আরবি মাসগুলোর মধ্যে শাওয়াল মাস বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। এ মাসের রয়েছে বহুবিধ তাৎপর্য। শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদ। পয়লা শাওয়ালে সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা আদায় করা এবং ঈদের ওয়াজিব নামাজ পড়া হয়। এই মাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে হজের, এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে ঈদের; এর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে রোজা ও রমজানের এবং এর সঙ্গে যোগ রয়েছে সদকা ও জাকাতের। আরবি চান্দ্রবর্ষের দশম মাস শাওয়াল। এটি হজের তিন মাস (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) এর প্রথম মাস। এ মাসের ৭ তারিখে তৃতীয় হিজরি সনে (২৩ মার্চ ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে) ওহুদ যুদ্ধ বিজয় হয়েছিল।
শাওয়াল মাসের যেকোনো সময় এই ছয় রোজা আদায় করা যায়। ধারাবাহিকভাবে বা মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়েও আদায় করা যায়। উল্লেখ্য, রমজান মাসে ফরজ রোজা ছাড়া অন্যান্য সব রোজার নিয়ত সাহ্রির সময়ের মধ্যেই করতে হবে। এর পূর্বে, ঘুমানোর আগে বা তারও আগে যদি এই দিনের রোজার দৃঢ় সংকল্প থাকে, তাহলে তা–ও নিয়ত হিসেবে গণ্য হবে এবং সাহ্রি না খেতে পারলেও রোজা রাখা যাবে। (ফাতাওয়া শামী)
বর্ণিত আছে, ‘আল্লাহ তাআলা শাওয়াল মাসের ছয় দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এই মাসে ছয় দিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তাকে প্রত্যেক সৃষ্ট জীবের সংখ্যার সমান নেকি দেবেন, সমপরিমাণ গুনাহ মুছে দেবেন এবং পরকালে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন।’ (আল মুসনাদ)
শাওয়াল মাসে ছয়টি সুন্নত রোজা রাখলে পুরো এক বছর রোজা পালনের সওয়াব পাওয়া যায়। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যারা রমজানে সিয়াম পালন করবে এবং শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখবে, তারা যেন পূর্ণ এক বছরই রোজা পালন করল।’ (মুসলিম: ১১৬৪; আবু দাউদ: ২৪৩৩; তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে মাজাহ, সহিহ-আলবানি)
চান্দ্রমাস হিসেবে ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে এক বছর হয়। প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব আল্লাহ তাআলা কমপক্ষে ১০ গুণ করে দিয়ে থাকেন। (সুরা আনআম, আয়াত: ১৬০) সেই হিসাবে রমজান মাসে এক মাসের (৩০ দিনের) রোজা ১০ গুণ হয়ে ৩০০ দিনের সমান হয়। অবশিষ্ট ৫৪ বা ৫৫ দিনের জন্য আরও ছয়টি পূর্ণ রোজার প্রয়োজন হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন তুমি (ফরজ) দায়িত্ব সম্পন্ন করবে, তখন উঠে দাঁড়াবে এবং তুমি (নফলের মাধ্যমে) তোমার রবের প্রতি অনুরাগী হবে।’ (সুরা ইনশিরাহ, আয়াত: ৭-৮)
আল্লাহ তাআলা কোনো বান্দার আমল কবুল করলে তাকে অনুরূপ আরও আমল করার তাওফিক দান করেন। নেক আমলের প্রতিদানের একটি রূপ হলো পুনরায় আরও নেক আমল করার সৌভাগ্য অর্জন করা। শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখা রমজানের রোজা কবুল হওয়ারও পরিচায়ক। শাওয়াল মাসের যেকোনো সময় এই ছয় রোজা আদায় করা যায়। ধারাবাহিকভাবে বা মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়েও আদায় করা যায়। উল্লেখ্য, রমজান মাসে ফরজ রোজা ছাড়া অন্যান্য সব রোজার নিয়ত সাহ্রির সময়ের মধ্যেই করতে হবে। এর পূর্বে, ঘুমানোর আগে বা তারও আগে যদি এই দিনের রোজার দৃঢ় সংকল্প থাকে, তাহলে তা–ও নিয়ত হিসেবে গণ্য হবে এবং সাহ্রি না খেতে পারলেও রোজা রাখা যাবে। (ফাতাওয়া শামী) যদি রমজানের কাজা রোজা থাকে, তবে তা পরবর্তী রমজান মাসের পূর্ব পর্যন্ত যেকোনো সময়ে আদায় করা যাবে। রমজানের কাজা রোজা রাখার জন্য সময় স্বল্প হলে তার পূর্বে নফল রোজা রাখা বৈধ ও শুদ্ধ হবে। কারণ, এই ছয়টি রোজা এই মাসের পরে রাখার সুযোগ নেই, কিন্তু কাজা রোজা পরে আদায় করার সুযোগ রয়েছে। তবে সম্ভব হলে আগে ফরজ রোজার কাজা আদায় করাই উত্তম। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, খ-: ২, পৃষ্ঠা: ১৬৬)হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমার ওপর রমজানের যে কাজা রোজা বাকি থাকত, তা পরবর্তী শাবান ব্যতীত আমি আদায় করতে পারতাম না।’ (বুখারি: ১৯৫০; মুসলিম: ১১৪৬)শাওয়াল মাসে বিয়েশাদি সম্পন্ন করা সুন্নত। অনুরূপভাবে শুক্রবারে, জামে মসজিদে ও বড় মজলিশে বিয়ের আক্দ অনুষ্ঠিত হওয়া সুন্নত। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.)-এর বিয়ে শাওয়াল মাসের শুক্রবারে মসজিদে নববিতেই হয়েছিল। (মুসলিম) শুভ কাজের শুভসূচনার জন্য শাওয়াল মাসটি খুবই উপযোগী। এ মাসে বিভিন্ন ইসলামি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মবর্ষ শুরু করে থাকে। ইসলামি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এ মাসে তাদের শিক্ষাবর্ষের নতুন ভর্তি ও নব পাঠদান শুরু করে থাকে। মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী, যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম smusmangonee@gmail.com