বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে এক ঘরোয়া আড্ডায় হাজির হয়েছিলেন ঢালিউড অভিনেতা বাপ্পারাজ। আড্ডা শুরুর আগে তিনি কথা বলেন জাগো নিউজের সঙ্গে। জাগো নিউজের সৌজন্যে দৈনিক খবরপত্রের পাঠকদের জন্য পত্রস্থ করা হলো। দেশের চলচ্চিত্রের সংকট, শিল্পী সমিতি, এখনকার সিনেমা ও নির্মাতা এমনকি কিংবদন্তি অভিনেতা (বাবা) রাজ্জাককে নিয়েও কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মইনুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন; মইনুল ইসলাম।
প্রশ্ন: চলচ্চিত্রে কী কী সংকট দেখতে পাচ্ছেন? এখানে কী কী সংস্কার করতে হবে বলে মনে করেন?
বাপ্পারাজ: আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমাদের সিনেমা বানানোর লোক দরকার। সিনেমা ভালোবাসে, সিনেমা বানাতে চায় এ রকম লোক। এ রকম লোকের খুব অভাব। এখানে ধান্দাবাজ লোক বেশি হয়ে গেছে। এখনও কিছু লোক আছে, তারা কোণঠাসা হয়ে আছে। দলাদলির জন্য অনেকেই অনেক জায়গায় যেতে পারছে না, দাঁড়াতে পারছে না, কথা বলতে পারছে না।
প্রশ্ন: তাদের কী সমস্যায় পড়তে হয়েছে?
বাপ্পারাজ: যখন জানবেন কোথাও গেলে আপনাকে অসম্মান করা হবে, আপনি আর ওই জায়গায় যাবেন না। এজন্যই আমাদের ইন্ডাস্ট্রি থেকে ভালো ভালো লোকজন সরে গেছে, বাজে লোক বেশি হয়ে গেছে। তারা সিনেমা বানাতে চায় না, পলিটিক্স করে, দলাদলি করে, সরকারের চামচামি করে।
প্রশ্ন: এরা কারা? আপনি কি তাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন কখনো?
বাপ্পারাজ: মাঝখানে আমাদের শিল্পী সমিতি এরকম হয়ে গিয়েছিল। আমাদের জোর করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেত। বলতো, ওইখানে যেতে হবে, সেখানে যেতে হবে। যেমন, কোনো মন্ত্রী বা পুলিশ অফিসারকে শিল্পী সমিতিতে নিয়ে এসে ফুল দিয়ে তার সঙ্গে ছবি তোলা হতো। সেই ছবি আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করতে বলা হতো! আমরা শিল্পী, আমাদের সঙ্গে মানুষ ছবি তুলবে। আমরা তো কারও পেছনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলব না। আমাদের এখানে এই ট্রেন্ড কিন্তু মাঝখানে চালু হয়ে গিয়েছিল। এটা তোষামোদি। কাজের থেকে তোষামোদিই এখানে বেশি করা হয়।
প্রশ্ন: এফডিসিকেন্দ্রিক যে রাজনীতি রয়েছে, এ নিয়ে আপনার মত কী?
বাপ্পারাজ: কাজের লোক কমে গেছে, এজন্যই এফডিসিতে রাজনীতি চলতো! কাজ না থাকলে যা হয় আরকি। চামচামি করে, তেল মেরে যদি কিছু ফায়দা হয় তাহলে হোয়াই নট!
প্রশ্ন: রাজনীতির মূল কারণ সমিতিগুলো, আপনার কী মত? সমিতিগুলো কি জরুরি?
বাপ্পারাজ: সমিতি থাকতেই পারে। আমি বরাবর বলে এসেছি, সমিতি হলো আমার ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধা দেখার জন্য। আমার কোনো প্রবলেম হলে সমিতি আমাকে হেল্প করবে। আমাদের এখানে হয়েছে কি, ইন্ডাস্ট্রিটাই সমিতিকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। সমিতির নেতা হওয়ার জন্য যুদ্ধ করে, কেস করে, এমন কিছু নাই যা তারা করেনি। কারণ প্রফেশনালি তারা এখন রিচ না। সমিতির মেম্বার হতে পারলেই সরকারি বিভিন্ন দাওয়াতে যেতে পারবে। একটা কার্ড পাবে, একটু ইম্পর্টেন্স পাবে! তিনি কে? তিনি শিল্পী সমিতির সভাপতি, তিনি শিল্পী সমিতির সম্পাদক! আমাদের এসবের দরকার ছিল না। একসময় আমরা নিজেদের পরিচয়ে পরিচিত ছিলাম। আমাদের ব্র্যান্ডের শার্ট-প্যান্ট দরকার ছিল না, আমরা নিজেরাই ছিলাম ব্র্যান্ড। এখন একজন নায়ক বা নায়িকার কাজ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয় না। কয়টা প্রেম করেছেন, কয়টা বাচ্চা হলো, রাতে কোথায় ছিলেন এগুলো নিউজ হয়।প্রশ্ন: এর দায় কি আপনাদের নেই?
বাপ্পারাজ: আমরা হলাম শোবিজ! আমি বাপ্পারাজ ভোর ৫টায় শুটিংয়ে যাই, রাত ১২টায় শুটিং শেষ করে বাসায় চলে আসি, এটা খবর না আপনার জন্য, মানে সাংবাদিকদের জন্য! আমি সকাল ১০টায়ও শুটিং স্পটে পৌঁছাইনি, ১২টা বেজে গেলেও পৌঁছাইনি! প্রোডাকশনের একটা ছেলে দেখছে, আমার গাড়ি পুবাইলের দিকে গেছে, আরেকজন দেখেছে, গাড়িতে একজন নারীও ছিল। এটাই আপনার কাছে খবর! বাপ্পা আজ শুটিংয়ে যায়নি, একজন নারীকে নিয়ে পুবাইলে গেছে! এখন হয়েছে কি, কাজ নেই তো কারও! এখনকার যে নায়িকাগুলো দেখি, ফিল্ম নেই, ছবি নেই, নিউজ হচ্ছে– তিনি এটা করেছেন, তিনি ওটা করেছেন! কিছু সাংবাদিক এসব নিয়েই কাজ করেন। এখন সংবাদ বেসিক্যালি ফেসবুক রিলেটেড হয়ে গেছে। ফেসবুকেই সব পাওয়া যায়, ফেসবুকেই সব উপস্থাপন করা হয়। আগে সাংবাদিকরা আসতেন, বসে ইন্টারভিউ নিতেন। আর্টিস্টের সঙ্গে বসে তার ভেতরের জিনিসগুলো বের করে নিতেন। এখন এসব হয় না, এখন সবকিছু যেন সস্তা হয়ে গেছে।
প্রশ্ন: নায়ক রাজ্জাককে নিয়ে জানতে চাই। তাকে নিয়ে পারিবারিকভাবে বড় কিছু করার কথা ভাবছেন?
বাপ্পারাজ: আমার থিউরি এ রকম– নায়করাজ রাজ্জাক আপনাদের। সেটা রাষ্ট্রকে অনুভব করতে হবে। রাষ্ট্রকে অনুধাবন করতে হবে যে বাংলা চলচ্চিত্রে তার অবদান কী, তারা কয়েকজন মিলে বাংলা চলচ্চিত্র কোন জায়গায় নিয়ে গেছেন। এটা ব্যক্তি উদ্যোগের বিষয় নয়। ব্যক্তি বা পরিবার তাকে নিয়ে কিছু করতে চাইলে হবে না। আমরা করতেও চাই না।