আজ ৮ ফেব্রুয়ারী বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাবন্দী করার তিন বছর পূর্ণ হলো । ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ প্রায় একযুগ ধরে চলতে থাকা বহুল আলোচিত জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হয় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার। সেদিন থেকেই রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরানো কারাগারে ২৫ মাস বন্দি ছিলেন তিনি। এরপর সরকার জামিনে মুক্তি দিলেও কার্যত তিনি গৃহবন্দী বলে বিএনপি’র দাবি। তিন বছরে তার মুক্তির বিষয়ে কতটুকু এগিয়েছেন আইনজীবীরা?
বেগম জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, সরকার বিচারবিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করার কারণেই তার কারাবাস দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এ অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে সরকারপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, যথাসময়ে আইনি পদক্ষেপ না নেয়ায় বেগম জিয়ার এই পরিণতি। বিএনপি’র আইনজীবীরা শুরু থেকেই বেগম জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত করার জন্য সরকারকে দুষছেন। তাদের দাবি, রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই বিচার বিভাগকে ব্যবহার করেছে সরকার। যদিও সরকার সমর্থিত আইনজীবীরা এ অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলছেন, যথাসময়ে আইনি পদক্ষেপ না নেয়ায় বেগম জিয়ার এই পরিণতি।
বেগম জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে এবং রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে তাকে সরিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যে এই মামলাগুলো তার বিরুদ্ধে করা হয়েছে। সঠিক বিচার হলে এই দীর্ঘ সময় যাবত তার কারাগারে থাকার কোনো প্রশ্নই আসত না। তাই আমরা দেখতে পাই, আসলে আদালতের রায়ে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, বিএনপি’র আইনজীবীদের অভিযোগ একেবারেই অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন। দীর্ঘসময় বিচার বিশ্লেষণের পরই আদালত রায় দিয়েছেন। তাদের আইনজীবীরা বিচক্ষণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে এত সময় লাগার কথা না। মামলা পরিচালনার বিভিন্ন সময়ে বেগম জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। যদিও এ অভিযোগ মানতে নারাজ তারা।
বেগম জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদিন বলেন, আমরা তো জেলের তালা ভেঙে বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্ধার করতে পারবো না। এতে সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন। রাজনৈতিক মামলাগুলোতে সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া আজ পর্যন্ত কেউ বের হতে পারেননি। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, এই মামলার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া দুদকের করা। কাজেই এই ধরণের মন্তব্য হাস্যকর। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলা রয়েছে। মুক্তির জন্য এ মুহূর্তে শুধুমাত্র চারটি মামলায় তার জামিন পেতে হবে। দুর্নীতির পৃথক দুটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে গত দুই বছর ধরে নাজিমউদ্দীন রোডের পুরনো কারাগারে বন্দী বেগম খালেদা জিয়া। আইনি প্রক্রিয়া ও তার মুক্তি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে নানা তর্ক। তাই আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি রাজপথের আন্দোলনেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ খুঁজছেন তার আইনজীবীরা।