উত্তরের জেলা নওগাঁ। এক সময় শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া প্রধান সড়কসহ অন্যান্য অভন্তরীন রাস্তাগুলো ছিলো সরু। তখন অভ্যন্তরীন যানবাহনের সংখ্যাও ছিলো অনেক কম ফলে সেই সময়ে যানজটের আধিক্য ছিলো অনেক কম। কিন্তু বর্তমানে প্রধান সড়কসহ অন্যান্য অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো প্রশস্ত হলেও অপরিকল্পিত ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে অভ্যন্তরীণ বাহন বিশেষ করে ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও টমটমের মতো বাহনের সংখ্যা। যার কারণে শুক্রবার ব্যতিত প্রায় প্রতিদিনই শহরে চলাচলকারীদের তীব্র যানজটের শিকার হতে হয়। বিশেষ করে শহরের প্রবেশদ্বার ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে লিটন ব্রিজ পার হয়ে বাটার মোড়, মুক্তির মোড়সহ অন্যান্য প্রধান প্রধান স্থানগুলোতে প্রায়ই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে। নগরবিদরা যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে অপরিল্পিত ভাবে চলাচলকারী অবৈধ ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও টমটমগুলোর আধিক্যকে দায়ী করছেন। বছরের পর বছর পার হলেও প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে শহরকে যানজট মুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও অজানা কারণে তা বাস্তবায়ন করার দৃশ্যমান কর্মকান্ড শহরবাসীর চোখে পড়েনি। অবশেষে নওগাঁ শহরের যানজট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিক্সা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফেরার পাশাপাশি যানজট কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। গত বৃহস্পতিবার (২১নভেম্বর) থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে প্রশাসন। শহরে প্রবেশের প্রধান আটটি মোড়ে অবৈধ যানবাহনে চলছে পুলিশি তল্লাসী। নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খাঁন জানান শহরের সরিষা হাটির মোড় হয়ে বাটার মোড় থেকে লিটন ব্রিজ এলাকায় যেতে যানজটের কারণে আধা ঘন্টা সময় লেগে যায়। অথচ এই সামান্য অংশটুকু যেতে সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট সময় লাগার কথা। বহু বছর পার হলেও যানজট ও শহরের শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রশাসনের এমন উদ্যোগ নি: সন্দেহে হাফ ছেড়ে বেঁচে থাকার মতো। যানজটে নষ্ট হওয়া কর্মঘন্টা যত বেঁচে যাবে দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড আরো বেগবান হবে। তাই এমন কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে তিনি সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন জানান, শহরের প্রবেশদ্বার তাজের মোড়, কালীতলা, পাটালীর মোড়, ইদুর বটতলী, বিজিবি ব্রিজ, শিবপুর ব্রিজ, বরুনকান্দি ও আব্দুল জলিল শিশু পার্ক মোড়ে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২জন পুলিশ সদস্য, ২জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন। প্রতিটি মোড়ে অনিবন্ধিত যানবাহনগুলো চেক করা হচ্ছে। বৈধ কাগজপত্রাদি না থাকলে সেই সব যানবাহনগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও টমটমগুলোকে শহরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এতে করে শহরের অভ্যন্তরীণ যানজট অনেকাংশই কমেছে। নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি. এম. এ মমিন জানান, শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪হাজার। কিন্তু প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিক্সা ও ব্যাটারিচালিত বিভিন্ন যানবাহন শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টির মাধ্যমে জনজীবনে চরম ভোগান্তীর তৈরি হয়। এই দুর্ভোগ কমাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এতে করে শহরবাসীসহ অন্যান্য স্থান থেকে আসা পথচারীরা শহরের ভিতরে তেমন একটা যানজটের শিকার হবেন না। পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, নওগাঁর দীর্ঘদিনের প্রধান সমস্যা হচ্ছে যানজট। যানজট বর্তমানে শহরবাসীসহ চলাচলকারীদের গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। পরিকল্পিত ভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে এবং পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতাদের সমন্বয়ে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সবার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই শহরবাসীসহ চলাচলকারীরা সুফল পেতেও শুরু করেছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, অভিযানের ধারাবাহিকতা সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরের শৃঙ্খলা ফেরার সঙ্গে যানজট মুক্ত হবে তিলোত্তমা শহর নওগাঁ। এমন কর্মকান্ড সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে পরিচালানা করতে হলে প্রশাসনের পাশাপাশি শহরবাসীসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষদের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে। সর্বপ্রথমে সবাইকে নিয়ম ও আইনকে শ্রদ্ধার সঙ্গে মানতে হবে। বর্তমানে সড়কের নিয়ম আর আইন ভাঙ্গাকেই আমরা ক্রেটিড মনে করি। এমন রেওয়াজ থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবেই আমরা নওগাঁকে একটি যানজট ও দুষনমুক্ত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। নওগাঁকে একটি শান্তিপূর্ণ, সুন্দর ও ছিমছাম জেলা হিসেবে বিনির্মাণ করতে প্রশাসনের এমন কর্মকান্ড আগামীতেও অব্যাহত রাখা হবে বলে তিনি জানান।