ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নীলক্ষেত মোড় অবরোধের কারণে রাজধানী জুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা। চলমান পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
অবরোধ কর্মসূচির কারণে আজিমপুর থেকে সায়েন্স ল্যাব মোড় পর্যন্ত রাস্তায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যার ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। আজিমপুর হয়ে ঘুরে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া ফার্মগেট, শাহবাগ, সেগুনবাগিচা, তোপখানা থেকে মতিঝিল, বিজয় সরণি, মহাখালীসহ নগরের বেশ কয়েকটি এলাকায় তীব্র যানজট দেখা যায়। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ধানমন্ডির অফিসগামী যাত্রী নাদিয়া রিনথী। তিনি বলেন, নীলক্ষেত মোড় অবরোধের কারণে রাজধানী জুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে সঠিক সময়ে অফিস পৌঁছাতে পারছি না। এদিকে মিরপুরের বাসিন্দা ইমরুল নূরের একই অভিযোগ। তিনি বলেন, অফিস ধানমন্ডি, কিন্তু যনজটের কারেণ সঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারছি না। এর জন্য অফিসে জবাদিহী করতে হবে। সমস্যা হবে।
তবে এ সমস্যার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা জানান, আগামী কয়েক দিনে কলেজগুলোর কিছু পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিলো। সেগুলোও স্থগিত করা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হবে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। তারা বলেন, আমাদের মাত্র একটা পরীক্ষা বাকি আছে। এখন বলছে পরীক্ষা হবে না। এত দিন কি করোনা ছিল না? আমাদের এই একটা পরীক্ষা শেষ হলে চকরির পরীক্ষায় অংশ নিতে পারব। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাই। আমাদের পরীক্ষা অবশ্যই নিতে হবে।
ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী ওরিন বলেন, আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে পুরো ঢাকায় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের বৈঠকে অধিভুক্ত কলেজগুলোর সব পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সন্ধ্যায় নীলক্ষেত মোড়ে প্রথমে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্ত হলে শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেন।
দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজের চলমান পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদ ও হল ক্যাম্পাস খুলে দেয়ার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে নীলক্ষেত মোড়ে কয়েক শ’ শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। ফলে নিউমার্কেট-আজিমপুর সড়কের উভয়পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বিশ্বিবিদ্যালয় প্রশাসনের খামখেয়ালি মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ এই সিদ্ধান্ত। অচিরেই পরীক্ষার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে চলমান পরীক্ষা শেষ করার দাবি জানান তারা। গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাত কলেজের চলমানসহ সব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে। এরপরই রাত ৮টা থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেন। পরে রাত সোয়া ১০টার দিকে তারা চলে যান। আজ সকাল থেকে তারা আবার অবস্থান নেন। গত মঙ্গলবার সাত কলেজের অধ্যক্ষ ও সংশ্লিষ্ট তিনজন ডিনকে নিয়ে সভা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) এ এস এস মাকসুদ কামাল। তিনি সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এই সভাতেই পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে গত সোমবার অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, রোজার ঈদের পর আগামী ২৪ মে থেকে দেশের সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। তার আগে ১৭ মে আবাসিক হলগুলো খুলবে। খোলার আগে কোনো পরীক্ষা হবে না। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা ও হল খোলার ঘোষণা দিয়েছিল, সেই সিদ্ধান্তও বাতিল হবে। অবশ্য অনলাইনে ক্লাস চলবে। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এই কলেজগুলোয় মোট শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ।