শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

অধিকাংশ প্রোগ্রামেই ইউজিসি নির্ধারিত মানদণ্ড অনুসরণ করা হচ্ছে না

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

২০১৯ সালে উচ্চশিক্ষার মান নির্ধারণে ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশনস ফ্রেমওয়ার্ক অব বাংলাদেশ তৈরি করে ইউজিসি। আর ২০২০ সালে বাংলাদেশ কোয়ালিফিকেশনস ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। এ দুটি ফ্রেমওয়ার্কের সমন্বয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশনস ফ্রেমওয়ার্ক (বিএনকিউএফ) অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এ ফ্রেমওয়ার্কে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুটি অংশে মোট ১০টি ধাপে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশে ১-৬ ধাপ পর্যন্ত প্রি-ব্যাচেলর এডুকেশন ও দ্বিতীয় অংশে ৭-১০ ধাপ পর্যন্ত উচ্চশিক্ষাকে রাখা হয়েছে।
বিএনকিউএফের দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ উচ্চশিক্ষার ধাপগুলো বাস্তবায়ন করবে বিএসি। উচ্চশিক্ষার চারটি ধাপের মধ্যে সপ্তমটিতে রাখা হয়েছে স্নাতক। এছাড়া অষ্টম ধাপে পোস্টগ্র্যাজুয়েট, নবম ধাপে স্নাতকোত্তর ও দশম ধাপে ডক্টরাল ডিগ্রি রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল পরিচালনার জন্য ফ্রেমওয়ার্কটি খুবই প্রয়োজন ছিল। সম্প্রতি ইউজিসির তৈরি করা ফ্রেমওয়ার্কটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল মূলত ফ্রেমওয়ার্কের দ্বিতীয় অংশ নিয়ে কাজ করবে। ফ্রেমওয়ার্কে বেঁধে দেয়া মানদণ্ড অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মান নির্ধারণ ও স্বীকৃতি দেবে। ফ্রেমওয়ার্কে অ্যাক্রেডিটেশন পাওয়ার জন্য ডিগ্রিভিত্তিক ন্যূনতম ক্রেডিট সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সপ্তম ধাপের স্নাতক অংশকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন বছরের স্নাতক ডিগ্রির জন্য ন্যূনতম ১২০, স্নাতক সম্মান বা চার বছরের স্নাতক ডিগ্রির জন্য ১৪০ ও পাঁচ বছরের স্নাতক ডিগ্রির জন্য ১৬০ ক্রেডিট প্রয়োজন হবে। অষ্টম ধাপে দুই ধরনের ডিগ্রির কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমার জন্য ন্যূনতম ৪০ ও পোস্টগ্র্যাজুয়েট সার্টিফিকেটের জন্য ৩০ ক্রেডিট লাগবে। নবম ধাপে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির তিনটি ভাগের মধ্যে কোর্সওয়ার্কের জন্য ৪০ ক্রেডিট ও মিক্সড মুডের ক্ষেত্রে ২০ ক্রেডিটের সঙ্গে থাকতে হবে নিবন্ধ। তবে গবেষণার ক্ষেত্রে কোনো ক্রেডিটের শর্ত রাখা হয়নি। দশম ধাপে পিএইচডির ক্ষেত্রে মিক্সড মুডে ৩০ ক্রেডিটের সঙ্গে থিসিসের শর্ত রাখা হলেও গবেষণাভিত্তিক ডিগ্রির ক্ষেত্রে ক্রেডিটের কোনো শর্ত রাখা হয়নি।
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তাদের প্রোগ্রামের স্বীকৃতি দিতে সম্প্রতি একটি ফ্রেমওয়ার্ক অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তৈরি এ ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল (বিএসি)। এতে বিভিন্ন ডিগ্রির অ্যাক্রেডিটেশনের জন্য ন্যূনতম যে ক্রেডিট নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, তা দেশে প্রচলিত উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা থেকে বেশি। ফলে অ্যাক্রেডিটেশন পেতে অধিকাংশ প্রোগ্রামের ক্রেডিট বাড়াতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকাংশ প্রোগ্রামেই এ মানদণ্ড- অনুসরণ করা হয় না। বিশেষ করে স্নাতক প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ বিভাগই ক্রেডিটের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে স্নাতক পর্যায়ে ২৩টি প্রোগ্রাম রয়েছে। এর মধ্যে সবক’টিই চার বছরের অধিক সময়ের ডিগ্রি। সে হিসেবে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের স্বীকৃতি পেতে নর্থ সাউথের স্নাতক পর্যায়ের সব প্রোগ্রামেরই ক্রেডিট সংখ্যা ন্যূনতম ১৪০ থাকতে হবে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়টির স্নাতক পর্যায়ের ২৩টি প্রোগ্রামের মধ্যে মাত্র তিনটি প্রোগ্রামের ক্রেডিট সংখ্যা ১৪০-এর ওপরে রয়েছে। বাকি সব প্রোগ্রামের ক্রেডিট সংখ্যা ১২০ থেকে ১৩০-এর মধ্যে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রোগ্রামভেদে ক্রেডিট সংখ্যায় পার্থক্য রয়েছে। আর্কিটেকচার ও ফার্মেসির মতো প্রোগ্রামগুলোতে ক্রেডিট সংখ্যা অনেক বেশি। তবে বিবিএ ও সোস্যাল সায়েন্সের প্রোগ্রামগুলোয় আমরা ন্যূনতম ১২০ ক্রেডিট রেখেছি। এখন সরকার যদি চার বছরের স্নাতকের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১৪০ নির্ধারণ করে, তাহলে তো আমাদের সেটি পূর্ণ করতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পড়ার খরচ ও সময় বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, প্রোগ্রামের কোর্স নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপীই তিনটি বিষয়ে জোর দেয়া হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে জেনারেল এডুকেশন, দ্বিতীয়টি সাবজেক্ট মেজর ও আরেকটি হলো ওপেন ইলেকটিভস। এখন কোন ক্ষেত্রে কেমন কোর্স নিতে হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা থাকতে পারে। তবে ন্যূনতম মানদণ্ড ১৪০ ক্রেডিট নির্ধারণ করলে, অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় কোর্সও অন্তর্ভুক্ত হওয়ার একটি ঝুঁকি তৈরি হবে।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, চার বছর বা তার বেশি সময়ের স্নাতক পর্যায়ের ১৬টি প্রোগ্রামের মধ্যে মাত্র দুটির ক্রেডিট ১৪০-এর বেশি। বাকি অ্যাক্রেডিটেশন পেতে বাকি ১৪টি প্রোগ্রামেই ক্রেডিট সংখ্যা বাড়াতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে। একইভাবে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ প্রোগ্রামের ক্রেডিট সংখ্যা ন্যাশনাল ফ্রেমওয়ার্কের মানদণ্ডের নিচে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খোঁজ নিয়েও একই ধরনের চিত্র পাওয়া গেছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোর ক্রেডিট সংখ্যা ফ্রেমওয়ার্কের মানদণ্ডের মধ্যে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ বিভাগের সিলেবাস বা ক্রেডিট সংখ্যার বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য দেয়া হয়নি। তবে কয়েকটি বিভাগের ওয়েব পেজে ক্রেডিটের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে স্নাতক পর্যায়ে ক্রেডিট সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ১২৮। সে হিসেবে বিএসি অ্যাক্রেডিটেশন পেতে এ বিভাগটিকেও ক্রেডিট সংখ্যা বাড়াতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের পূর্ণকালীন সদস্য অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী বলেন, ফ্রেমওয়ার্কে ডিগ্রিভিত্তিক যে ক্রেডিট সংখ্যার কথা বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবশ্যই সে মানদণ্ড নিশ্চিত করেই অ্যাক্রেডিটেশন সনদ নিতে হবে। ফ্রেমওয়ার্কে লার্নিং আউটকাম, লিডারশিপ, জীবনব্যাপী শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিতে অনেক বেশি জোর দেয়া হয়েছে। এছাড়া সব প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার বিষয়গুলো পড়ানোর বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কারণ আমরা ভালো গ্র্যাজুয়েটের আগে ভালো মানুষ তৈরিও নিশ্চিত করতে চাই।
এদিকে ক্রেডিট আওয়ারের সংজ্ঞাও ঠিক করে দেয়া হয়েছে ফ্রেমওয়ার্কে। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, লেকচার, টিউটোরিয়াল ও সেমিনারের ক্ষেত্রে এক ক্রেডিট বলতে ১৪ সপ্তাহের সেমিস্টারে প্রতি সপ্তাহে ১ ঘণ্টার ফেস টু ফেস পাঠদানকে বোঝায়। আর ল্যাব, স্টুডিও বা ক্লিনিক্যাল কাজের ক্ষেত্রে এক ক্রেডিট বলতে ১৪ সপ্তাহের সেমিস্টারে প্রতি সপ্তাহে দেড় ঘণ্টার ফেস টু ফেস পাঠদানকে বোঝায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর নির্দেশনার আলোকে ২০১৭ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল। জাতীয় শিক্ষা নীতিতেও এ ধরনের একটি বডির কথা বলা হয়েছে। ফ্রেমওয়ার্কের ভিত্তিতে শিগগিরই অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম শুরু করার কথা জানিয়েছেন বিএসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ফ্রেমওয়ার্কের আলোকে একটি বিধিমালা ও ম্যানুয়াল প্রণয়নের কাজ চলমান। এ বিষয়গুলো সম্পাদন করে মাস দুয়েকের মধ্যেই আমরা অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম শুরু করতে পারব। এছাড়া কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জনবল নিয়োগের বিষয়গুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ক্রেডিট নির্ধারণের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা জেনারেল এডুকেশনের বিষয়টি বাধ্যতামূলক রেখেছি। এজন্য ক্রেডিট সংখ্যাও একটু বেশি রাখা হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com