ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার নদী-নালা, খাল-বিল ও মৎস্য খামারে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সাকার ফিশ। ফলে হুমকির মুখে দেশীয় প্রজাতির মাছ সহ চাষের মাছ। সাকার ফিশ যার ইংরেজি নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ। এটি মুলত স্বাদুপানির মাছ। সাকার মাউথ ক্যাটফিশ আশির দশকে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। অ্যাকুরিয়ামে চাষযোগ্য বিদেশি প্রজাতির এই ক্ষতিকর মাছটি এখন হর হামেশাই দেখা যাচ্ছে ময়মনসিংহের ভালুকা সহ ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিভিন্ন নদী, হাওর ও জলাশয়ে। এই মাছ জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ায় দেশীয়ভাবে উৎপন্ন অনেক প্রজাতির মাছ পড়েছে ঝুঁকিতে। বাংলাদেশে প্রাপ্ত সাকার ফিশ ১৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। এ মাছ ১০-১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে। মাছটি অল্প অক্সিজেন এমনকি পানি ছাড়াও ৬০ ঘণ্টা পর্যন্ত বাঁচতে পারে। অ্যাকুরিয়ামের শোভাবর্ধক এই মাছটি উন্মুক্ত পরিবেশ পেয়ে আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। দ্রুত বংশ বৃদ্ধি, দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি ও প্রচুর খাদ্য গ্রহণের কারণে জলাশয়ের মাছসহ অন্যান্য প্রাণী হুমকির মুখে পড়ছে। ইতোমধ্যে এই মাছের কারণে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে বেশ কয়েকটি দেশের মৎস্য খাত। দ্রুত বংশ বিস্তারকারী এই মাছটি কিভাবে জলাশয়গুলোতে ছড়িয়ে যাচ্ছে তার সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারছে না কেউই। জলাশয়ের এই মাছ চাষীদের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পূর্ব ভালুকার মৎস্য চাষী নূরে আলম রাতুল জানান, সাকার মাছ দ্বারা আমরা সাধারণ মৎস্য চাষীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমরা যারা রেনু পোনা ও বাংলা মাছ চাষ করি আমাদের রেনু পোনা ও বাংলা মাছ খেয়ে ফেলতেছে। সরকার থেকে এই মাছ নিধনের কোনো উদ্যোগ নিলে আমাদের অনেক উপকার হবে। কোনাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আনছারী আকরাম জানান, এলাকার জলাশয়ে ব্যাপকভাবে সাকার মাছ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই মাছ দেশীয় প্রজাতির মাছ খেয়ে ফেলে। যার জন্য আমাদের দেশীয় মাছ এখন পাওয়াই যায় না। এখনই কোনো ব্যবস্থা না নিলে অদূরে ভবিষ্যতে আমরা দেশীয় মাছ হয়তো আর পাবো না। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) তথ্যমতে, দেশের শতকরা ২২ ভাগ মাছ উৎপাদন হয় ময়মনসিংহ জেলায়। ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিভিন্ন জলাশয়ে অসংখ্যবার এই সাকার ফিশটি পাওয়া গেছে। এটি পাওয়া যাচ্ছে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, যশোর, সিলেট ও খুলনাসহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) জলাশয়গুলোতে। এমনকি ময়মনসিংহে অবস্থিত মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পুকুরেও দেখা গেছে এই সাকার ফিশ। অনেকেই নদী বা জলাশয়ে মাছ ধরতে গিয়ে দেখা পাচ্ছে ভয়ংকর এই সাকার ফিশের। তবে আগে সবসময় নদী থেকে দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছ পাওয়া গেলেও এবার ‘অপরিচিত’ সাকার ফিশ ধরা পড়ছে অনেকের জালে। এটির ব্যাপক বিস্তার ঘটলে দেশীয় প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন মৎস্য গবেষকরা। ভালুকা মৎস্য অফিসের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সাইদুর রহমান জানান, সাকার ফিশ মূলত স্বাদুপানির মাছ। এটি আমাদের দেশীয় মাছ না। এটি ছিলো মূলত অ্যাকুরিয়াম ফিশ। পরবর্তীতে কোনো ভাবে আমাদের জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এটি আমাদের দেশীয় মাছের জন্য ক্ষতিকর। আমরা মৎস্য চাষীদের এই মাছ সম্পর্কে সচেতন করতেছি। যাতে এই মাছ যেখানেই দেখা যাবে সেখানেই যেন ধ্বংস করে ফেলে এবং প্রতি বছর যাতে শুকনো মৌসুমে পুকুর শুকিয়ে সম্ভব হলে ছয় ইঞ্জি মাটি উঠিয়ে নতুন করে মাছ চাষ শুরু করে। যেন এর ডিম বা রেনু পুকুরে থাকতে না পারে। আর এই মাছের হ্যাচারি যেন কোনো ভাবেই কোথাও গড়ে না উঠে এই বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতেছি।