গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষিকা সামিয়া রহমানের পদাবনতির সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষের সিভিল পিটিশন অকার্যকর ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগ। গতকাল রোববার (২৬ মে) আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে চার বিচারপতির এ আদেশ দেন। আদালতে সামিয়া রহমানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম বলেন, ২০২২ সালের ৪ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষিকা সামিয়া রহমানকে পদাবনতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেছিল হাইকোর্ট। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে ঢাবি কর্তৃপক্ষ সিভিল পিটিশন দায়ের করে। কিন্তু এরই মধ্যে ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর সামিয়া রহমান শিক্ষকতা থেকে স্বেচ্ছায় (আর্লি) অবসর নিয়েছেন। এ কারণে আপিল বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদন অকার্যকর ঘোষণা করেছেন। এর ফলে হাইকোর্টের রায় বহাল রয়েছে।
এর আগে, ২০২২ সালের ৪ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানের পদাবনতির সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাকে সব সুযোগ-সুবিধাসহ পদ ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোট বে এ রায় দেন। আদালতে সামিয়া রহমানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হাসান এম এস আজিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
এর আগে, ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানের পদাবনতির সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সামিয়া রহমানের গবেষণা জালিয়াতি সংক্রান্ত অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন এবং এ বিষয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনালের নথিসহ যাবতীয় কাগজপত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলেন হাইকোর্ট। তারও আগে ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট পদাবনতি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন ঢাবি শিক্ষক সামিয়া রহমান। ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি গবেষণায় জালিয়াতির শাস্তি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিয়া রহমানকে পদাবনতি দিয়ে সহযোগী অধ্যাপক থেকে এক ধাপ নিচে নামিয়ে সহকারী অধ্যাপক করে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান ও মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়।
এটি ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল বলে অভিযোগ ওঠে।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগে মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই চুরির কথা জানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। শুধু মিশেল ফুকোই নন, বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম’ গ্রন্থের পাতার পর পাতাও সামিয়া ও মারজান হুবহু নকল করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।
দীর্ঘদিন অনুসন্ধান শেষে ২০২১ সালে ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর তাদের একাডেমিক অপরাধের শাস্তির সুপারিশ করতে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ জমা দিলে সিন্ডিকেটের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে সামিয়া রহমানকে পদাবনতি দিয়ে সহযোগী অধ্যাপক থেকে এক ধাপ নিচে নামিয়ে সহকারী অধ্যাপক করে দেওয়া হয়।