শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০২:১০ অপরাহ্ন

দীর্ঘ কর্মঘণ্টা উৎপাদনশীলতা বাড়ায় নাকি ঝুঁকিতে ফেলে?

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বর্তমানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত বিষয় হচ্ছে কর্মীদের আদর্শ কর্মসপ্তাহ। কর্মসপ্তাহের বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক কয়েক দশক ধরে চলছে। তবে গত কয়েক মাস ধরে তীব্রতর হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হঠাৎ করে বাড়ানো হচ্ছে কর্মঘণ্টা। যে কারণে বিষয়টি পুরোনো হলেও নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
বর্তমানে কর্মীদের কর্মঘণ্টা নিয়ে ওয়ার্ক-লাইফ ফিট’র ধারণাটি বেশ আলোচনায় আছে। এ ধারণায় বলা হয়েছে, জীবন পরিবর্তনশীল এবং জীবনের অগ্রাধিকার সময়ের সঙ্গে বদলে যায়। এটি এমন এক উপায় খুঁজে নিতে বলে; যাতে পেশাগত দায়িত্ব ও ব্যক্তিজীবনের প্রয়োজনীয়তা সমন্বয় করা যায়। এটি মেনে চললে কর্মজীবনে যেমন সফলতা আসে; তেমনই ব্যক্তিজীবন নিয়েও থাকা যায় সন্তুষ্ট। ২০২৩ সালে ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির ভারতের কর্মসংস্কৃতির পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা এবং তরুণদের সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকার বিষয়ে বক্তব্যটি বিতর্কের সৃষ্টি করে। অনেকেই মূর্তির পুরোনো চিন্তা-ভাবনার জন্য সমালোচনা করেছিলেন। একই সঙ্গে কর্মজীবনের ভারসাম্যের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেছিলেন। তবে কেউ কেউ তার মতামতকে সমর্থনও করেছিলেন।
সেই বিতর্কিত বক্তব্যের কয়েক মাস পরে অতিরিক্ত কাজের চাপে আনা সেবাস্তিয়ান পেরাইল নামের এক ২৬ বছর বয়সী কর্মচারীর মৃত্যুর খবর কর্মজীবন বিতর্ককে আবার সামনে এনেছিল। সেই যুবকের মৃত্যু ক্ষোভের জন্ম দেয়। কর্মক্ষেত্র এবং বর্ধিত চাপ নিয়ে আবার ভারতে আলোচনা শুরু হয়। শুধু ভারতেই নয়, এ কর্মঘণ্টা নিয়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই আছে নানা নিয়ম-কানুন।
২০২৪ সালে লারসেন অ্যান্ড টুব্রোর (এলঅ্যান্ডটি) চেয়ারম্যান এসএন সুব্রহ্মণ্যন যখন ৯০ ঘণ্টা অফিস-সপ্তাহ সম্পর্কে মন্তব্য করেন; তখনই আবার কর্মজীবনের ভারসাম্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। সুব্রহ্মণ্যন বলেছিলেন, কর্মীদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ ৯০ ঘণ্টা কাজ করা উচিত। তার সেই কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
এক সভায় সুব্রহ্মণ্যনকে একজন কর্মচারী জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, ‘কেন তাদের শনিবার কাজ করা উচিত?’ উত্তরে সুব্রহ্মণ্যন বলেছিলেন, ‘আমি দুঃখিত যে আমি আপনাকে রোববার কাজ করাতে পারছি না, সত্যি বলতে। যদি আমি আপনাকে রোববার কাজ করাতে পারি, তবে আমি আরও খুশি হবো। কারণ আমি রোববারও কাজ করি।’
সুব্রহ্মণ্যন আরও বলেন, ‘তুমি ঘরে বসে কী করো? তুমি কতক্ষণ তোমার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারো?’। এ মন্তব্যের পর এটি রীতিমতো জাতীয় বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্ক লেখেন, ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগে চালু হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সির কর্মীরা দিনে ১৭ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৭ দিন কাজ করেন। এতে তাদের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা দাঁড়ায় ১১৯ এ! অস্বাভাবিক এ কর্মঘণ্টা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। আদৌ কি এ দীর্ঘ কর্মঘণ্টা উৎপাদনশীলতা বাড়াচ্ছে, নাকি কর্মীকে ঠেলে দিচ্ছে ঝুঁকির মুখে?
আইএলওর রিপোর্ট অনুযায়ী, সপ্তাহে গড়ে ৪৬ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট কাজ করেন একজন বাংলাদেশি কর্মী। যেখানে বিশ্বের ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীরা সপ্তাহে গড়ে কাজ করেন ৩৮ ঘণ্টা, জাপানে ৩৬ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট এবং যুক্তরাজ্যে ৩৫ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট।
অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা কর্মীদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত করে, সৃষ্টি করে মানসিক চাপ। এ ছাড়া হৃদরোগ, স্থূলতা, অনিদ্রাসহ বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার কারণ হতে পারে। প্রত্যেকেরই উচিত, কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলা।

দীর্ঘ কর্মঘণ্টা উৎপাদনশীলতা বাড়ায় নাকি ঝুঁকিতে ফেলে?
২০২৪ সালে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর্মঘণ্টায় শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে অন্যতম ভুটান। এ দেশের জনসংখ্যা মাত্র ৭ লাখ। তাদের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। তারা সপ্তাহে প্রায় ৫৪ ঘণ্টা ২৪ মিনিট কাজ করেন।
কর্মঘণ্টার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ দেশের কর্মীরা প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫০ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট কাজ করেন। তালিকায় তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে আফ্রিকার দেশ লেসোথো। দেশটির মানুষ প্রতি সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টা ২৪ মিনিট কাজ করেন। মধ্য আফ্রিকার দেশ কঙ্গো আছে কর্মঘণ্টার তালিকার চতুর্থ স্থানে। এ দেশের কর্মীরা প্রতি সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট কাজ করেন। সবশেষ অর্থাৎ তালিকার পঞ্চম স্থানে আছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। দেশটির কর্মীরা প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করেন। তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com