গাজীপুরের কাপাসিয়া সদরের বানার হাওলা মৌজায় জবর দখলকারী সন্ত্রাসী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভিটেছাড়া ভীতসন্ত্রস্ত পরিবার ১৮ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার দুপুরে কাপাসিয়া প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে সংবাদ সম্মেলণ করেছেন। সংবাদ সম্মেলণে ভুক্তভোগি মাহবুব হোসেন ইরানের স্ত্রী এমিলি আক্তার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। পরে স্থানীয় সাংবাদিকরা সরেজমিনের উচ্ছেদ ভিটা পরিদর্শণে গেলে অভিযুক্ত নজরুল বাহিনী তাদের উপর চাড়াও হয়। খবর পেয়ে ওইদিন বিকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ ইসমত আরা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন। সংবাদ সম্মেলণে লিখিত বক্তব্যে জানা যায়, উপজেলা সদরের বানার হাওলা মৌজার স্থায়ী বাসিন্দা শারীরিক ভাবে অসুস্থ্য মাহবুব হোসেন ইরান(৪০) তার মৃত পিতা আব্দুল মালেক ভূঁইয়া ও মৃত মাতা মল্লিকা নেছার বানার হাওলা ও খোদাদিয়া মৌজায় ৩৩৫ রেকর্ডমূলে মালিক হন। ২০১৫ সালে পিতা এবং ২০১৮ সালে মাতার মৃত্যুর পূর্ব থেকেই প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম কোন প্রকার কারন ছাড়াই তাদের সহজ সরলতার সুযোগে বাড়িভিটার জায়গা-জমি থেকে বেদখল করতে শুরু করে। ২০১২ সালে তারা তাদের ভোগদখলীয় সম্পত্তিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য ইট, বালি, সিমেন্ট, রড সহ বিভিন্ন সামগ্রী এনে কাজ শুরু করলে সন্ত্রাসী নজরুল দলবল নিয়ে বাধা প্রদান করে এবং সকল নির্মাণ সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গণ্যমান্য লোকজনকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি বলে অভিযোগ করেন। পরে ইরানের মাতা মল্লিকা নেছা বাদী হয়ে গাজীপুরের বিজ্ঞ আদালতে এজমালি সম্পত্তি বন্টনের মামলা (নং-৩৪৪/১৬) দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর নজরুল ইসলাম গং তাদের উপর আরো বেশী ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের বাড়ি ছাড়া করে। ফলে নিরুপায় হয়ে তারা পাশর্^বর্তী রাউৎকোনা গ্রামের আতœীয়ের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। মল্লিকা নেছা তার একমাত্র পুত্র সন্তান মাহবুব হোসেন ইরানের জীবন রক্ষায় তাকে মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দেন। এরই মাঝে নিজ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়ে বিনা চিকিৎসায় অনাহারে থেকে ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল মল্লিকা নেছা মারা গেলে সন্ত্রাসী নজরুল বাহিনী তার কবর দিতেও বাধা প্রদান করে। মায়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে একমাত্র সন্তান ইরান দেশে ফিরে আসে। বর্তমানে সে নজরুল বাহিনীর অব্যাহত অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে তার স্ত্রী ও দুই কন্যা সহ মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারী এমিলি আক্তার বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (নং-৭৭৪) দায়ের করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম (৫০) মৃত মল্লিকা নেছার নামে বানার হাওলা ও খোদাদিয়া মৌজার রেকর্ডিয় ৬৬৩, ৬৬৫, ৬৬৬, ৬৬৭, ৬৬৮, ৬৬৯, ৬৬৭০, ৬৫৯, ৯১৮ নং দাগের তাদের ভোগ দখলীয় জায়গা-জমি থেকে বেদখলের জন্য পূর্ব থেকে নানাবিধ শত্রুতা পোষণ করে আসছে। আদালতে মামলা চলমান এবং আদালত সকল সম্পত্তিতে স্থিতাবস্থা জারী করেছেন। আগামী ২৭ জুন পর্যন্ত আদালতের নিষেধাজ্ঞা বিদ্যমান থাকার পরও গত ১২ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে নজরুল গংরা তাদের হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি বানাতে শুরু করে। ইতিপূর্বে ১২ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের নিমার্ণ সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। ৭০ বছরের অতিপুরনো ৭ লাখ টাকা মূল্যের দুইটি বড় মাটির ঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। পর্যায়ক্রমে অতিপুরনো ৫ লাখ টাকা মূল্যের সেগুন, আম, কাঁঠাল, লিচু, নিমগাছ সহ বাঁশঝাড় কেটে নিয়ে যায়। রাতের আধারে জমি থেকে প্রায় আড়াই লাখ টাকা মূল্যের মাটি কেটে বিক্রি করে দেয়। এছাড়া জোরপূর্বক ঘর নিমার্ণ করে ভাড়া দিয়ে অর্থ আতœসাৎ করছে। এতে ভুক্তভোগিদের ৫০ লাখ টাকার বেশী ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। সংবাদ সম্মেলণে মাহবুব হোসেন ইরান ছাড়া প্রতিবেশী জহিরুল ইসলাম শামীম, মহসীন হোসেন চন্দন, রিপন মিয়া সহ তার স্ত্রী ও কন্যারা উপস্থিত ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা কান্নাজড়িত কন্ঠে সংসাদ সম্মেলণের সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় প্রশাসনসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। ইতিপূর্বে গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপারের নিকট আবেদনের প্রেক্ষিতে শুক্রবার বিকালে উভয় পক্ষকে থানায় হাজির হওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুক পেইজে ছড়িয়ে পড়লে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ ইসমত আরা বৃহস্পতিবার বিকালেই সরেজমিনে উচ্ছেদ ভিটা পরিদর্শণ করে সত্যতা পান। উভয় পক্ষকে আগামী মঙ্গলবার সকালে তাঁর দপ্তরে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।