শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

জীবনানন্দ দাশের ধানসিঁড়ি নদীর সবুজ তীর প্রকৃতিপ্রেমীদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে…

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার নদী ‘ধানসিঁড়ি’। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। ঘুরে আসুন প্রকৃতির লীলাভূমি ধানসিঁড়ি নদীর সবুজ তীরে। ঝালকাঠির রাজাপুরের ধানসিঁড়ি নদীর খননকৃত উর্বর পলি মাটিতে নদীর দুই তীরে নয়নাভিরাম সবুজের সমারোহ। উর্বর পলি মাটিতে বিভিন্ন জাতের সবুজ ফসলের সমারোহ। বিভিন্ন জাতের সবুজ গাছপালার মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলতানে মুখরিত নদীটির দুই তীর। রাতের দৃশ্য আরো মনকাড়া। ডুমুর গাছে জোনাকি পোকার জ্বলজ্বল আলোতে নদীর দুই তীর আলোকিত হয়ে যায়। ধানসিঁড়ি নদীর পানির কুলকুল শব্দ, সবুজ, পাখ-পাখালির কলতান ও বাহারি সবুজ রঙের বিভিন্ন ফসল কার না ভালো লাগে। স্থানীয় গাছিরা নদীর দুই তীরের খেজুর গাছ রস সংগ্রহের জন্য পরিষ্কার করে কেটে খিল লাগিয়ে হাঁড়ি ঝুলিয়ে দিয়েছেন। সেই বাঁশের কঞ্চির খিলে বসে পাখিদের খেজুর গাছের রস খাওয়ার দৃশ্য আরো আকর্ষণীয়। পাখির কিচিরমিচির সুরেলা ডাকে মন হারিয়ে যায় আচেনা দেশে।
জেলা বন বিভাগ সূত্র জানায়, নদীটির ১২ কিলোমিটর তীরজুড়ে ঝালকাঠি সদর ও রাজাপুর উপজেলা বন বিভাগ সারিবদ্ধভাবে রোপণ করেছে রেইনট্রি, মেহগনি, আকাশমনি, শিশু, জারুল, বকাইন, কাঠ বাদাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, জাম্বুরা, আমলকী, বহেরা, অর্জুন, অরহর, ডুমুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। তাছাড়া স্থানীয় চার শতাধিক কৃষকরা নদীটির দুই তীরে শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদে পুরোদমে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। উর্বর পলি মাটিতে যা চাষ করা হয়, তা ফলছে। কৃষকরাও এ উর্বর মাটির জাদুতে মনের আনন্দে চাষ করছেন। নদী তীরে উপজেলা বন বিভাগ ও স্থানীয় কৃষকরা বিভিন্ন সবুজ গাছপালা ও ফসলের চাষ করায় পুরো নদীই সবুজের আবর্তে ডুবে আছে। যেসব সবুজ প্রকৃতিপ্রেমী সবুজকে ভালোবাসেন, তারা এখনই নিজ চোখে দেখে যান চির সবুজ দেশের আসল সবুজ।
মৌসুমি ও স্থায়ী স্থানীয় কৃষকরা নদীর দুই তীরের উর্বর মাটিতে আর্থিক মুনাফা লাভের আশায় চাষ করেছেন আলু, সরিষা, টমেটো, শিম, লাউ, কুমড়া, মুগডাল, লালশাক, মুলা, সুস্বাদু ক্ষীরা ইত্যাদি। কৃষকরা ভালো ফলনে বেশ খুশি।
স্থানীয় একাধিক কৃষকরা জানান, নদীর দুই তীর জুড়ে প্রায় ১২টি গ্রামের চার শতাধিক কৃষক বিভিন্ন প্রকার কৃষি চাষ করেছেন। এর মধ্যে পেশদারি কৃষক রয়েছেন দুই শতাধিক এবং দুই শতাধিক রয়েছেন মৌসুমি কৃষক। কৃষকরা নিজেদের চহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট কৃষি ফসল উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে চড়া মূল্যে বিক্রি করে অধিক মুনফা পেয়ে বেশ খুশি।
পিংরি গ্রামের কৃষক আকব্বর মৃধা জানান, ধানসিঁড়ি নদী তীরে তার প্রায় ৪০ শতাংশ জমি রয়েছে। এতে শালগম, পেপে, ধনিয়া, লালশাক, মুলা, লাউ ও মিষ্টি কুমড়াসহ একাধিক সাথী ফসল চাষ করেছেন। ৪০ শতাংশ জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। তাতে যে ফসল হয়েছে তা দিয়ে নিজের চাহিদা মেটানোর পরে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা পাবেন বলে তিনি আশা করছেন তিনি। একই গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম, রিয়ান সিকদার, দেলোয়ার কারিকর, মোয়াজ্জেম মৃধা ও উজ্জল মৃধা জানান, ধানসিঁড়ি নদীর মাটি খনন করায় পলি মাটিতে কৃষির ফলন ভালো হওয়ায় নদীর দুই পাড়ে এলাকার প্রায় দুই শতাধিক পেশাদার ও দুই শতাধিক মৌসুমি কৃষক দীর্ঘ প্রায় সাত কিলেমিটার জুড়ে কৃষি চাজ করছেন।
এলাকার ফিরোজ আলম মৃধা জানান, খুলনার একটি মিলে চাকরি করতেন। মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকায় এসে ওই স্থানে কৃষি ফলন ভালো দেখে তিনিও কৃষি কাজ করছেন।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, প্রধানমন্ত্রীর ডেলটা প্লান অনুযায়ী ৬৪ জেলার অভ্যন্তরে ছোট নদী খাল খনন প্রকল্পের আওতায় রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের প্রিয় ঝালকাঠি জেলার ধানসিঁড়ি নদীটি ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দুই বছর মেয়াদে দুই কিস্তিতে সাড়ে আট কিলোমিটার পুনঃখননের জন্য প্রায় চার কোটি ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর এ ঐতিহ্যবাহী নদীটির ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান নদীর মোহনা থেকে দেড় কিলোমিটার বাদ দিয়ে খনন কাজ শুরু করে রাজাপুর উপজেলার বাগড়ি বাজারের জাঙ্গারিয়া নদীর মোহনা পর্যন্ত মোট সাড়ে আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে নদীটির চার লাখ ১৬ হাজার ৮০৬.৫ ঘ. মি. মাটি খনন করা হচ্ছে। প্রকল্পের শর্তানুযায়ী, নদীর তলদেশ থেকে মাটি কেটে পাড় থেকে দূরে রাখতে হবে এবং বতর্মান নদীর তীর বা চর/সমতল থেকে নদীর গভীরতা হতে হবে সাড়ে ১৫ ফুট (৪.৭ মিটার) এবং উপরের প্রস্থ প্রায় ৭০ ফুট এবং গভীর/তলদেশে প্রস্থ ২০ ফুট। এ কাজের জন্য মনোনিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঢাকার পুরানা পল্টনের আরএবি-পিসি (প্রা.) লি.-পিটিএসএল ও মৈত্রী (প্রা.) লি. কে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ কার্যাদেশ প্রদান করা হয় । প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীটি এর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরেও প্রায় ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডে রাজাপুর অংশের পিংড়ি-বাগড়ি-বাঁশতলার মোহনা পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার খনন করা হয়েছিল।
রাজাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রিয়াজ উল্লাহ বাহাদুর জানান, ধানসিঁড়ি নদীটির খননকৃত পলিমাটি বেশ উর্বর। শাক সবজি চাষের জন্য একদম উপযুক্ত, যে কারণে বিভিন্ন সবজি ও শাক ব্যাপক হারে ফলছে। কৃষকদের সার ও বীজ প্রণোদনা এবং পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা বন কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন খান জানান, দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের আওতায় ২০১১-১২ অর্থবছরে সিড রিং ৫ কিলোমিটার নদীর দুই তীরজুড়ে সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন গাছ রোপণ করা হয়েছিল। সদর উপজেলার আওতার সাত কিলোমিটারে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়েছে। ফলে দুই তীরজুড়ে নয়নাভিরাম সবুজের সমারোহ বিরাজ করছে। রাজাপুর ও ঝালকাঠির আওতার ১২ কিলোমিটার ছাড়াও নদী তীরের অনেক জমি রয়েছে, যাতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা রোপণ করা যাবে। ধানসিঁড়ির তীরে যাওয়ার জন্য পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে সহজ কয়েকটি পথ হলো রাজাপুর উপজেলার বারৈবাড়ি থেকে পূর্বদিকের রাস্তা দিয়ে সহজেই নদী তীরে পৌঁছা যায়। এ রাস্তায় সামনে রয়েছে নদী খননের ভিত্তিপ্রস্তুর। এ ছাড়া পিংরি স্কুল এলাকা থেকে নদী তীরে যাওয়ার দুটি পথ রয়েছে। কয়েক কদম হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন নদী তীরে। তা ছাড়া উত্তর বাগড়ি, বাঁশতলা, বাগড়ি বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ধানসিঁড়ি নদী তীরে যাওয়া যায়। যখন খুশি ঘুরে আসুন প্রকৃতির লীলাভূমি ধানসিঁড়ি নদীর সবুজ তীর। সূত্র : বাসস




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com