শীতকালীন সবজির আরেক ভান্ডার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি সীতাকুণ্ড। শীতকালীন শীমের জন্য সীতাকুণ্ড বরাবরই বিখ্যাত। বলা হয়ে থাকে সীতাকুণ্ড শীমের রাজ্য। তবে সীতাকুণ্ডে শীমের মতো অন্যান্য সবজির ফলনও কম নয়। চলতি মৌসুমে শীম, টমেটোর পাশাপাশি ফুলকপিরও ভালো ফলন হয়েছে এই উপজেলায়। তবে ফলন উচ্চ হলেও ক্ষতির মুখে পড়ছে সীতাকুণ্ডর ফুলকপি চাষীরা। বীজ বপন, সেচ, কীটনাশক, পরিচর্যা, ফসল তোলা,পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেশি হওয়ায় আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না চাষীরা। বাজারে সব ধরণের সবজির সরবরাহ বেশি বলে দামও কম। ফলে ফুলকপি বিক্রি করে খরচ ওঠে না আসায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে চাষীদের। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে স্নোহোয়াইট, কেকেক্রস, আর্লিহোয়াইট, স্নোবলসহ ৫ ধরণের ফুলকপি চাষ হয়ে থাকে সীতাকুণ্ডে। চলতি মৌসুমে সীতাকুণ্ডে ১৫০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির চাষ হয়েছে। এ উপজেলায় প্রতি হেক্টরে চাষির সংখ্যা ৭-৮ জন। প্রতি বছরের মতো এ বছরও ফুলকপির বাম্পার ফলন হয়েছে। সীতাকুণ্ড পৌরসভার ভ্ূঁইয়্যা পাড়ার ফুলকপি চাষী আব্দুল জলিল জানান, এ বছর ৪৮ শতাংশ জমিতে ফুলকপি চাষ করেছি। বেশি টাকায় কীটনাশক ও সার কিনতে হয়েছে। সেচ, শ্রমিকের মজুরি সবমিলিয়ে সত্তর হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছি। মাঘের শেষে ফলনের দেখা মিললেও আসলের এক চতুর্থাংশের অর্ধেকও ওঠে আসেনি। যে পরিমাণে ফুলকপি বিক্রি করছি সে অনুযায়ী দাম পাচ্ছি না। এভাবে চলতে থাকলে লোকসানে পড়তে হবে। একই কথা বলেন, ভূঁইয়্যা পাড়ার চাষী জয়নাল আবেদীন। তিনি জানান, এবার ৫৯ শতাংশ জমিতে ফুলকপি চাষ করেছি। বাজারে ফুলকপি বিক্রির জন্য নিয়ে গেলে সব ব্যাপারীরা একই দাম বলে। বাধ্য হয়ে তাদের দামে বিক্রি করে আসতে হয়। যেখানে গতবছর প্রতি কেজি ফুলকপি ২৫-৩০ টাকা বিক্রি করেছি, সেখানে এ বছর প্রতি কেজি ফুলকপির দাম পাচ্ছি ১৭-১৮ টাকা। এ মৌসুমে মূলধন ওঠে আসার ব্যাপারে শঙ্কায় আছেন বলে জানান তিনি। বাজারে ফুলকপি বিক্রি করতে আসা শেখের হাটের কৃষক শেখ রাসেল বলেন, ফুলকপি খুবই ঝামেলার ফসল। কপি কাটা, সাইজ করা, পরিবহন করা অত্যন্ত কষ্টের। ফুলকপির মতো ঝামেলাপূর্ণ ফসল কম আছে। কিন্তুু এতো কষ্ট করে ফুলকপি চাষ করেও আশানুরূপ দাম পায় না। প্রতি হাটে দুই হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করলে পরিবহন খরচ, বদলা খরচ, হাসিল ও অন্যান্য খরচে ১ হাজার টাকা চলে যায়। এ বছর এতো কম দামে কপি বিক্রি করছি যে নিজের খাটুনির মজুরিও পাবো বলে মনে হচ্ছে না। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি অফিসার রঘু নাথ নাহা দৈনিক খবরপত্রকে বলেন, ভরা মৌসুমে ফলন বেশি হওয়ায় বাজারে দাম একটু কম থাকে। এই সময়ে সরবরাহ অধিক হওয়ায় চাষীরা দাম কম পাচ্ছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আগাম চাষের জন্য ফুলকপি চাষীদের পরামর্শ প্রদান ও বালাইনাশক ব্যবস্থাপনার জন্য সেক্স ফরোমন ফাঁদ ব্যবহারের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।