শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:৪২ পূর্বাহ্ন

সেই ‘মামু’ গ্রেপ্তার

খবরপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭

গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরী এ দেশে আসার পর জঙ্গি দল গঠনের জন্য শুরুতে প্রধান সহযোগী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন আবদুস সামাদ ওরফে মামু ওরফে আরিফ নামে পুরোনো জেএমবির এক সদস্যকে। তাঁর মাধ্যমে ‘জুনুদ আল তাওহীদ আল খলিফা’ নামে একটি জঙ্গি সংগঠনও করেছিলেন।

সেই আবদুস সামাদ ওরফে মামুকে দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, এই তিন জঙ্গিকে গত বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে রাজধানীর মহাখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে ২০০টি ডেটোনেটর, ১টি নাইন এমএম পিস্তল ও ৫টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরী এ দেশে আসার পর প্রথমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আশানুরূপ সাড়া পাননি। এরপর তামিম উত্তরবঙ্গে গেলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয় আবদুস সামাদের। এই আবদুস সামাদ পুরোনো জেএমবির সদস্য এবং তাঁর বাড়ি দিনাজপুরে।

তিনি তামিম চৌধুরীকে জেএমবি সদস্যদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তাঁদের মধ্যে হোলি আর্টিজানে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী সারোয়ার জাহানও ছিলেন। প্রথমে তাঁরা জুনুদ আল তাওহীদ আল হিকমা নামের একটি জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলেন। ২০১৪ সালের দিকে পুলিশ ওই সংগঠনের কয়েকজনকে ধরে ফেলেন, তাঁদের কাছ থেকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ভিডিও চিত্রও পাওয়া যায়। ভিডিওতে জঙ্গি সংগঠনটিতে আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন, আয়মান আল জাওয়াহিরির ছবি যেমন ছিল, ইসলামিক স্টেটের আবু বকর আল বাগদাদী সবারই ছবি ছিল। পরে তাঁরা আইএস মতাদর্শ অনুসরণ করতে শুরু করেন।

আবদুস সামাদ কওমি ও দাখিল মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন। ধর্মের নিজস্ব ব্যাখ্যা প্রচারে তামিম চৌধুরী তাঁকে কাজে লাগান। তামিম চৌধুরীর সঙ্গে তিনি কল্যাণপুর ও মিরপুরের বিভিন্ন প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এসেছেন এবং বয়ান দিয়ে গেছেন বলে জানান মনিরুল ইসলাম। হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার আগে আবদুস সামাদকে উত্তরবঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি উত্তরবঙ্গের প্রশিক্ষণ শিবিরগুলোতে কাজ করতে থাকেন। আবদুস সামাদ নব্য জেএমবির জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত দেওয়া, সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ, বোমা তৈরির কাজ করতেন।

আবদুস সামাদ ওরফে মামুর নাম পুলিশ প্রথম জানতে পারে ২০১৫ সালের অক্টোবরে, পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে বোমা হামলার পর গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের কাছ থেকে। তবে তাঁরা আবদুস সামাদের নাম বলতে পারেননি। শুধু ‘মামু’ নামটি বলতে পেরেছিলেন। তখন থেকেই তাঁকে খোঁজা হচ্ছিল।

মনিরুল ইসলাম বলেন, নব্য জেএমবির নেতা সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ গ্রেপ্তারের পর আবদুস সামাদ সংগঠন গোছানোর কাজ করছিলেন। তাঁর সঙ্গে যে দুজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এর মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত জিয়াদুল হলেন আবদুস সামাদের শ্বশুর। তিনি নব্য জেএমবির অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখার কাজ করতেন। আরেকজন আজিজুল ইসলাম ওরফে শিশির দুই বছর আগে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। তাঁর লেখাপড়া নবম শ্রেণি পর্যন্ত।

এখন নব্য জেএমবির শক্তি-সামর্থ্য কেমন আছে—এমন সব প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, সংখ্যার দিক থেকে জেএমবিতে শত শত বা হাজার হাজার সদস্য নেই। বিভিন্ন অভিযানে এ পর্যন্ত সংগঠনটির ৮০ জন নিহত হয়েছেন। কমপক্ষে ২০০ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। জঙ্গিবাদ দমনের কাজটি রাতারাতি করে ফেলা সম্ভব নয়। বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় জঙ্গিবাদকে উসকে দিতে পারে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com