মেসেজ: কলকাতায় এসে যে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন আনোয়ারুল আজিম আনার, সেই গোপাল বিশ্বাস আগেই জানিয়েছিলেন যে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে এমপির ফোন থেকে একাধিক মেসেজ পেয়েছিলেন তিনি।
সেই মেসেজে কখনো বলা হয়েছিল যে তিনি (এমপি) সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবেন, কখনো জানানো হয় যে তিনি বিশেষ কাজে দিল্লি চলে যাচ্ছেন। আবার দিল্লিতে যে তিনি পৌঁছেছেন আর তার সাথে ‘ভিআইপি’রা আছেন, সে কথাও জানান বন্ধু গোপাল বিশ্বাসকে। ঢাকার ডিবি প্রধান জানান, ‘টোটাল উদ্দেশ্য ছিল একদিকে লাশ গুম করা, অস্তিত্ব যেন কখনো না পাওয়া যায়। অন্যদিকে তদন্তকারীরা যেন কোনো ডিভাইস খুঁজে না পায়। আবার ইন্ডিয়ান পুলিশের নজর যেন বাংলাদেশে না আসে।’ সূত্র : বিবিসি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com