বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:০৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভূমিকম্পে লন্ডভন্ড তিব্বতে নিহত বেড়ে প্রায় ১০০ ইসলামী ব্যাংকের ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম উদ্বোধন খেলাপি বিনিয়োগ আদায়ে ইউনিয়ন ব্যাংকের অবস্থান কর্মসূচী শিল্প খাত; গ্যাসের দাম দেড়গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব, সিদ্ধান্ত ফেব্রুয়ারিতে বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার কাজল ও লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মামুন নিজ বাংলোতে টর্চারসেল, ওসি বরখাস্ত কেন ট্রুডোর উত্তরসূরি হিসেবে যাদের নাম আসছে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান ফারুকের হিথ্রো বিমানবন্দরে ভিআইপি প্রটোকলে বের হবেন খালেদা জিয়া টিউলিপের চীন সফর বাতিল, পিছু ছাড়ছে না ব্রিটিশ মিডিয়া

আইসিডিডিআর,বি: শীতকালীন ডায়রিয়া রোগী নিয়ে হিমশিম অবস্থা, ৮০ শতাংশই শিশু

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২৫

শীত তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ। রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে ছয়শ থেকে সাতশোর মতো শিশু। এমন অবস্থা যে হাসপাতালের সামনে তাঁবু গেড়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ডায়রিয়া আক্রান্তদের।
মহাখালীর হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান গেটের পরই বড় করে টানানো হয়েছে তাঁবু। যদিও এখনো সেখানে বেড করার প্রয়োজন পড়েনি। হাসপাতালের প্রধান ভবনের শুরুতেই নার্সরা এন্ট্রি নিচ্ছেন এবং চিকিৎসকরা রোগীদের দেখভাল করছেন। এই দুই বুথে ভিড় লেগেই আছে সারাদিন। এর ভেতরেই ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু ও বয়স্করা। আর আউটপেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট (ওপিডি) এ শিশুদের খাওয়ানো হচ্ছে স্যালাইন।
ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ইমার্জেন্সি রুমের বেডে তিন বছরের শিশু মুসাকে নিয়ে শুয়ে আছেন তার বাবা মো. বিপ্লব হোসেন। তারা এসেছেন কেরানিগঞ্জ থেকে। দুদিন ধরে ছেলের মাঝে মাঝে পাতলা পায়খানা হচ্ছিল। শুক্রবার অনেক বেশি বেড়ে যায়, সঙ্গে জ্বরও আসে। এজন্য রাতেই তাকে নিয়ে আইসিডিডিআর, বিতে ছুটে আসেন তিনি।
পাশের আরেকটি বেডে ছেলে মো. ইউসুফ আলীকে কোলে নিয়ে বসে আছেন মা শারমিন আক্তার। তারা এসেছেন জামালপুর থেকে। ছেলে ইউসুফ আলীর বয়স ১১ মাস। প্রায় ছয় দিন ধরে পাতলা পায়খানা ইউসুফের। জামালপুরে চিকিৎসক দেখানো হলেও লাভ হয়নি। তাই ঢাকায় নিয়ে এসেছেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, তাকে স্যালাইন খাওয়াতে।
হাসপাতালে আগত শিশুদের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে নিয়ে গুরুতর না হলে কিছু সময় চিকিৎসা ও স্যালাইন খাইয়ে ও পরামর্শ মোতাবেক ছুটি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এ বছর ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি
আইসিডিডিআর,বির তথ্য বলছে, শনিবার (৪ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৬৭ জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। অন্যদিকে, শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ৬৪৮ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে আসেন। ২০২৫ সালের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি চিকিৎসা নেন ৮৫০ জন।
আইসিডিডিআর,বির তথ্য বলছে, শনিবার (৪ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৬৭ জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। অন্যদিকে, শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ৬৪৮ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নেন। ২০২৫ সালের প্রথম দিন, ১ জানুয়ারি চিকিৎসা নেন ৮৫০ জন। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ৮০ শতাংশই শিশু। এর আগে ২০২৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ৮৯১ জন, ২৯ ডিসেম্বর ৮২৬ জন, ৩০ ডিসেম্বর ৯১৩ জন, ৩১ ডিসেম্বর ৮৮৪ জন। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই মাসে গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ২৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে গড়ে ৮৫০ থেকে ৯০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ৮০ শতাংশই শিশু। আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ কমিউনিকেশন ম্যানেজার এ কে এম তারিফুল ইসলাম খান বলেন, প্রতিবছর শীত এলেই ডায়রিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। বিশেষ করে নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই চার মাস রোটাভাইরাসের প্রভাব বেশি থাকে।
তিনি আরও বলেন, আইসিডিডিআর,বিতে ভর্তি ৫০তম রোগীর টয়লেট পরীক্ষা করে দেখা হয়- ডায়রিয়ার কারণ ভাইরাস নাকি ব্যাকটেরিয়াজনিত। পরীক্ষায় দেখা গেছে, বর্তমান সময়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ রোগীর ডায়রিয়া হচ্ছে রোটাভাইরাসের কারণে। বাকি ৫০ শতাংশ অন্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার কারণে।
ভাইরাল ইনফেকশনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বেশি
আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানী ডা. লুবাবা শাহরিন জাগো নিউজকে বলেন, গরম ও শীতকালের ডায়রিয়া ভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। এই শীতকালে যে ডায়রিয়া হচ্ছে তার বড় কারণ ভাইরাল ইনফেকশন। আমরা এখানে আগত রোগীদের স্টুল টেস্ট করে দেখেছি বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া হচ্ছে রোটাভাইরাসের কারণে। প্রতিবছর শীতকালে ডায়রিয়া রোগী আসে। তবে এ বছর আমরা এর পরিমাণ একটি বেশি পাচ্ছি। গত দুই সপ্তাহে এখানে ৮০০ থেকে ৯০০ এর মতো রোগীকে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। আর আসা রোগীদের মাঝে ৮০ শতাংশই ছিল পাঁচ বছরের নিচের বয়সী শিশু। এতে আমরা ধারণা করছি এই ভাইরাল ইনফেকশনে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। গরম ও শীতকালের ডায়রিয়া ভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। শীতকালে যে ডায়রিয়া হচ্ছে তার বড় কারণ ভাইরাল ইনফেকশন। সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া হচ্ছে রোটাভাইরাসের কারণে। রোগীদের মাঝে ৮০ ভাগই পাঁচ বছরের নিচের বয়সী শিশু।-আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানী ডা. লুবাবা শাহরিন।
ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে কখন হাসপাতালে আনতে হবে?
এ বিষয়ে শারমিন বলেন, অতিরিক্ত বমি করলে, কিছু খাওয়াতে না পারলে, আচরণগত পরিবর্তন দেখা দিলে, অনেক জ্বর থাকলে, পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বমিরও একটা বিষয় আছে, ঘণ্টায় যদি তিনবারের বেশি বমি করে, তার মানে সে কিছুই পেটে রাখতে পারছে না। স্যালাইন দিচ্ছেন আর সে বের করে দিচ্ছে, তাহলে হাসপাতালে নিতে হবে। ভাইরাল ডায়রিয়ায় জ্বর থাকে। কিন্তু যদি অতিরিক্ত জ্বর থাকে, তাহলেও হাসপাতালে আনতে হবে। শিশুর মানসিক আচরণে পরিবর্তন হলে। শিশু যে রকম হাসিখুশি থাকে, খেলাধুলা করে, যাদের ডায়রিয়া হয় তাদেরও কিন্তু অ্যাক্টিভিটি স্বাভাবিকই থাকে। যদি দেখা যায় বাচ্চা একেবারে নেতিয়ে পড়েছে, ঘাড় সোজা করে রাখতে পারছে না, শিশুর মুখে খাবার দেওয়া যাচ্ছে না অথবা ভীষণ খিটখিটে হয়ে গেছে, অর্থাৎ কোনোভাবেই তাকে শান্ত করা যাচ্ছে না। এই পরিবর্তনগুলো অ্যালার্মিং সাইন। তাহলে শিশুকে হাসপাতালে আনতে হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com