শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫৪ অপরাহ্ন

উলিপুরে দিশেহারা নদী পাড়ের মানুষ

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪

‘স্বামী মারা গেছে ১৬ বছর। তিস্তা নদী এখন পর্যন্ত হামার বাড়ি ভাঙ্গি নিয়া গেইছে তিনবার। এখন অনেক কষ্ট করি মাইনষের ২শতক জমি দুই হাজার টেহা দিয়া কন্টাকে নিয়া মাসে ১ হাজার করি ভাড়া দিয়া থাকি। সেই জমিও নদীত ভাঙ্গি যাচ্ছে। হামরা এখন কোথায় থাকি বলে কান্না করেছিলেন’ কুড়িগ্রামের উলিপুরের থেতরাই ইউনিয়নের বামনপাড়া তিস্তা পাড় এলাকার আজিরন(৪০)। এদিকে তিস্তার ভাঙ্গনে বসত ভিটে বাড়ি ঘর আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে তীরবর্তী মানুষের। বেশ কয়েক দিনের অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধির ফলে নদী ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত ৪ টি ইউনিয়নের তিস্তা পাড়ের মানুষেরা। এসব এলাকায় তিস্তার তিব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে অন্যের জায়গায় অনাহারে অর্ধহারে দিনাপাত করছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। এসব ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মধ্যে পশ্চিম বজরা, বাঁধের মাথা, উত্তর সাদুয়া দামার হাট, খামার দামার হাট নদীর পশ্চিম পাড়, সাতালস্ক, চর বজরা, সন্তোষ অভিরাম, কাজিরচক, টিটমা, গোড়াইপিয়ার, শেখেরটেক, পাকার মাথা, দড়ি কিশোর পুর, বামনপাড়া, কুমারপাড়া, ভেন্ডারপাড়া, ফকিরপাড়া, ঠুটাপাইকার, কর্পুরা, লাল মসজিদ ও অর্জুন এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক দিনের নতুন করে নদী ভাঙনে একর একর আবাদি জমি, বসতবাড়ি ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তিস্তা পাড়ের মানুষেরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন দিনের পর দিন। প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় বসত ভিটে ঘর বাড়ি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তারা উপায়ন্তর না পেয়ে অন্যের জমিতে ঘর উঠিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এছাড়া ভাঙনের মুখে রয়েছে মসজিদ, বাড়িঘর ও আবাদি জমি। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষজন বসতবাড়ি রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরোধের ব্যবস্থারও দাবি জানান। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষেরা জানান, যে ভাবে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে তারাতারি ভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্যাবস্থা না নিলে এসব এলাকার ২০ থেকে ২৫টি গ্রামের শতশত পরিবার অসহায় হয়ে যাবে। এছাড়াও গোড়াই পিয়ার দাখিল মাদরাসা, গোড়াই পিয়ার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোকডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোকডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ চর হোকডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি ওয়ার্ড ক্লিনিক, ৪টি মসজিদ, ২টি মন্দিরসহ উক্ত গ্রাম গুলোর কয়েক হাজার পরিবার। তারা আরো জানান, আমরা কোন সাহায্য চাইনা নদী সংস্কার চাই। ভাঙ্গন এলাকা গুলোতে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গনরোধ করার জোর দাবী করেন। বসত ভিটে বাড়ি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে অন্যের বাড়িতে থাকা আয়শা(৬০), আব্দুল করিম(৪৭), আবু তাহের(৬২), মনোয়ারা(৫৫), আলতাব(৬৩), ছামাদ(৪৮) ও হাকিম মিয়া(৪৯) সহ আরও অনেকে বলেন, তিস্তা নদী আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। আমাদের চলার মত কিছুই থাকলো না। আমরা এখন অন্যের বাড়িতে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার তিস্তার পাড়ে ভাঙ্গনের কবলে পড়া মজিবর(৪৪), সুজন(৪২), মেলন(৩৮), মাইদুল(৫৪), মর্জিনা(৫১), মুকুল(৩৬), শহিদুল(৬১), আব্দুস ছামাদ(৭০), আব্দুল হামিদ(৬৫), ও আফরুজা বেগম(৪৫) সহ আরও অনেকে জানান, তিস্তার ভাঙ্গনে আমরা দিশেহারা হয়ে গেছি। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। অনাহারে অর্ধাহারে দিনাপাত করছি। আমরা সাহায্য চাইনা আমরা চাই স্থায়ী সমাধান। এছাড়া ভাঙ্গন রোধের জন্য জিও ব্যাগ ফেলার জোর দাবী জানান। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিবুল হাসান বলেন, তিস্তা নদীর ভাঙ্গন এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রথম ধাপে দলদলিয়া ইউনিয়নের কিছু এলাকায় ভাঙ্গন রোধে কাজ শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলোতে ভাঙ্গন রোধের কাজ করা হবে বলে জানান তিনি। উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউর রহমান জানান, নদী ভাঙ্গনের শিকার ও পানিবন্দি পরিবারের তথ্য এখনও পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে দূর্যোগ কবলিত এসব মানুষের মাঝে চাল ও শুকনো খাবার বিতরন করা হচ্ছে। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com