প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম অ্যাপভিত্তিক বাইসাইকেল সেবা ‘জোবাইক’ আবারও ডানা মেলার চেষ্টা করছে। করোনা মহামারির লকডাউনের সময় যখন সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলো, সেই সময় জোবাইকের সেবাও বন্ধ হয়ে যায়। দেশে লকডাউন কেটে গেলে সবকিছু প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলেও জোবাইকের কোনও হদিস ছিল না। অবশেষে জানা গেছে, রাজধানীর গুলশান এলাকায় স্বল্প পরিসরে শুরু হয়েছে জোবাইকের সেবা। গুলশান, নিকেতন ও বারিধারায় দেখা যাচ্ছে জোবাইক সাইকেলের ডানা।
২০১৮ সালের ১৮ জুন মাসে পর্যটন শহর কক্সবাজারে যাত্রা শুরু করে বাইসাইকেল শেয়ারিং অ্যাপ জোবাইক। শুরুতে বেশ সাড়া পড়ে যায়। পরবর্তীতে উদ্যোক্তারা জোবাইক চালু করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। এরপর একে একে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয় জোবাইক। ঢাকার ভেতরে এই সেবা চালু হয় মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায়। জোবাইক সাড়া জাগালেও বরাবরই চাহিদার তুলনায় বাইসাইকেলের সংখ্যা কম ছিল উদ্যোক্তাদের। যান্ত্রিক সমস্যাও ছিল কিছু। ২০১৯ সালের নভেম্বরের ৩ ও ৪ তারিখÍদুই দিন কক্সবাজারের কলাতলী পয়েন্টে জোবাইকের সাইকেল স্ট্যান্ডে গিয়ে চালানোর মতো কোনও সাইকেল পাওয়া যায়নি। সাইকেল থাকলেও তা ছিল অচল। দুই-একটি সাইকেলের সামনের বাস্কেট ছিল না। স্ট্যান্ড ছিল ভাঙা। তখন উদ্যোক্তারা জানিয়েছিলেন সাইকেল সংকটের কথা। জানা যায়, ২০টি সাইকেল নিয়ে কক্সবাজারে জোবাইক যাত্রা শুরু করলেও পরে তা ২৫টিতে উন্নীত হয়। তবে ধীরে ধীরে সাইকেলগুলো নষ্ট হতে থাকে।
এই প্রতিবেদক কিছু দিন ধরে জোবাইকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় যে ভবনে জোবাইকের অফিস, সেখানে একাধিকবার গিয়েও অফিস বন্ধ পাওয়া যায়। ভবনের কেয়ারটেকার জানান, অফিস অনেক দিন ধরেই বন্ধ। বন্ধের কারণ হিসেবে করোনা মহামারির উল্লেখ করেন তিনি। সাইকেলগুলো কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু আছে হয়তো অন্য কোথাও।’ পরে জানা গেলো, ডিওএইচএস এলাকায় জোবাইক চালানোর অনুমোদন নেই। জোবাইক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বারবার ফোন করে, এমনকি মেসেজ (এসএমএস) পাঠিয়েও দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়।
অবশেষে পাওয়া যায় জোবাইকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মেহেদী রেজাকে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, করোনার সময় তাদের জোবাইক সেবা বন্ধ হয়ে যায়। জোবাইককে ক্যাম্পাসভিত্তিক সেবা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘করোনার সময় ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের সেবাও বন্ধ করতে হয়। সাইকেলগুলো ক্যাম্পাসে আটকা পড়ে নষ্ট হয়েছে।’ তার আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জোবাইক সেবা বিভিন্ন সমস্যার কারণে বন্ধ করতে হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে তিনি আশাবাদী, ক্যাম্পাস খুললেই আবারও এই সেবা চালু করবেন।
মেহেদী রেজা বলেন, ‘আমরা স্বল্প পরিসরে গুলশান এলাকায় জোবাইকের সেবা চালু করেছি। ১০০টি সাইকেল গুলশান, বারিধারা ও নিকেতনের জন্য কিছুই নয়। তবু আমরা চেষ্টা করছি। ওইসব এলাকায় আমাদের ২২টি সাইকেল স্ট্যান্ড আছে।’ তারপরও চাহিদার তুলনায় তাদের সাইকেলের সংখ্যা একেবারে অপ্রতুল বলে তিনি স্বীকার করেন।
তিনি জানান, সরকারের আইসিটি বিভাগ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র জোবাইককে সাপোর্ট করছেন। শিগগিরই তারা রাজধানীর উত্তরায় জোবাইকের সেবা বিস্তৃত করবেন বলে জানান। এরপর পর্যায়ক্রমে মিরপুর ও মোহাম্মদপুরে জোবাইক চালু করবেন।
মিরপুর ডিওএইচএসে জোবাইক চালুর বিষয়ে এর প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘মিরপুর ডিওএইচএসের পরিষদে পরিবর্তন এসেছে। আগের অনুমোদন বাতিল হয়ে যাওয়ায় নতুন করে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।’ তারিখ বলতে না পারলেও মেহেদী রেজা জানান, শিগগিরই সেখানে জোবাইক চালু হবে। বর্তমানে তারা বাইসাইকেল সংকটে ভুগছেন। করোনাকালে তাদের অনেক সাইকেল নষ্ট হয়ে গেছে, কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। এজন্য সংকটটা আরও বেশি। আগে চীন থেকে এক মাসের মধ্যে সাইকেল আনতে পারলেও বর্তমানে দুই মাসের বেশি সময় লাগছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জোবাইক ফান্ড সংকটেও ভুগছে। করোনাকালে প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মী ছাঁটাই করে পরিসর একেবারে ছোট করে ফেলা হয়েছে। এখন নতুন অ্যাপ আসছে জোবাইকের। শিগগিরই নতুন ভার্সনের অ্যাপ চালু করা হবে। অ্যান্ড্রয়েডে আগে আসবে, পরবর্তীতে আসবে আইওএসে।-বাংলাট্রিবিউন