রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৬ অপরাহ্ন

শরিয়াভিত্তিক অর্থব্যবস্থা

ড. ইকবাল কবীর মোহন
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২১

মানবজীবনের বড় অংশ জুড়েই রয়েছে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও লেনদেন। আর এসব কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য ইসলাম দিয়েছে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ। ইসলামি শরিয়তের ভিত্তিতে পরিচালিত অর্থব্যবস্থার বেশ কিছু লক্ষ্য রয়েছে, যা মানুষের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে এবং পৃথিবীকে সুষ্ঠু, সুন্দর ও কল্যাণময় করে গড়ে তোলে। লক্ষ্যগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরছি।
অবাধ সরবরাহ: পুরো সমাজের সামগ্রিক কল্যাণ সাধনই ইসলামি অর্থব্যবস্থার লক্ষ্য। গুটি কয়েক মানুষের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত না করে সমাজের সর্বস্তরে তার অবাধ সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। সম্পদশালীদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছে জাকাত ও সদকা। অন্যদিকে মজুদদারি ও একচেটিয়া ব্যবসা নিষিদ্ধ করে সরবরাহের পথকে আরও সুগম করেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ জনপদবাসী থেকে তার রাসুলকে যা দিয়েছেন, তা আল্লাহর, রাসুলের, তার আত্মীয়স্বজনের, এতিমদের, অভাবগ্রস্তদের এবং মুসাফিরদের জন্য, যাতে শুধু তোমাদের বিত্তশালীদের হাতে ধন-সম্পদ পুঞ্জীভূত না হয়।’ (সুরা হাশর, আয়াত : ৭) রাসুল (সা.) জাকাত আদায় না করার ভয়াবহতা বর্ণনা করে বলেন, ‘আল্লাহ যাকে ধন-সম্পদ দিয়েছেন সে জাকাত আদায় না করলে কেয়ামতের দিন তা একটি বিষধর অজগরের রূপ ধারণ করবে, যার দুচোখের ওপর দুটি কালো চিহ্ন থাকবে। কেয়ামতের দিন তা তার গলায় জড়িয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুপাশে কামড়াতে থাকবে এবং বলবে আমিই তোমার সম্পদ, তোমার পুঞ্জীভূত ধন।’ (সহিহ বুখারি : ১/১৮৮)
অব্যাহত বিনিয়োগ: সমাজের সব জনগোষ্ঠী ব্যাপকভাবে অর্থনীতির সুফল ভোগ করতে পারে এমন বিনিয়োগ ব্যবস্থার নির্দেশনা দেয় ইসলাম। সমাজের উন্নয়ন-অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। তাই ব্যাপক বিনিয়োগ হলে অধিক মানুষের হাতে সম্পদ আবর্তিত হয়। আর আল্লাহ মেধা ও সামর্থ্য অনুসারে সব মানুষকেই উৎপাদন ও ভোগের অধিকার দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, তাদের পার্থিব জীবনে আমিই তাদের জীবিকা বণ্টন করে রেখেছি এবং তাদের একজনকে অন্যজনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, যাতে একে অন্যকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারে। (সুরা জুখরুফ, আয়াত : ৩২)
সামগ্রিক কল্যাণ: ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি এবং সামাজিক স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তার মাধ্যমে সমাজের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করা শরিয়ার অন্যতম লক্ষ্য। সমাজের সবার উন্নতি ও কল্যাণ ছাড়া প্রকৃত শান্তি ও নিরাপত্তা সম্ভব নয়। তাই সবার জন্য সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে জাকাত-সদকা ও পারস্পরিক সহযোগিতার কথা বলে ইসলাম। রাসুল (সা.) বলেন, ‘পারস্পরিক দয়া-অনুগ্রহের ক্ষেত্রে মুমিনরা একই দেহের মতো, যে দেহের একাংশ আহত হলে পুরো দেহ ব্যথিত হয়।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ২৯৭)
স্বচ্ছ লেনদেন: আর্থিক খাতকে সব ধরনের অপচয়, দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা থেকে মুক্ত রাখার নির্দেশনা দেয় ইসলাম। ব্যবসায়-বাণিজ্যে অংশীদারদের লাভ-লোকসানের হিসাবে কোম্পানিগুলোকে স্বচ্ছতার পরিচয় দিতে হবে। মুদারাবা-মুশারাকার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করলে মুনাফা বণ্টনে এবং লোকসানে অংশগ্রহণে দুই পক্ষকেই পরিষ্কার চুক্তি করতে হবে। এর ফলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় এবং ঠকে যাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী কেয়ামতের দিন নবী, সত্যবাদী ও শহীদদের সঙ্গে থাকবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১২০৯)
বৈধ উপার্জন: বৈধভাবেই সম্পদ উপার্জন ও ভোগ করার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। নিয়মবহির্ভূতভাবে কারও সম্পদ গ্রাস করা অন্যায়। আল্লাহ বলেছেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না। তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসায়-বাণিজ্যের মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা। আর তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা কোরো না। (সুরা নিসা, আয়াত : ২৯) তাই কেউ চাইলেই মালিক হওয়ার আগেই অন্যের সম্পদ বিক্রি করতে পারে না। ইসলামি ব্যাংকিংয়ের মুরাবাহা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পণ্যের মালিকানা ব্যাংক নিজেদের হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তারা তা গ্রাহকের হাতে বিক্রি করে দিতে পারে না। লেখক: ইসলামী চিন্তাবিদ ও ব্যাংকার




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com