ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নামাজ। রাসুল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে বার বার নামাজের তাগিদ পেয়েছেন। কুরআনে পাকে আল্লাহ তালা বিভিন্ন জায়গায় সরাসরি ৮২ বার সালাত শব্দ উল্লেখ করে নামাজের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। নামাজ ঈমানের মূল পরিচায়ক। বিষয়টি হাদিসে বলা হয়েছে এভাবে, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে যে ব্যক্তি নামাজ তরক করে সে কাফের।’ অন্য এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,‘ কিয়ামতের দিন বান্দার আমলের মধ্যে সর্বপ্রথম তার নামাজের হিসাব নেয়া হবে। তার নামাজ যদি যথাযথ প্রমাণিত হয় তবে সে সাফল্য লাভ করবে। আর যদি নামাজের হিসাব খারাপ হয় তবে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ‘ –(সুনানে তিরমিজি) নামাজ একটি ইবাদত বিশেষ। আর ইবাদত অর্থ হলো- আনুগত্য, দাসত্ব, মেনে নেয়া ও অধীনতা স্বীকার করা। দৈনন্দিন জীবনের প্রত্যেকটি পদক্ষেপে আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করাই হলো ইবাদতের আসল অর্থ। বান্দা তার আইন মেনে নেবে, তার দাসত্বে নিজেকে আবদ্ধ রাখবে, তার অধীনতা স্বীকার করে জীবন-যাপন করবে এটাই আল্লাহ চান। এটাই বান্দার সৃষ্টির উদ্দেশ্য। তাই জীবনের এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করতে বান্দার কঠোর পরিশ্রম দরকার। দরকার নিরবচ্ছিন্ন সাধনা, নিয়মিত অধ্যবসায়, নিয়মনিষ্ঠ দৈনন্দিন জীবন। দরকার একটি অনুগত অন্তর, বিনম্র হৃদয়। সূক্ষ্ম দায়িত্ববোধ, পবিত্র নৈতিকতা, বিশুদ্ধ ঈমান এবং মজবুত প্রচেষ্টা। বিস্ময়করভাবে লক্ষণীয় যে, একমাত্র নামাজই উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো মানুষের মধ্যে তৈরি করতে পারে। আর নামাজের মাধ্যমেই আমাদের মহান রব তার আনুগত্য পরায়ণ বান্দা হবার প্রশিক্ষণ দিতে চেয়েছেন এভাবেই।
নামাজ আল্লাহর আনুগত্য ও দাসত্বের প্রশিক্ষণ দেয়, নামাজ কর্তব্যপরায়ণ ও দায়িত্ববান হওয়ার চাবিকাঠি, এই নামাজই আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, নামাজ বান্দাকে কঠোরভাবে নিয়মানুবর্তী করে তুলে, নামাজ অন্যায়-অশ্লীলতা ও অপরাধমুক্ত জীবন গঠনে সহায়ক, নামাজ আল্লাহর ভয় জাগ্রত করে, নামাজ বান্দাকে বিনয়ী বানায়, নামাজ সংঘবদ্ধ জীবনের প্রতিচ্ছবি ও নামাজ পবিত্র জীবন-যাপনে অভ্যস্ত করে। দেখুন, দৈনন্দিন কর্মমুখী জীবনে শত ব্যস্ততার মাঝেও পাঁচবার ধ্বনিত হওয়া আজান বান্দাকে মনে করিয়ে দেয়- ‘আমি আমার রবের দাস’ যত কাজই থাকুক না কেন, আমার রবের ডাকে সাড়া দিতে হবে। এভাবে জীবনের প্রতি ধাপে, প্রত্যেকটি সোপানে আল্লাহ প্রদত্ত হুকুম-আহকাম পালন করার জন্য যে কর্তব্যবোধ ও দায়িত্বনিষ্ঠা প্রয়োজন কেবলমাত্র নামাজের মাধ্যমে তা মানুষের অন্তরে স্থান পায়। ব্যস্ততাময় জীবনে নামাজ প্রতিনিয়ত আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতালা নিজেই বলেছেন, ‘আমার স্মরণের জন্যই নামাজ কায়েম করো। ‘ -(সূরা ত্বহা: ১৪) নামাজ অন্যায়-অশ্লীলতা ও অপরাধমুক্ত জীবন গঠনে সহায়ক। সত্যিকারভাবে নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি যে নামাজের মধ্যে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী প্রত্যেকটি কাজ সম্পাদন করছে, সে নামাজ শেষ হলেও আল্লাহর হুকুম মেনে যাবতীয় অন্যায়-অশ্লীলতা থেকে বিমুক্ত থাকবে এটাই নামাজের শিক্ষা। আর নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহ বান্দার অতীত অপরাধ মোচন করে দেন।
নামাজ মূলত বান্দাকে আল্লাহকে ভয় করতে শেখায়। অজু না করে, ঠিকমতো সূরা-কেরাত পাঠ না করে নামাজ আদায় করলে কারো তা বুঝার উপায় নেই। কিন্তু একমাত্র আল্লাহকে ভয় করেই বান্দা সমস্ত লোকচক্ষুর আড়ালেও তার হুকুম লঙ্ঘন করতে ভয় পায়। তাই আল্লাহভীতি জীবনের সকল ক্ষেত্রে মেনে আসলেই ব্যক্তি যাবতীয় অন্যায় থেকে বিরত থাকতে পারে। এতে একটি অনাচারমুক্ত সমাজ গঠন সহজ হয়।