মীরসরাইয়ে মাঠে মাঠে এখন হাওয়ায় দুলছে আমনের সোনালি শীষ। সবুজের মধ্যে আমনের সোনালি ধানের রঙ্গিণ হয়ে উঠছে কৃষকের স্বপ্ন। মাঠজুড়ে ক্রমেই পেকে সোনালি বর্ণ ধারণ করছে আমন ধান। পোকামাকড় ও রোগ-বালাইয়ের আক্রমণের পরেও সোনালি ধানে ভরে গেছে মাঠ। দিগন্তজোড়া সোনালি ফসলের মাঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বিকশিত করে তুলেছে। উপজেলার হাজারও কৃষক পরিবারের চোখে মুখে এখন স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা কোনো বিপর্যয় না ঘটলে কৃষকদের বাড়ির আঙ্গিনা ভরে উঠবে সোনালি ধানের হাসিতে। সরেজমিনে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে আমন ফসলের ক্ষেত। আগাম জাতের আমনের ধান ইতিমধ্যে শীষ বের হয়েছে। ক্ষেতেই উঁকি মারছে ধানের শীষগুলো। যা দেখে ভরে উঠেছে কৃষকের বুক। তাদের মুখে ফুটেছে সোনালি হাসি। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ঘরে তুলতে পারবেন নতুন ধান। এ অবস্থায় বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের ধান। ইতোমধ্যে উঁচু এলাকাগুলোতে আমন ধান কেটে ঘরে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। তবে নিচু এলাকার ধানে পুরোপুরি হলদে রং আসেনি এখনো। আর ক’দিন পরেই শুরু হবে পুরোদমে ধান কাটা, মাড়াই আর ঘরে তোলার মহোৎসব। এ সময় কথা হয় উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের কৃষক জসিম উদ্দিন জানান, অনুকূল আবহাওয়া, রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ না থাকায় অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক বেশি ধানের ফলন হবে বলে আশা করছেন তিনি। দুর্গাপুর ইউনিয়নের কৃষক সজল দেবনাথ বলেন, উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বাজারে ধানের দাম কম। অথচ কৃষি উপকরণের দাম বাড়ছেই। এতে উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। ধান চাষে অব্যাহত লোকসান হওয়ায় কৃষক ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তাই আমন ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় ধান চাষ থেকে কৃষক মুখ ফিরিয়ে নেবেন বলে জানান তিনি। মীরসরাই সদর ইউনিয়নের কৃষক হারেছ মিয়া জানান, গত কিছুদিন আগে টানাবৃষ্টিতে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি আর বাতাসে অনেক পাকা আধা পাকা ধান মাটিতে পড়ে পচে গেছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৫ শত হেক্টর জমি। যা গেল বছর ছিল ২০ হাজার ৪ শত। যার মধ্যে এবারে অর্জিত হয়েছে ২১হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে। এদিকে, আমন ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও ধানের বাজার ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষক। এ অবস্থায় ধানের ন্যায্যমূল্য পেতে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে ধান কেনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী কাজী নুর আলম জানান, চলতি বছরের আবহাওয়া ভালো, কৃষি বিভাগের সার্বিক নজরদারি ও পরামর্শের কারণে এবারে রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম ছিলো। যার ফলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন।