বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ অপরাহ্ন

রুনু ইতিহাসের অংশ হওয়ায় আনন্দিত পরিবার

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২১

খুবই সাহসি মেয়ে রুনু, করোনা যোদ্ধাও। দেশে করোনা চিকিৎসার শুরুতে ছিলো প্রথম সারিতে। প্রথম করোনার টিকা নিলে দেশে ইতিহাস হয়ে থাকবে। বাড়ি ও পরিবারের গর্ব হবে চিন্তা করেই আমরা ওকে প্রথম টিকা নিতে রাজি হতে বলি। আজ আমাদের পুরো পরিবার খুব খুব খুশি, আনন্দিত।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে বাড়ি গেলে এসব কথা বলছিলেন দেশের প্রথম করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণকারী নারী কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনুর পরিবারের সদস্যরা। রুনু ভেরোনিকা কস্তার বাবার বাড়ি গাজীপুর মহানগরীর পূবাইলের পদ হারবাইদ এলাকায়। বাবা বার্নাড কস্তা পেশায় কৃষক। এক ভাই, এক বোনের মধ্যে রুনু বড়। রুনুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পুরো বাড়িতে সাজসাজ রব। প্রার্থণা সেরে মা বিনীতা কস্তা নতুন পোশাক পরে ঢাকায় মেয়ের বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিন। তিনি, ভাসুরের ছেলে প্লাবন এলিয়াস কস্তা ও ভাসুরের মেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্স পিংকি টিকাদান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবেন।
হাসিমুখে বিনীতা কস্তা জানান ‘সকালেও মেয়ে ফোন করে প্রার্থণা করতে বলেছে। বাড়ির অন্যদেরও প্রার্থনা করতে বলেছে। যাতে কোন বিপদ না হয়। ওর সাহস আছে, ভয় পাবেনা। তারপরও একদম টেনশন না করতে বলেছি। বাড়ির ছোট-বড় সবাই ওর জন্য প্রার্থণা করেছি। মেয়েকে ঈশ্বরের কাছে সঁপে দিয়ে যা ভালো হয়, তাই করতে বলেছি’। রুনু ভেরোনিকা কস্তা প্রাইমারি শেষ করেন বাড়ির পাশের ভাদুন মিশনারী থেকে। পরে মামার বাড়ি থেকে ১৯৯৮ সালে ঢাকার সাভারের সেন্ট যোসেফস হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। এরপর মানুষের সেবায় জীবনব্রতী হয়ে যোগ দেন কুমুদিনী নার্সিং স্কুল ও হাসপাতালে। চার বছরের নার্সিং ডিপ্লোমা শেষে ২০০২ সালে বেরিয়ে আসেন প্রশিক্ষিত নার্স হিসেবে।
ওই বছরই ঢাকার বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে চাকরি জীবন শুরু করেন। সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৩ সালে যোগ দেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে।
২০০৫ সালে বিয়ে করেন পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ধর্মপল্লীর খরবাড়িয়া গ্রামের সলোমন গমেজের ছেলে পবন গমেজকে। পারিবারিক জীবনে সাহসী এ সেবিকা দুই সন্তানের জননী। ১৩ বছর বয়সী মেয়ে প্রথা গমেজ ৯ম শ্রেণির ছাত্রী। আর ছেলে প্রয়াস গমেজের বয়স ৯ বছর। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিরত স্বামী ও সন্তান নিয়ে রুনুর সুখী সংসার।
বাবা কৃষক বানার্ড কস্তা বলেন, ‘মেয়ের ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার। পড়ালেখার বাইরে কিছুই বুঝতো না। খেতে বসলেও এক হাতে বই থাকতো। কোনো পরীক্ষায় প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হয়নি। তার ছিল অভাবের সংসার। খরচ চালাতে না পারায় অবশেষে নার্সিংয়ে যোগ দেয় মেয়ে’।
রুনুর প্রথম টিকা নেওয়ার সুযোগ প্রসঙ্গে বানার্ড কস্তা জানান, ‘গত শুক্রবার সকালে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে তার বাড়িতে বেড়াতে আসে রুনু। শনিবার বিকেলে রুনু তার মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী প্রথা গমেজেকে গান শিখানোর জন্য তার বড় ভাইয়ের ছেলে বাবুল ক্রুসের বাড়িতে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে কুর্মিটোলা হাসপাতালের মেট্রন ফোন করেন রুনুকে। বলেন, “কয়েক জনকে প্রথম টিকা নেওয়ার প্রস্তাব দিলে কেউ রাজী হয়নি। তুমিতো সাহসী, তুমি প্রথম টিকা নাও’। প্রথমে ইতস্তত করলেও অনুষ্ঠানে জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকবেন জেনে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দেন ভাইপো বাবুল ক্রুস। জানার পর আমি তার মা, এমনকি চাচী স্কুলশিক্ষিকা রিয়েলি কস্তা, বউদি শিপ্রা ক্রুস, চাচাত বোন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্স পিংকিসহ বাড়ির সকলেই উৎসাহ দেয়। সবার উৎসাহে রাজি হয়ে যায় ভেরোনিকা। পরে টিকা নেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেন মেট্রনকে’। গর্বিত বাবা বানার্ড মেয়ের সাহসের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘দেশে করোনার সংক্রমনের শুরু দিকে প্রথম চিকিৎসা সেবা শুরু হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। প্রথম চিকিৎসা টিমে সুপারভাইজার ছিল রুনু। জীবনের ভয়ে আমরা তাকে টিমে থাকতে নিষেধ করেছিলাম। উল্টো আমাদের বুঝিয়ে ছিল ‘সেবার শপথ নিয়ে এ পেশায় যোগ দিয়েছি। ভয় পেলে চলবে কি করে’। মেয়ে ডাক্তার হতে পারেনি তাতে কি, নার্স হয়ে মানুষের সেবা করতে পারছে তাই তিনি খুশি ও গর্বিত।- রাইজিংবিডি.কম




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com