শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

সন্তান আল্লাহর দেয়া আমানত

মো: আবদুল গনী শিব্বীর:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২১

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নারী ও পুরুষের স্বামী স্ত্রী সুলভ আচরণের মাধ্যমে মূলত মানবসন্তানের জন্ম প্রক্রিয়ার কার্যক্রম সুচারুরূপে সম্পাদন করেন। প্রত্যেকটি মানবসন্তান পিতার ঔরস ও মায়ের উদর থেকে জন্মগ্রহণ করে। তাবৎ পৃথিবীতে মানবজাতির বংশবিস্তারের এ ধারা চিরকালীন চলমান প্রক্রিয়া। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে যাঞ্চা করে থাকো এবং আত্মীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন (সূরা নিসা : আয়াত: ০১)। তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের থেকে তোমাদের স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রী থেকে পুত্র প্রপৌত্র সৃষ্টি করেছেন। সাথে সাথে তাদেরকে ভালো রিজিকের ব্যবস্থা করছেন (সূরা : আননাহল : আয়াত: ৭২)। সমাজ জীবনে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ প্রত্যেকটি দম্পতি চায় তাদের জীবনে ভালোবাসার ফল তথা সুস্থ সবল সন্তান। যুগে যুগে নবী রাসূল ও মনীষীসহ সব মানুষ সন্তানের জন্য মহান প্রভুর কাছে কতই না আরাধনা করেছিলেন, বিশেষ করে হজরত ইব্রাহিম আ: সন্তানের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছিলেন। কুরআনে এসেছে, ‘হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান করো। সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম (সূরা সাফফাত : আয়াত: ১০০, ১০১)।
মহান আল্লাহ পাক আপন অনুগ্রহ ও স্বীয় ইচ্ছায় যাঁকে পছন্দ করেন শুধু তাকেই সন্তান-সন্ততি দান করেন। পিতা-মাতার স্বপ্নের ধন, কলিজার টুকরো সন্তান-সন্ততি মূলত পিতা-মাতার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত একটি আমানত। সন্তান-সন্ততিদের যেন আল্লাহর বিধান অনুযায়ী লালন পালন করে, আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে এ নির্দেশনা সব পিতা-মাতার প্রতি। এ প্রসঙ্গে ইমাম গাজ্জালী রহ: বলেন, ‘শিশু হচ্ছে মা-বাবার কাছে আল্লাহ প্রদত্ত একটি আমানত। তার পবিত্র আত্মা এখন যেকোনো ছবি ও অঙ্কন থেকে মুক্ত। নির্মল ও উৎকৃষ্ট একটি ও অঙ্কনযোগ্য একটি উর্বর ভূমি। সেখানে যা অঙ্কিত হবে তাই সে গ্রহণ করবে। যে দিকে তাকে আকৃষ্ট করানো হবে সে দিকেই সে ধাবমান হবে। এ প্রসঙ্গে রাসূল সা:-এর একটি হাদিস বেশ প্রণিধানযোগ্য তা হলো, হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের ওপর জন্মগ্রহণ করে। এরপর তার মাতা-পিতা তাকে ইহুদি বা খ্রিষ্টান অথবা অগ্নি উপাসকরূপে রূপান্তরিত করে। যেমন চতুষ্পদ জন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে [জন্মগত] কানকাটা দেখেছ? [বুখারি, হাদিস নং-১৩৮৫]
সন্তানদের প্রয়োজনীয় আদবকায়দা ও উত্তম শিক্ষাদানের ব্যাপারে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে অসংখ্য স্থানে বর্ণনা এসেছে। হাদিস শরিফে রাসূল সা: বলেন, ‘তোমাদের সন্তানদের উত্তমরূপে জ্ঞান দান করো, কেননা তারা তোমাদের পরবর্তী যুগের জন্য সৃষ্ট (মুসলিম)। হাদিস শরিফে রাসূল সা: ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সন্তানের বয়স সাত বছর হলে নামাজ শিক্ষা দাও! ওর বয়স ১০ বছর হলে নামাজের জন্য তাকে প্রহার করো’ (মিশকাত শরিফ)। হজরত কাতাদাহ রাজি : বলেন, ‘অভিভাবক তাদের রক্ষা করবে, তাদের আল্লাহ আনুগত্যের নির্দেশ করবে, তার নাফরমানি থেকে নিবৃত করবে এবং আল্লাহ নির্দেশ পালনের ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব নেবে, আল্লাহর আদেশ পালনের নির্দেশ প্রদান ও তাতে সহযোগিতা করবে। যখনই আল্লাহর কোনো নাফরমানি গোচরে আসবে তাদের তা হতে ফিরিয়ে রাখবে।’ অভিভাবকদের লক্ষ্য করে ইবনে কাসির রহ: বলেন, ‘তাদের সৎ কাজের আদেশ করো, অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখ আর অযথা কাজে ছেড়ে দিও না। তা না হলে কিয়ামত দিবসে অগ্নি তাদের গ্রাস করে ফেলবে।’ শিশুকালের পর কিশোর বয়স থেকেই তাকে নামাজের পাবন্দ করাও। সন্তানদেরকে নৈতিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করা, আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার প্রচেষ্টার ব্যাপারে প্রত্যেক পিতা-মাতা ও অভিভাবককে আল্লাহর কাছে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদিস শরিফে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্বাধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, রাষ্ট্রনেতা তার প্রজাদের সম্পর্কে দায়িত্বশীল আর তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পুরুষ লোক তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন মহিলা তার স্বামীর ঘরের সার্বিক ব্যাপারে দায়িত্বশীলা, তাকে সেটার পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পরিচারক তার মালিকের সম্পদের সংরক্ষক, আর তাকে সেটার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এক কথায় তোমরা সবাই দায়িত্বশীল আর সবাই জিজ্ঞাসিত হবে সে দায়িত্ব সম্পর্কে’ (সহিহ বুখারি : ৭১৩৮; সহিহ মুসলিম : ১৭০৫)। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের দায়িত্বশীল পিতা-মাতা ও অভিভাবক হিসেবে আল্লাহ প্রদত্ত আমানত তথা সন্তান-সন্ততিদের সব ধরনের অবক্ষয় থেকে রক্ষা এবং উত্তম মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। আমীন। লেখক : প্রভাষক, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা, সদর, নোয়াখালী।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com