রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৩ অপরাহ্ন

কবুতর পালন করে সফল নাটোরের মন্নাফ

নাটোর প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২০

কবুতরকে বলা হয় শান্তির প্রতীক। আগের যুগে রাজা-বাদশারা কবুতরের পায়ে বার্তা বেঁধে প্রেরণ করতেন বলে জানা যায়। বলা যায়, তখন বার্তাবাহক হিসেবে কবুতর ব্যবহার করা হতো। অন্যদিকে, রোগীর পথ্য হিসেবেও কবুতরের মাংসের জুড়ি নেই। শখের বসে অনেক তরুণ কবুতর পালন করেন। কবুতর বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন। সৌখিন কবুতরপ্রেমী অনেকেই সফলতা পেয়েছেন। তেমনই একজন নাটোরের সিংড়া উপজেলার চকসিংড়া মহল্লার আব্দুল মন্নাফ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে ইলেকট্রনিক্স ব্যবসার পাশাপাশি অল্প সময়ে কবুতর পালনে সফলতা পেয়েছেন। বর্তমানে দুটি কবুতর ফার্মের মালিক তিনি। তার কাছে আছে ইন্ডিয়ান ফান্টেল, লাহোর কালো, হলুদ, তুরিবাজ লাল,কালো, এলমন্ড, ইন্ডিয়ান নোটন, দেশি লোটন, বাশিরাজ কোকা, মাক্সি রেচার হুমা, সবজে গিরিবাজ, লাল,সাদা, হলুদ বোম্বাই, আমেরিকান সো কিং, কালদম, মুক্ষি লাল, হলুদ, কালো, সিলভার, কফি, ঝরনা শাটিন, ল্যাভেন্ডার সুয়া চন্দন ইত্যাদি প্রজাতির কবুতর। এছাড়া লাভবার্ডর, কোকাটেল, জাভা, বাজরিগার পাখি রয়েছে। প্রাথমিকভাবে দুই জোড়া কবুতর নিয়ে শুরু করে এখন তার কবুতরের সংখ্যা পঞ্চাশ জোড়া ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় বিশ বছর আগে শখের বশে কবুতর পালন শুরু করলেও এখন আর তা’ শখে সীমাবদ্ধ নেই, পরিণত হয়েছে পেশায়। খরচ বাদে বর্তমানে তার মাসিক আয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। আব্দুল মন্নাফ তার ছোটবেলায় প্রতিবেশি আতীয়দের বাসায় রং-বেরংয়ের কবুতর দেখতেন। তখন থেকেই কবুতর পালনের ইচ্ছে ছিল তার মনে। কিন্তু তার মা কবুতর পালনে বাধা দিতেন। ঈদের সালামির টাকা জমিয়ে একবার তার চাচাতো ভাইদের নিয়ে হাটে যান। সে সময় ২০০ টাকা দিয়ে দুই জোড়া কবুতর কিনে আনেন তিনি। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্রমে তার কবুতর বেড়েছে, বেড়েছে রকমও। এখন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সৌখিন কবুতরপ্রেমীরা কবুতর কিনতে ও প্রশিক্ষণ নিতে আসে মন্নাফের কাছে। তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যতটা সম্ভব কবুতরের দাম কম রাখেন মন্নাফ। অনলাইনেও কবুতর বিক্রি করেন তিনি। ফেঞ্চি কবুতর পালন করার কারণ হিসেবে তিনি জানান, ‘ফেঞ্চি কবুতরের চাহিদা বেশি, এরা খুব ভালো মানের ডিম দেয় ও বাচ্চা ফোটায়। ২ মাসে এদের বাচ্চা বিক্রি করার উপযোগী হয়। অবশ্য অনেকে এক মাসের বাচ্চাও বিক্রি করে। মন্নাফ এর কবুতরের খামারের নাম ‘’মন্নাফ-শারমিন পিজিওন এন্ড বার্ড গার্ডেন’’। তিনি বাগানের পাশে একটি বড় ঘরে খাঁচায় কবুতর পালন করেন। কিছু কবুতর ছেড়েও পালন করেন। তিনি বলেন, ‘দেশে অসংখ্য ছাদ ফাঁকা পড়ে আছে। এসব ছাদে ঘর তুলে যে কেউ অনায়াসে কবুতর পালন করতে পারেন। তার মতে, কবুতর বিনোদনের অন্যতম উৎস। এরা খুব শান্ত ও মায়াবী পাখি। মানুষের সহচার্য খুব পছন্দ করে। যুবসমাজ অবসরে বাজে নেশায় না জড়িয়ে কবুতর পালন করতে পারে। আব্দুল মন্নাফ জানান, বাণিজ্যিকভাবে এই কবুতর পালন করা সম্ভব। বেকার যুবকরা কবুতর পালন করে স্বর্নিভর হতে পারে। তবে এজন্য প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন রয়েছে। ভালো কোয়ালিটির লাহোর বা ফান্টেল কবুতর বেশ লাভজনক। সব সময় এসব প্রজাতির চাহিদা থাকে। পার্শ্ববর্তী দেশ গুলোতে আমাদের দেশের কবুতরের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই সরকারি সহযোগিতা পেলে কবুতর রফতানি করে বছরে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। কবুতরের রোগ হলে তিনি নিজেই চিকিৎসা করেন। মন্নাফের স্ত্রী শারমিন জাহান ও বাবা-মা তাকে কবুতর পালনের কাজে সহায়তা করেন। তার মতে, ফেঞ্চি কবুতর পালনে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা এস এম খুরসিদ আলম জানান, আব্দুল মন্নাফ একজন সফল খামারি। শখের বসে শুরু করলেও এখন তিনি বেশ সফল। এছাড়াও এ উপজেলায় শতাধিক কবুতর খামারি রয়েছে। তাদেরকে তারা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। খামারিরা চাইলে তারা সকল রকম পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে সর্বদা প্রস্তুত।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com