বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৪ অপরাহ্ন

প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্রদল-পুলিশ সংঘর্ষ, লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল নিক্ষেপ

ইকবাল হোসেন:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্রদলের সমাবেশকে ঘিরে পুলিশ ও সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। ছাত্রদল নেতাকর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। গতকাল রোববার সকাল এগারোটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, ছাত্রদলের সহসভাপতি মামুন খান সহ অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

জানা গেছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর খেতাব বাতিলের প্রতিবাদে এ সমাবেশ করার কথা ছিল ছাত্রদলের। কিন্তু সমাবেশে পুলিশের অনুমতি ছিল না। সমাবেশ শুরুর আগেই প্রেস ক্লাবের সামনে এবং বিভন্ন মোড়ে মোড়ে বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নেয়। আর সমাবেশে আসা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রেস ক্লাবের ভেতরে অবস্থান নেয়।
বেলা এগারোটার দিকে প্রেস ক্লাবের মূল গেট দিয়ে নেতাকর্মীরা বের হওয়ার চেষ্টা করলে এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ দলটির নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করে এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।
ডিএমপির রমনা জোনের উপপুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আমরা আগে থেকেই জানতাম প্রেস ক্লাবের সামনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জড়ো হবে। অনুমতি না নিয়ে সমাবেশ করতে চাইলে আমরা তাদের বাধা দেই। কিন্তু তারা বাধা উপেক্ষা করে রাস্তায় নামতে চাইলে টিয়ার শেল ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেই।
ছাত্রদল সাংগঠনিকসহ আহত ৩৫: জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সহ-সভাপতি মামুন খান, সহ-সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, কে এম সাখওয়াত হোসেন, আক্তার হোসেন। আরো আহত হয়েছেন জবি ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসলাম, গাজীপুর মহানগরীর সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজিব হল ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সালেহ মো: আদনান, জবি ছাত্রনেতা মোস্তাফিজুর রহমান রুমি, ঢাকা মহানগর পূর্ব ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মারজুক আলামিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ঢাকা জেলা ছাত্রদল নেতা রাসেল খান রিপন, তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল নেতা মো: বেলাল হোসেন খানসহ অর্ধশত নেতাকর্মী।
উল্লেখ্য, রোববার সকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম) খেতাব বাতিলের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্রদলের উদ্যোগে পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। এ সময় পুলিশ প্রতিবাদ সমাবেশে বাধা দিলে বেলা ১১টার দিকে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। অপরদিকে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ করে ব্যাপক ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় বিএনপি কোনো অনুমিত না নিয়ে সমাবেশ করতে চাইলে তাদেরকে সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি। অপরদিকে বিএনপি বলছে প্রেসক্লাবের সামনে এ ধরণের সমাবেশ করতে কোনো অনুমতি লাগে না। ছাত্রদলের এই প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। এ রিপোর্ট লেখার সময় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি-ছাত্রদল নেতাকর্মীদের কেউ নেই। পুরো এলাকা এখন পুলিশের দখলে। তারা পল্টন মোড় থেকে হাইকোর্ট মোড় পর্যন্ত দখলে রেখেছে। এ ঘটনায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ একাধিক পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।
শাহবাগ থানার পুলিশ কর্মকর্তা আবুল বাশার বলেন, সংঘর্ষে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল ছোড়ে পুলিশ। এখন প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
জানা গেছে, অনুমতি ছাড়াই প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শুরু করে ছাত্রদল। সকাল ১০টার দিক থেকে ছাত্রদল ও বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাব এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে তারা রাস্তায় নামলে বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। এতে নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। তারা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। ভাঙচুর করেন গাড়ি ও আশপাশের ভবন। পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবে ঢুকে পড়লে প্রেসক্লাবের গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর পুলিশ প্রেসক্লাব চত্বরে ঢুকে পড়লেও সেখানে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাওয়া যায়নি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে আনে।
ডিএমপির রমনা জোনের উপপুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘মেট্রোপলিটন এলাকায় কর্মসূচি পালন করতে হলে পুলিশ কমিশনারের অনুমতি লাগে। তারা অনুমতি ছাড়া এখানে এসেছিল। তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়েন, যেটা পূর্বপরিকল্পিত মনে হয়েছে। পুলিশের পাঁচ-সাতজন আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী তাদের হেফাজতে আছেন। তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com