শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

জ্ঞান অনুযায়ী আমল না করার পরিণাম

ড. মো: আবদুল কাদের:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২ মার্চ, ২০২১

জ্ঞান ও আমল একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জ্ঞান ছাড়া আমল যেমনি বিশুদ্ধ হয় না, তদ্রুপ আমল ছাড়া জ্ঞানের কোনো সফলতা নেই। মানুষের প্রতি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত হলো জ্ঞান ও বিবেক বুদ্ধি। কেবল জ্ঞানের জন্য জ্ঞান অথবা শিল্পের জন্য শিল্প এসব ধারণা ইসলামে নেই। রাসূল সা:-এর কাছে কোনো ওহি অবতীর্ণ হলে তিনি নিজে ও সাহাবারা বাস্তবায়ন করতেন। তার পর অন্যের কাছে তা পৌঁছে দিতেন। মানুষের প্রকৃত মুমিন হওয়া নির্ভর করে ঈমান ও আকিদার জ্ঞান অর্জনের ওপর। আর তা হলো আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করা এবং শরিয়ত নির্দেশিত পন্থায় যাবতীয় ইবাদত সম্পাদন করা। আর এ দু’টিই হচ্ছে তাওহিদের মর্মবাণী। এ কারণেই ইমাম বুখারি রহ: ইলমকে আমলের আগে প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন এবং এই শিরোনামে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন।
ইলম বান্দার প্রতি আল্লাহর প্রথম উপহার যা তিনি আদম আ:-কে সৃষ্টি করে তাকে সব বিষয়ের জ্ঞান শিক্ষা দেন এবং ইলমকেই ফেরেশতাদের ওপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হিসেবে সাব্যস্ত করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনি আদমকে নামগুলো সব শিক্ষা দিলেন তার পর তা ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, ‘তোমরা আমাকে এগুলোর নাম জানাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সূরা বাকারা : ৩১) অন্য আয়াতে এসেছে, ‘মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন।’ (সূরা রহমান : ৩-৪)
ইসলামের প্রতিটি জ্ঞান যেমন কাজের সাথে যুক্ত, তেমনি প্রতিটি কাজ জ্ঞানের সাথে যুক্ত। কুরআনে যত স্থানে ঈমানের কথা বলা হয়েছে, সব স্থানে আমল বা কাজের উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব, গুরুত্বের দিক থেকে উভয়টি সমান। শুধু তা-ই নয়, জ্ঞান অর্জনের জন্য যেমন ফজিলত ও মর্যাদার কথা বর্ণিত হয়েছে, তদ্রƒপ আমল করার জন্যও আদেশ দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমল করো, অচিরেই তোমাদের আমলগুলো প্রদর্শন করা হবে।’ (সূরা তাওবা : ১০৫)
ইসলাম সম্পর্কে জানার পর সে অনুযায়ী আমল করা আবশ্যক। ইলম অনুযায়ী কিংবা উপদেশ অনুযায়ী আমল না করার পরিণাম ভয়াবহ শাস্তি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বক্তব্য অনুযায়ী আমল না করা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ।’ (সূরা সফ : ৪)
যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জন থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখল সে ফরজ লঙ্ঘন করায় গুনাহগার হবে। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জন করার পরও আমল থেকে দূরে থাকল তার পরিণতি হবে আরো ভয়াবহ। নিম্নে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হলো : এক. আল্লাহর আদালতে জিজ্ঞাসিত হওয়া : রাসূল সা: বলেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দার পদযুগল সরবে না, যে পর্যন্ত না তাকে পাঁচটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হবে, তন্মধ্যে একটি হলো, তার জ্ঞান অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে?’ (তিরমিজি : ২৪১৭) হাদিসটি হাসান ও সহিহ।
দুই. জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া : হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: বলেন, এক ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন নিয়ে আসা হবে। তার পর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এতে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। আর সে তা নিয়ে ঘুরতে থাকবে যেমনভাবে গাধা আটা পিষা জাঁতার সাথে ঘুরতে থাকে। জাহান্নামিরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করবে, আপনি কি আমাদের ভালো কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ করতেন না? সে বলবে, হ্যাঁ। আমি তোমাদের ভালো কাজের আদেশ করতাম, কিন্তু নিজে করতাম না। আর খারাপ কাজের নিষেধ করতাম কিন্তু নিজেই তা করতাম। (বুখারি)
তিন. আল্লাহর ক্রোধ ও শাস্তি অবধারিত : ইলম অনুযায়ী আমল না করা আল্লাহর ক্রোধের কারণ এবং এটি ইহুদিদের চরিত্র। তাই সূরা ফাতিহার মধ্যে ইহুদিদেরকে ‘আল্লাহর ক্রোধের শিকার’ বলা হয়েছে। কেননা তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত আসমানি কিতাব তাওরাতের জ্ঞান রাখত; কিন্তু তদনুযায়ী আমল করত না। তারা রাসূল সা:-কে তাদের সন্তানের মতো করে চিনত; কিন্তু তার পরও তাকে স্বীকার করেনি।’ (সূরা আনআম : ২০)
অতএব, আমলবিহীন ইলম কিয়ামতের দিন বড় শাস্তির কারণ হবে। আমলবিহীন ব্যক্তি ফলবিহীন বৃক্ষের মতো। সুতরাং মানুষের উচিত দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের যেকোনো বিধান জানার পর সে মোতাবেক কর্ম সম্পাদন করা।
পরিশেষে বলব, জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বাস্তবায়ন করা, যেন আখিরাতের অনন্ত জীবনের পাথেয় লাভে সমর্থ হওয়া যায়। মহান আল্লাহ প্রত্যেক মুসলিমের জীবনে ইলম ও আমলের সমন্বয় করার তাওফিক দান করেন। আমিন। লেখক : প্রফেসর, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com