এক.
ফারসি শব্দ কাগ অর্থ কলম এবং মারী অর্থ কেন্দ্র, যা থেকে হজরত শাহজামান রহ:-এর দেয়া নাম কাগমারী। এখানে গড়ে তুলেছিলেন জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র। ছোট-বড় সব শ্রেণীর হিন্দু মুসলমান নারী-পুরুষকে শিক্ষাদান করার উদ্দেশ্যে এ ব্যবস্থা করলেন পীর সাহেব। আরবি, ফারসি, বাংলা ভাষার অক্ষরজ্ঞান ছাড়াও সাহিত্য, ব্যাকরণ, ধর্ম ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান শিক্ষাদান করার ব্যবস্থা করলেন তিনি ভাবশিষ্য বা পালকপুত্র এনায়েতুল্লাহকে নিয়ে টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত গ্রাম কাগমারী পরগনায় ১৬৫৯ সালে। জিন্দাপীর বাদশাহ আলমগীরের দানকৃত কাগমারী পরগনার ওয়াক্ফ সম্পত্তি ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে আধ্যাত্মিক গুরু হজরত শাহজামান কাশ্মিরির প্রিয় পুত্র শাহ এনায়েতুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুর ফলে সব সম্পত্তি বেদখল হয়ে পড়ে ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে। ইসলাম প্রচারের মিশনারি আন্দোলন বন্ধ হয়ে যায়। ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয় কাগমারী পরগনার সব সম্পত্তি। রাজবল্লভ উমি চাঁদের আরেক পূর্বসূরি ব্রজমোহন; তার ভাজিতা এনায়েতুল্লাহকে হত্যা করে সম্পত্তিগুলো দখল করে নেয়। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৩১ সালে এসেছিলেন টাঙ্গাইলের কাগমারী ও সন্তোষ এলাকায় নৌকায় করে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে। তিনি ১৩ বছর ছিলেন আসামে। ছিলেন নির্বাচিত সংসদ সদস্য। আসামে সেখানকার বাঙালি মুসলমানদের জন্য সংগ্রাম করেছেন। কাগমারী ও সন্তোষ এলাকায় ত্রাণ দিতে এসে মওলানা ভাসানী সেখানকার মুসলমান সাধারণ মানুষের কাছে জানতে পারেন সন্তোষ রাজাদের অন্যায়ভাবে সম্পত্তি দখলের কাহিনী। সবচেয়ে বড় কথা হলো, রাজা-মহারাজা পদবি ধারণ করে তারা হজরত শাহজামান ও এনায়েতুল্লাহ খান চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত ইসলামী মিশনের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের ওপর চালাচ্ছেন নিপীড়ন। তাই তিনি জবরদখলকারী জমিদারের কাছ থেকে এ সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য আইনগতভাবে প্রচেষ্টা চালান কলকাতা হাইকোর্টে মামলার মাধ্যমে। মওলানার বিরুদ্ধে সন্তোষের রাজশক্তি নানাভাবে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা চালায়। এ সময় তাকে সন্তোষ ছেড়ে আসাম চলে যেতে হয়। কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদকারী আফ্রো-এশিয়া ল্যাটিন আমেরিকার মেহনতি মানুষের নেতা এতে ভীত হন না, পিছপা হন না তার কর্তব্য পালন থেকে। তার পাশে এসে দাঁড়ান বাংলার মানুষের আরেক বন্ধু শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। আইনের মাধ্যমে ১৯৪৬ সালে সন্তোষের ‘রাজতন্ত্র’ খতম হয়ে শাহজামানের মিশন তথা মওলানা ভাসানীর পক্ষে মামলার জয় হয়। মজলুম নেতা মওলানা ভাসানী চালিয়েছিলেন আধ্যাত্মিক পীর হজরত শাহজামানের স্বপ্ন ২০০ বছর পরে পুনরায় বাস্তবায়নের চেষ্টা। পীর সাহেব যেমন করে কাগমারী পরগনায় গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন ইসলামী শিক্ষা প্রচার, দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা, নও মুসলিমদের খাদ্য ও নিরাপত্তা প্রদানসহ নানাবিধ জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি। অনুরূপভাবে মওলানা ভাসানী নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে চলতে গিয়ে একটু বিলম্বে হলেও ১৯৭০ সালে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কর্মপদ্ধতি হাতে নেন। ১৯৭১-৭৩ ও ‘৭৪ সালে মওলানা ভাসানী সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে জাতীয়পর্যায়ে তিনটি শিক্ষাসংক্রান্ত সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন।
দেশের খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকরা এতে জোগদান করেছেন। তাদের নিয়ে শিক্ষা পরিকল্পনাবিষয়ক বেশ ক’টি সেমিনার, সিম্পোজিয়াম করেছেন তিনি। এগুলোতে দেখেছি, সারা দেশের শতাধিক সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক, সাহিত্যিক, কবি এমনকি শিল্পীরাও এসেছিলেন। উপস্থিত বরেণ্য চিন্তাবিদরা একটি কল্যাণমূলক শিক্ষাব্যবস্থা কী রকম হতে পারে তার ওপর বক্তব্য পেশ করেছেন। যে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে একজন আদর্শ নাগরিক গড়ে উঠতে পারে তার চিন্তাভাবনা পেশ করেছেন। তার এসব অনুষ্ঠান নিজের প্রতিষ্ঠিত সন্তোষের দরবার হলে অনুষ্ঠিত হয়। মওলানা ভাসানী সন্তোষে তার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদদের পরামর্শ নিয়ে এবং হজরত শাহজামান রহ:-এর মিশনকে গ্রহণ করে সে অনুযায়ী একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনার মধ্যে ছিল সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা অর্থাৎ শিশু বা নার্সারি শিক্ষা থেকে শুরু করে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি গবেষণামূলক অর্থাৎ পিএইচডি পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলন করা। এছাড়া, সূচি শিক্ষা ও তাঁতশিক্ষা। মৎস্য বিভাগ, চিকিৎসাবিদ্যা, পশুপালন ও সংরক্ষণ বিভাগ, এভাবে বিশাল এক কর্মকা- নিয়ে একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখলেন।
দুই. কবির ভাষায় মওলানা ভাসানী আগ্নেয়গিরিতুল্য এক ভিসুভিয়াস। তার বুকের ভেতর ছিল বহু বিপ্লবী চিন্তাধারা। যে বিপ্লব ভাঙনের নয়, গড়ার। ১৩ বছর আসামে রাজনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত থেকে ৩৩টি ছোট বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। এর মধ্যে ছিল মাদরাসা মক্তব, মসজিদ, স্কুল, কলেজ প্রভৃতি। পরবর্তীকালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে এসে বগুড়ায় হাজী মুহম্মদ মুহসিন কলেজ, অনেকগুলো প্রাথমিক স্কুল, টাঙ্গাইলে বিন্যাফৈর মাধ্যমিক স্কুল, কাগমারী মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ, সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নাম দিয়ে নানান প্রতিষ্ঠানসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তিনি গড়ে তোলেন। নির্লোভ নিরহঙ্কার এই নেতা নিজ হাতে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। কিন্তু কোনো নামকরণই নিজের নাম তো দূরের কথা বাপ মা বা আত্মীয়-স্বজনের নামে করেননি। করেছেন দেশের বরেণ্য নেতা অথবা আদর্শের ওপর ভিত্তি করে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এই ত্যাগী সৎ ও আপসহীন নেতার পায়ের কাছে বসা অনেক কর্মী পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার শীর্ষে বসেও তাকে ভুলে গেছেন। মওলানা ভাসানীর শেষ স্বপ্ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কিছু করেননি বরং বাধাগ্রস্ত করেছেন। বর্তমানে সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আওয়ামী লীগ সরকার মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। ভাসানীর শুধু নামফলকই ব্যবহার করা হয়েছে; এর সাথে তার স্বপ্ন সাধের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শের কোনো সম্পর্ক নেই। তিন. বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশেও সাধারণত দেখা যায়, সে দেশের শাসন ক্ষমতায় গিয়ে শাসক তার নিজের নামে অথবা আপনজনের নামে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন। মজলুম নেতা ভাসানী কোনো দিন ক্ষমতার তখতে বসেননি। তিনি রাজনীতি করেছেন জনগণকে নিয়ে, ক্ষমতায় না গিয়েও তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
ব্রিটিশ আমল থেকে মজলুম নেতা রাজনীতি করেছেন খেটে খাওয়া মানুষদের নিয়ে। তাই তার রাজনীতি সর্বহারার রাজনীতি; ভুখানাঙ্গা মানুষের রাজনীতি। অন্য নেতারা রাজনীতি করে ক্ষমতায় গিয়েছেন আর মওলানা গিয়েছেন বিরোধী অবস্থানে। প্রথম জীবনে মুসলিম লীগ তারপর আওয়ামী লীগ ও পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) রাজনৈতিক দলের ছিলেন নেতা। তার সাথে ছিল শ্রমিক, কৃষক মজদুর, অর্থাৎ মেহনতি মানুষেরা। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি গঠনমূলক সমাজসেবার সংগঠক ছিলেন। তাই তৈরি করেছেন মানুষ গড়ার আঙ্গিনা স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা। নির্ভীক এই যোদ্ধা ভয় পেতেন না ব্রিটিশ আমলে শাসকগোষ্ঠীকে, পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে বা অন্য কোনো শক্তিকে।
এ জন্য জীবনের দীর্ঘ সময় তাকে কারাগারে থাকতে হয়েছে। পাকিস্তানের স্বাধীনতার মাত্র এক বছর পর তিনি বাংলা ভাষার মর্যাদা আদায়ের জন্য আন্দোলনে নেমে পড়েন। পরবর্তীকালে ১৯৫২ সালে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ২২ ফেব্রুয়ারি এই আন্দোলনের শহীদদের উদ্দেশ্যে ঢাকায় গায়েবানা জানাজায় ইমামতি করেন। তিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি। ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদানের অপরাধে তাকে কারাবরণ করতে হয়। স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জ্য ১৯৫৮ সালে মওলানা ভাসানীকে কারারুদ্ধ করা হয়। এ সময় চার বছর কারাগারের অন্ধকারে তাকে কাটাতে হয়েছে। তিন . ১৯৭০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামের সমুদ্র এলাকা, কুতুবদিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা, বরগুনা, গলাচিপা এবং নোয়াখালীর উপকূল এলাকায় হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। গৃহপালিত পশু মারা যায়। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়।
শাসকগোষ্ঠীর বিমাতাসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সভা করে তাদের নিন্দা করেন। টাঙ্গাইলে এক জনসভায় তার জলদগম্ভীর ভাষণ শুনতে গিয়েছিলাম হাজার হাজার স্কুল কলেজের ছাত্র ও জনতার অংশ হিসেবে। ওই জনসভায় তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আপনি বাংলার মানুষদের বাঁচান। আজ হাজার হাজার মানুষ জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে যারা বেঁচে আছে তারা অনেক কষ্টে আছে। তাদের থাকার ঘর পর্যন্ত উড়ে গেছে। যারা মারা গেছে তাদের আপনজন টাকার অভাবে দাফন কাফন পর্যন্ত করতে পারছে না। আপনি দেশের প্রেসিডেন্ট হলে বাংলাদেশে এসে দুর্গত এলাকা দেখে যান।’ বক্তৃতায় ভারতের উদ্ধৃতি দিয়ে বললেন, দেখুন, ভারতে এ-জাতীয় ঘটনা ঘটলে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী কিভাবে তদারক করেন। এমনকি হেলিকপ্টারে করে দুর্গত এলাকা থেকে জনগণকে সরিয়ে নিয়ে যান। তার গগনবিদারী বক্তৃতার সময় মাঝে মাঝে উচ্চারণ করেন ‘খামোশ’ ধ্বনি।
শেখ মুজিবুর রহমানকে আইয়ুব সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করার পর তাকে কারামুক্ত করার জন্য মওলানা ভাসানী যে আন্দোলন গড়ে তোলেন তার ফলে মুজিবকে নিঃশর্তভাবে কারামুক্ত করে স্বৈর সরকার।
চার. ১৯৭১ সালের ৯, ১০, ১১ ও ১২ মার্চ ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ঢাকা ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জনসভায় ভাসানী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। এসব জনসভায় তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের উদ্দেশে ঘোষণা দেন, লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়াদ্বীন। অর্থাৎ বলতে চেয়েছেন, তোমাদের নিয়ে তোমরা থাকো, আর বাংলাদেশ নিয়ে আমরা থাকি।
দূরদর্শী রাজনীতিবিদ মওলানা ভাসানী এর আগে ইয়াহিয়ার লিগ্যাল ফ্রেমের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। তার দলকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ভোটের বাক্সে লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো। কারণ তিনি জানতেন নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষের ভাগ্য বদলাবে না। তার বন্ধু ছিলেন চীনের লৌহমানব মাও সেতুং, চৌ এনলাই, মিসরের প্রেসিডেন্ট নাসেরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ।
বাংলার মানুষের নয়নমণি মওলানা ভাসানী এমন এক নেতা ছিলেন যিনি ব্রিটিশ আমলের শাসকগোষ্ঠী, পাকিস্তান সরকার এমনকি তার স্নেহাস্পদ মুজিব সরকারের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পেতেন না তিনি। তার চরিত্রে ছিল বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের তেজস্বিতা। নজরুল ছিলেন কবিতা, গান ও প্রবন্ধে বিদ্রোহী পুরুষ আর ভাসানী ছিলেন রাজনীতিতে।
নজরুলের ভাষায় : ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত, আমি সেই দিন হব শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল
আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না।
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ
ভীমরণ ভূমে রণিবে না’ আর মওলানা ভাসানীর ভাষায় : জুলুমকারীরা আল্লাহর শত্রু, মানুষের শত্রু।
১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে মৃত্যুর মাত্র ১০ মাস আগে অশীতিকর অসুস্থ নেতা ভাসানী স্বৈরাচারী ভারত সরকারের একতরফা ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের বিরুদ্ধে লাখ লাখ জনতাকে নিয়ে লংমার্চসহ প্রতিবাদ মিছিল করেন। চিকিৎসকের বাধা উপেক্ষা করেও এই মিছিলে তিনি নেতৃত্ব দেন। সে বছরের ১৭ নভেম্বর ঢাকার পিজি হাসপাতালে ৯৬ বছর বয়সে বাংলার মুকুটহীন সম্রাট, মজলুম মানুষের কণ্ঠস্বর দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে যান। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন। আমিন।
আজকের এই সমস্যাসঙ্কুল বাংলাদেশে ভাসানীর মতো নেতার একান্ত প্রয়োজন। ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, কালোবাজারি, মুনাফাখোরের তিনি ছিলেন শত্রু। তার আদর্শকে এ দেশে বাস্তবায়ন করা হলে সুন্দর শোষণহীন দেশ গড়ে উঠত। লেখক : অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত )