জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সংসদে দেয়া ভাষণ থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র প্রসঙ্গে কিছু অংশ বাদ পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ তো পরের কথা, রাষ্ট্র থেকেই ধর্মনিরপেক্ষতা নির্বাসন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিল ৩০ লাখ শহীদের রক্তে লেখা। কেন সেই ভাষণ থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র প্রসঙ্গ বাদ পড়লো, তার ব্যাখ্যা জাতিকে জানানো জরুরি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সংসদ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনানো হয়। সেই ভাষণ থেকে কিছু অংশ বাদ পড়ে যায়। যেটি নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্টরা। সংসদে প্রচার করা ভাষণে বঙ্গবন্ধুর মূল বক্তৃতার কিছু অংশ যে বাদ পড়েছে, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও তা স্বীকার করেছেন। তবে তার ভাষ্য, সংসদ ওই ভাষণ সম্পাদনা করেনি, বেতার থেকে পাওয়া ভাষণটি হুবহু প্রচার করা হয়েছে। অন্যদিকে বেতার বলছে, আর্কাইভে যেভাবে আছে, সেই ভাষণটিই সংসদকে দেওয়া হয়েছে, সেখানে নতুন করে কিছু করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংসদে ওই ভাষণটি দিয়েছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সংসদে আনা সাধারণ প্রস্তাব গ্রহণের আগে গত ১৫ নভেম্বর সেই ভাষণটিই অধিবেশনে শোনানো হয়। কিন্তু সেখানে কিছু অংশ বাদ পড়ায় ১৬ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মাহবুবুর রহমান জালাল। তিনি লেখেন- ‘সংসদে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ (১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংসদে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য) এ এডিট!’ সেই ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সেন্টার ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড রিসার্চের প্রেসিডেন্ট জালাল।
এ প্রসঙ্গে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবেই ভাষণ থেকে এই অংশ বাদ দেয়া হয়েছে। কেন দেয়া হয়েছে তা জাতির সামনে ব্যাখ্যা করা হোক। বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। এটি সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অথচ, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই এমন অভিযোগ শুনতে হলো।’
তিনি বলেন, ‘ভাষণে কী থাকল, কী না থাকল তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র রাষ্ট্র থেকেই বাদ দেয়া হয়েছে। সরকার ক্ষমতা পোক্ত করতেই এ দুটি বিষয় থেকে পরিকল্পিতভাবে সরে এসেছে।’ সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য চারটি মূলনীতির কথা বলা হয়েছে। রাষ্ট্র কি সে নীতিতে চলছে? গণতন্ত্রও আজ নির্বাসিত। আমরা খালেদা জিয়া সরকারের আমলে সাম্প্রদায়িক শক্তির যে উত্থান দেখেছি, শেখ হাসিনার আমলেও তাই দেখছি।