সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন

জীবনযুদ্ধে সংগ্রামী নারী বাঘবিধবা হালিমা খাতুনের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

খুলনার কয়রায় জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী এক নারী বাঘবিধবা হালিমার খাতুনের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। নারীরা এখন নানা ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশে অবদান রাখছে।এভারেষ্ট জয় করছে, পাইলট হয়ে বিমান চালাচ্ছে, যুদ্ধ ক্ষেত্রে যুদ্ধ করছে এবং সফলও হয়েছে। কিন্তু নারী হয়ে জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম করে সফল হওয়া সবচেয়ে কঠিন। জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম করে সফল হয়েছেন এক নারী তিনি হলেন খুলনার কয়রার হালিমা খাতুন। বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করা বাঘবিধবা হালিমা খাতুন এখন কয়রা বাজারে চায়ের দোকানের ব্যবসা করে উপার্জন করছে। ঘুচেছে আর্থিক দৈন্যতা, বেড়েছে সামাজিক সম্মান। সমাজের নানা শ্রেনী-পেশার মানুষের মুখে তার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। তার এই সাফল্যর কারনে এখন সমাজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁকে দাওয়াত দেয়া হয়। তাঁর এই ঘুরে দাঁড়ানোর পিছনে ভুমিকা রেখেছে সেচ্ছাসেবী সংগঠন ইনিশিয়েটিভ ফর কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট (আইসিডি)। প্রতিষ্ঠানটি সুন্দরবন তীরবর্তী উপকূলীয় জনপদের বাঘবিধবাদের পূর্ণবাসনে কাজ করছে। এই প্রকল্পে সহায়তা করছে “ লিটিল কাইন্ডনেস মেক্স এ বিগ ইমপ্যাক্ট” নামের একটি প্রতিষ্ঠান। হালিমার খাতুনের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন মহারাজপুর গ্রামের আব্দুল মাজেদ তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, হালিমার দুঃখ কষ্টের দিনগুলো আমরা চোখের সামনে দেখেছি। কষ্টের পরে যে মানুষের সুখ আসে হালিমা তারই উদাহরন। এখন তিন স্বাবলম্বী এবং সমাজের মডেল। আমরা অনেক খুশী তার জীবনের এই পরিবর্তন দেখে। ১নং কয়রা গ্রামের ননী গোপাল মজুমদার বলেন, আমি হালিমার চায়ের দোকানে নিয়মিত চা খাই। হালিমার স্বামী সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমনে নিহত হওয়ার পর থেকে অনেক দুঃখ কষ্টে দিন পার করতো। আগে বাসা বাড়ি এবং হোটেলে কাজ করতো কিন্তু তার হার্টের সমস্যার কারনে আগের মতো ভারি কাজ করতে পারেন। চায়ের দোকান করে সে সাবলম্বী। বাঘবিধবা হালিমা খাতুন বলেন, প্রতিদিন চায়ের দোকান থেকে ভালো আয় হচ্ছে। এখন ঠিকমতো দ’ু মুঠো ডাল-ভাত খেতে পারি। এবং আয়ের একটি অংশ সঞ্চয় করছি। এলাকার মানুষ এখন সম্মান করে। আমার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প এখন মানুষের মুখে শুনতে ভালো লাগে। বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে কোন রকম দু’মুঠো ভাত খেতে পারতাম। হার্টের সমস্যা কারণে ভারি কাজ করতে পারি না বলে ঝিয়ের কাজটাও হারাই। চরম দুশ্চিন্তা আর হতাশার মাঝে আইসিডি আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। বাঘবিধবা হালিমা খাতুনের বাড়ি সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নে। ২০০৭ সালে হালিমা খাতুনের স্বামী আলমগীর হোসেন গাজী সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত হয়। তার সাথে থাকা সঙ্গীরা স্থানীয়দের খবর দিলে অনেক খোঁজাখুঁজি করে দুই দিন পরে খুঁজে পায় আলমগীরের লাশ। ততক্ষনে শরীরের কিছু অংশ খেয়ে ফেলে বাঘে। পরে বাঘের মুখ থেকে উদ্ধার করা ক্ষতবিক্ষত শরীরের কিছু অংশ বাড়িতে এনে কবর দেওয়া হয়। তখন হালিমা ৭ মাসের অন্তসত্তা। একমাত্র সন্তানের মুখ তাঁর পিতা দেখে যেতে পারেনি। স্বামীর মৃত্যুর পর জীবনে অবর্ণনীয় কষ্ট নেমে আসে। শশুর বাড়ি নির্যাতন ও অভাব অনাটন সহ্য করতে না পেরে খুলনা শহরে চলে যায় কাজের সন্ধ্যানে। সেখানে ঝালের মিলে কাজ করতে গিয়ে মেশিনে কাপড় জড়িয়ে মারাত্বক ভাবে আঘাত পায়। ১ মাস হাসপাতালে থাকার পর মিলের কাজ হারিয়ে তখন রেল লাইনে শাক সবজি বিক্রি করত। অভাব লেগে থাকতো বলে মেয়েকে নিয়ে শহর থেকে গ্রাামে ফিরে এসে কয়রা বাজারে ছোট একটা ঘর ভাড়া করে বাসা বাড়ি ও হোটেলে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চলতো। হার্টের সমস্যার কারণে ভারী কাজ না করতে পারায় সেই কাজও হারায়। তার এই দুরসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছে সেচ্ছাসেবী সংগঠন ইনিশিয়েটিভ ফর কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট (আইসিডি)। আইসিডির কো-ফাউন্ডার আশিকুজ্জামান বলেন, হালিমা খাতুনের মতো আরো অনেক বাঘবিধবাকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নিয়েছি। যারা এই উদ্যোগে আর্থিক সহায়তা করছেন তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাই।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com