আইএসপি লাইসেন্স নিয়ে অবৈধ ভিওআইপি: দুই কোম্পানির ২৯ কোটি টাকা জরিমানাআইএসপি লাইসেন্স নিয়ে অবৈধ ভিওআইপি: দুই কোম্পানির ২৯ কোটি টাকা জরিমানা ইন্টারনেট ব্যবসার লাইসেন্স (আইএসপি) নিয়ে অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল) করেছে আইডিয়া নেটওয়ার্ক অ্যান্ড কমিউনিকেশনস লিমিটেড ও ডিজিটাল কানেক্টিভিটি লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। টেলিযোগযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) অভিযোগ তদন্ত করে প্রমাণ পেয়েছে। শাস্তি হিসেবে দুটি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ২৯ কোটি টাকা জরিমানা করেছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও পিডিআর অ্যাক্টে মামলা দায়ের এবং লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিটিআরসির সর্বশেষ (২৪৮তম) কমিশন বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির কমিশনার (লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং) আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন বলেন, ‘দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। যেকোনও সময়ই মামলা দায়ের করা হবে।’
জানা গেছে, অপারেটর দুটির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে দুটি প্রতিষ্ঠানই অবৈধ কলটার্মিনেশনের সঙ্গে জড়িত। যদিও দুটি অপারেটরেরই কোনও আইজিডাব্লিউ (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে) লাইসেন্স নেই। বিটিআরসি ইঅ্যান্ডও বিভাগের মাধ্যমে বিভিন্ন আইসিএক্স ও এএনএস অপারেটরের কাছ থেকে ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময়ের কল টার্মিনেশনের তথ্য যাচাই করা হয়। এতে দেখা যায় আইডিয়া নেটওয়ার্কস অ্যান্ড কমিউনিকেশনস লিমিটেড নামের আইপিটিএসপি প্রতিষ্ঠানটি অবৈধ ইন্টারন্যাশনাল ইনকামিং কলটার্মিনেশনের মাধ্যমে সর্বমোট রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি ৮৩ লাখ ৮ হাজার ৫১৭ টাকা। অন্যদিকে, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি লিমিটেডের এই ক্ষতির পরিমাণ ৮ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৫৯৩ টাকা। এই প্রতিষ্ঠানটিরও কোনও আইজিডব্লিউ লাইসেন্স নেই।
অভিযোগের নথিতে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ২২ মে অনুষ্ঠিত কমিশনের ২২৭তম বৈঠকে প্রতিষ্ঠান দুটি যে অবৈধ ভিওআইপির মাধ্যমে প্রায় ২৯ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে তা সঠিক বলে কমিশনের কাছে প্রমাণিত হয়। তাই একই পরিমাণ অর্থ জরিমানার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জরিমানা আদায়ের জন্য একই বছরের ২৪ জুন প্রতিষ্ঠান দুটিকে কমিশন থেকে চিঠি পাঠানো হয়। এর আগে কমিশনের ইঅ্যান্ডও বিভাগ কোম্পানি দুটির কল মনিটরিংয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান দুটির অপারেশনাল কার্যক্রম উপস্থাপন করে। তাতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান দুটির ইন্ডিভিজুয়াল ও করপোরেট গ্রাহক সবাই গ্রামীণফোন ও রবিতে কল পরিচালিত করে, অন্য অপারেটরের গ্রাহকদের কাছে কোনও কল পরিচালিত হয় না। যা অস্বাভাবিক, সিডি এবং অফনেট আউটকামিং কল মিনিটের অনুপাত অনেক বেশি, যার মাধ্যমে অস্বাভাবিক গোয়িং কল ও ইন-কল প্যাটার্ন দেখা যায়, ই-ওয়ান লেভেল ইউটিলাইজেশন সর্বোচ্চ, প্রতিষ্ঠান দুটির ইন্ডিভিজুয়াল ও করপোরেট গ্রাহক বেশি হওয়া সত্ত্বেও অফিস সময় শেষে তাদের কলের পরিমাণ ও এসিডি বেশি এবং কমিশনে দাখিল করা গ্রামীণফোন ও রবির গ্রাহকের সংখ্যা এবং প্রতিষ্ঠান দুটোর সংখ্যায় অমিল রয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি থেকে তথ্য সংগ্রহ ও এসব বিষয় যাচাই বাছাইয়ের জন্য কমিশন একটি কমিটি গঠন (১৮ জানুয়ারি, ২০১৮) করে দেয়। কমিশন তাদের পরিদর্শন শেষে একই বছরের ২২ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিষ্ঠান দুটি অবৈধ ভিওআইপির সঙ্গে জড়িত থাকায় ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কমিশনাররা (ইঅ্যান্ডও, এসএস ও এলএল) দুটি প্রতিষ্ঠানেরই সংযোগের ক্যাপাসিটি ৯৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন-২০০১ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন।
বিটিআরসি প্রতিষ্ঠান দুটিকে জরিমানার পত্র দিলে তারা জরিমানা ধার্য করার ভিত্তি, কারণ এবং তথ্য উপাত্ত জানতে চেয়ে কমিশন বরাবর চিঠি দেয়। বিটিআরসি সেই চিঠির জবাব (২২৯তম কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্তের আলোকে) দেওয়ার আগেই প্রতিষ্ঠান দুটি হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করে। বিষয়টি নিম্ন আদালতেও গড়ায়। এখনও বিষয়টির সুরাহা হয়নি।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান দুটির আইপিটিএসপি-নেওশনওয়াইড লাইসেন্স বাতিল, ওই সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে আইনানুগভাবে লাইসেন্স বাতিলেরর জন্য সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণ, অবৈধ কল টার্মিনেশনের দায়ে প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা এবং জরিমানা আদায়ে প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে পিডিআর অ্যাক্ট, ১৯১৩-এ মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়।
জানা গেছে, কমিশনের ২৪৮তম বৈঠকে আইডিয়া নেটওয়ার্কস অ্যান্ড কমিউনিকেশনস লিমিটেড ও ডিজিটাল কানেক্টিভিটি লিমিটেডের বিরুদ্ধে অবৈধ কল টার্মিনেশনের দায়ে ফৌজদারি মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে ধার্য করা জরিমানা আদায়ে পিডিআর অ্যাক্ট, ১৯১৩ -এর অধিনে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।