আদরের ছেলে আকাশে হেলিকপ্টার উড়তে দেখে ছোটবেলায় বাবার কাছে আবদার করে হেলিকপ্টারে চড়বে। বাবা হেসে মজা করে বলে, ঠিক আছে বড় হওয়ার পর তোমাকে হেলিকপ্টারেই বিয়ে দেবো। মজা মজাই থেকে যায়, কিন্তু ছেলের মনে আশার সঞ্চার হয়। সবাইকে বলতে থাকে, বাবা তাকে কথা দিয়েছে, বড় হলে ঠিকই হেলিকপ্টারে চড়াবে। ছেলের বদ্ধমূল ধারণাকে এবার বাস্তবে পরিণত করলেন বাবা।
ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুর ইউনিয়নের সোনাপুর পাবনাপাড়া গ্রামে। স্বপ্ন পূরণ হওয়া ওই ছেলের নাম হারুন অর রশীদ। তিনি পাবনাপাড়া গ্রামের মাওলানা নূরুল ইসলামের ছেলে ও রূপপুর পারমানবিকের তড়িৎ প্রকৌশলী। অপরদিকে তার নববধূও একই প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা প্রকৌশলী। তার নাম উর্মী আক্তার এনি। তিনি রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ি উপজেলার রাজাবাড়ি হাট গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট নূর-উব-নবীর মেয়ে। বরের বাবা নূরুল ইসলাম জানান, তিনি পাবনার এক মাদ্রাসা শিক্ষক। তার দুই ছেলে-দুই মেয়ের মধ্যে বাদশা ছোট। ছেলে রাজা আর বাদশার মতো দুই মেয়েও খুব আদরের। আরও বলেন, ছোটবেলায় একদিন আকাশে বিমান উড়তে দেখে তার এই ছেলে বাদশার ইচ্ছে হয়েছিল হেলিকপ্টারে চড়ার। সময়ের পরিক্রমায় তার স্বপ্ন পূরণ করতে ছেলের সম্মতিতে তাকে ভর্তি করানো হয় বাগাতিপাড়া উপজেলার বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভারসিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বাউয়েট) এ। সেখানে কৃতিত্বের সঙ্গে পড়া শেষ করে তার ছেলে এখন রূপপুর পারমানবিকের তড়িৎ প্রকৌশলী। বড় হয়ে ছেলে তার স্বপ্ন পূরণ করেছে। তাই ছেলের স্বপ্ন পূরণে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে হেলিকপ্টারে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীও খুব উৎফুল্ল।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, শনিবার দুপুর ১২টায় তার দুই জামাতা ও এক নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করতে রওনা হয় ছেলে হারুন অর রশীদ বাদশা। আর বরযাত্রীদের কনের বাড়িতে মাইক্রোবাসযোগে পাঠানো হয়। অপরদিকে রবিবার (১৫ নভেম্বর) তার বাড়িতে বউভাতের আয়োজন রয়েছে। প্রকৌশলী হারুন অর রশীদ বাদশা বলেন, আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করতে যাওয়ার। সেই স্বপ্ন আজ পূরণ হলো। এজন্য তিনি তার বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। হেলিকপ্টারের বর যাত্রী আফছানা খাতুন জানান, হেলিকপ্টারে চড়ে মামার সঙ্গে বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আমার খুব ভালো লেগেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহাবুর ইসলাম মিঠু বলেন, হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ের ঘটনা তার এলাকায় এটিই প্রথম। তার জানা মতে এর আগে বাগাতিপাড়া উপজেলায় এমন যানে গিয়ে বিয়ের ঘটনা ঘটেনি। তিনি নিজেও বরযাত্রী হয়েছিলেন জানিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।