ভোলার লালমোহন উপজেলায় চলতি মৌসুমে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিক থেকে চাষিরা ক্ষেত থেকে তরমুজ সংগ্রহ শুরু করেছেন। আরও অন্তত দেড় মাসের মতো সময় ধরে জমি থেকে তরমুজ সংগ্রহ করতে পারবেন তারা। লালমোহনের এসব তরমুজ জাহাজ এবং ট্রাকযোগে যাচ্ছে বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। আকারভেদে পাইকারি বাজারে এসব তরমুজের দাম প্রতি পিস ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসুমে লালমোহন উপজেলায় ৭০০ হেক্টরের মতো জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। যার মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন চরের অন্তত সাড়ে ৫ শত হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। উপজেলার নবীর চর, চর রোজিনা, চর কচুয়াখালী, চর পিয়াল, চর সৈয়দাবাদসহ আরও কয়েকটি চরে বিগত বছরের ন্যায় এবারও তরমুজ চাষ হয়েছে। তবে এবার প্রথমবারের মতো লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া নদীর বুকে জেগে ওঠা চরভুতুমেও তরমুজ চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন চাষিরা। চলতি মৌসুমে এই উপজেলার চাষিরা বাংলালিংক, জেব্রাকিং এবং গ্লোরিসহ আরও কয়েকটি উন্নত জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। সরেজমিনে লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন চরভুতুমে গিয়ে দেখা গেছে, এই চরটির বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে কেবল সবুজের সমারোহ। এই সবুজের বুক ছিঁড়ে উঁকি দিচ্ছে কৃষকের নিরলসশ্রমে গড়ে ওঠা স্বপ্নের তরমুজ। এছাড়া তরমুজের মৌসুমে বিভিন্ন সময় চরের চাষিদের সঙ্গে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও এই চরের চাষিরা নির্বিঘেœ তরমুজের আবাদ করেছেন। একইসঙ্গে বর্তমানে ক্ষেতের তরমুজ সংগ্রহ করে নিরাপদে নৌ ও সড়ক পথে জাহাজ এবং ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন তারা। চরটিতে লালমোহন উপজেলার চাষি ছাড়াও অন্য উপজেলার চাষিরা গিয়েও সুন্দরভাবে তরমুজের আবাদ করেছেন। চরভুতুমের তরমুজ চাষি মো. মিজানুর রহমান জানান, বিগত কয়েক বছর বিভিন্ন চরে তরমুজের চাষ করেছি। তবে এই চরে এবার প্রথমবারের মতো ১৬‘শ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এরইমধ্যে ক্ষেত থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। এখনো ক্ষেতে যে পরিমাণ তরমুজ রয়েছে সেগুলো আরও ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। এছাড়া নতুন চর হওয়া শর্তেও এই তরমুজের মৌসুমে এখানে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। উপজেলার অন্যান্য চরের চাষিদের সঙ্গেও কথা বলে জেনেছি এবার সেসব চরেও তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। একই চরের মো. মাসুদ মাঝি নামে আরেক চাষি বলেন, আমি পার্শ্ববর্তী চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট থানার নীলকমল ইউনিয়নের বাসিন্দা। সেখান থেকে এসে এই চরে প্রথমবারই ২৪‘শ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। বর্তমানে ক্ষেতে অনেক ভালো ফলন রয়েছে। এই তরমুজ চাষে এবার ৩০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। তবে ক্ষেতের সব তরমুজ বিক্রি শেষে আল্লাহর রহমতে অন্তত ৪৫ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবো। এছাড়া প্রথমবার চরভুতুমে তরমুজ চাষ করে অনেকটা নিরাপদে রয়েছি। আশা করছি সুন্দরভাবেই চরের সব চাষিরা তাদের তরমুজ বিক্রি শেষ করে ঘরে ফিরবেন। এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবু হাসনাইন জানান, তরমুজ চাষ অত্যন্ত লাভজনক। যার ফলে এই উপজেলায় দিন দিন তরমুজ চাষি বাড়ছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিরা ভালো ফলন পেয়েছেন এবং বাজারেও তরমুজের ন্যায্য মূল্য রয়েছে। এসব তরমুজ চাষিদের কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়া মৌসুমের শুরু থেকে তরমুজ চাষিদের কাছে গিয়ে আমাদের কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি মৌসুমে উপজেলার চরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে। যার কারণ চরাঞ্চলে আগেভাগেই ফলন চলে আসে।