মানুষ সামাজিক প্রাণী, মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন কিছু দায়িত্ব পালনে। আমাদের জীবন এবং বেড়ে ওঠা একাকী সম্ভব নয়। সঙ্ঘবদ্ধভাবে সমাজে বসবাস করাই আমাদের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। আর এই বাস করার মধ্যে রয়েছে কিছু নিয়ম, শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য। যার বেশির ভাগ দিকনির্দেশনাই ইসলাম তার পবিত্র গ্রন্থ কুরআন ও হাদিসে বাতলে দিয়েছে। অথচ আমরা আমাদের ধর্মীয় এবং নৈতিকতার শিক্ষাকে বিসর্জন দিয়ে পাশ্চাত্য কালচার অনুসরণ করে সমাজকে নিয়ে যাচ্ছি অবক্ষয়ের চরম পর্যায়ে। হারাচ্ছি মর্যাদা, সম্মান এমনকি জীবনও। যত দিন যাচ্ছে, ধর্মীয় অনুশাসন থেকে ততই পিছিয়ে যাচ্ছি। অশ্লীলতা, পাপাচার, মাদক, ব্যভিচার, অবৈধ মেলামেশা আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ও বাড়ছে দিন দিন, ইন্টারনেট ও গণমাধ্যমের সহজলভ্যতার দরুন অশ্লীল সিনেমা, ভিডিও ক্লিপ খুব সহজেই যুবসমাজের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়ছে, যার ফলে বেড়ে যাচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ব্যভিচার।
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। এটি অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ’ (সূরা বনি ইসরাইল-৩২)।
সঙ্গ নির্বাচনে ভুল করার ফলে আমাদের সমাজের উঠতি বয়সী তরুণরা যাচ্ছে বিপথে। পরিবার তার দায়িত্ব পালনে হচ্ছে ব্যর্থ। সন্তান কোথায় যায়, কার সাথে মিশে, এসবে মনোযোগী হতে ভুলে যায় আমাদের পরিবার। যার ফলে হয় ‘অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’।
উত্তম বন্ধু নির্বাচন করা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। সৎ ও বিশ্বস্ত মানুষকে বন্ধু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! আল্লাহকে ভয় করো এবং সৎ-সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গী হও’ (সূরা তাওবাহ-১১৯)।
এ জন্য মা-বাবার উচিত, সন্তান বড় হলে তার সাথে ঘনিষ্ঠ আচরণ করা, বন্ধুর মতো তার মনের খোঁজখবর নেয়া। সে কার সাথে মিশছে সে সম্পর্কে জানা। এতে করে সন্তানের একাকিত্ব বা অসৎ সঙ্গ তাকে খারাপ পথে নিতে বাধাগ্রস্ত করবে।
সামাজিক অবক্ষয়ের আরেকটি অন্যতম কারণ, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না থাকা। আমাদের সমাজে আমরা অন্যায়কে অন্যায় বলে স্বীকার করতে চাই না বলে, সেই অন্যায়টা একসময় স্বাভাবিকভাবে অস্বাভাবিকরূপে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। হারাম-হালাল, সুদ-ঘুষ, অবৈধ মেলামেশা এসব কিছু বর্তমানে আমাদের সমাজে খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে বেড়ে চলছে চাঁদাবাজি, প্রতারণা, খুন, ধর্ষণ।
এর পর আসে আরো জঘন্য সামাজিক অবক্ষয়, তা হলো- ন্যায়বিচারের অভাব। খুন, ধর্ষণ প্রমাণিত হওয়ার পরও হচ্ছে না তার সঠিক বিচার।
আইনের ফাঁকফোকরে মাকড়সার জালের মতো অপরাধীর বড় মাথাগুলো বরাবরই ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। আর তাই মানুষ ভুলে যায় শাস্তির কথা। আবার যোগ দেয় অপরাধে, ঠিক এভাবেই চলতে থাকে সমাজের অসুস্থ চাকা।
অথচ নিয়ম হলো- অপরাধিকে দিতে হবে কঠিন শাস্তি। যাতে করে দ্বিতীয়বার সে অপরাধ মানুষ করতে গেলে শাস্তির কথা মনে আসবে আর ভয়ে বুক কাঁপবে। সামাজিক অবক্ষয় রোধে ন্যায়বিচারের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনো ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না।’ (সূরা মায়েদা-৮) ইসলামে ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে কোনো স্বজনপ্রীতি প্রশ্রয় দেয় না, এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘সুবিচার করো, যদিও সে আত্মীয়ও হয়।’ (সূরা আনআম-১৫২)
ন্যায়বিচারের ব্যাপারে মহানবী দ্ব্যর্থহীন উক্তি ছিল- ‘আজ আমার মেয়ে ফাতেমাও যদি চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে যায় তবে আমি প্রথমে আমার মেয়ের হাত কেটে দেবো।’ (বুখারি-৬৭৮৮)
সমাজিক অবক্ষয় রোধে, আমাদের প্রজন্ম, আমাদের পরিবার, আমাদের সমাজ অবকাঠামোতে আনতে স্বচ্ছ ধর্মীয় এবং নৈতিক শিক্ষা প্রয়োজন। তবে আমরা একটি সুস্থ সমাজে বসবাস করতে পারব। আল্লাহ আমাদের সেই দিন দেখার তৌফিক দান করুন, আমিন।