প্রায় সাড়ে চারশো বছরের পুরানো দেশের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী তাঁরা মায়ের মন্দিরে শনিবার বাৎসরিক কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজা উপলক্ষে মন্দিরকে নব সাজে সাজানো হয়েছে। বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের সংলগ্ন গৌরনদী উপজেলার বার্থী তাঁরা মায়ের মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক (ট্রাষ্টী) প্রণব কুমার বাবু দত্ত জানান, দেশের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী বার্থী তাঁরা মায়ের মন্দিরটি গৌরনদী বার্থী এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারই নামানুসারে একে একে ওই এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বার্থী তাঁরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তাঁরাকুপি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তাঁরাকুপি নামের একটি গ্রাম। বাংলা ১১১ সালে বরিশালের বিখ্যাত জমিদার রাম লাল ভ্রট্রাচার্য তাঁরা মায়ের মন্দিরের পাকা ভবন নির্মান করে দেন। পরবতীতে বরিশালের অন্যতম দানশীল ব্যত্তিত্ব কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার ও বিশিষ্ট শীল্পপতি বিজয় কৃষ্ণ দে আর্থিক সহায়তায় তাঁরা মায়ের মন্দিরটি সুরম্য অট্রালিকায় দৃষ্ঠিনন্দন মুন্দিরে রুপ লাভ করে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার তাঁরা মায়ের ভক্তদেও প্রসিদ্ব সার্বজনীন এ মুন্দিরটির কার্যত্রুম পরিচালিত হয়ে আসছে। পুজা উদ্যাপন কমিটির সহ-সম্পাদক সজল ঘোষ জানান, অশান্ত বিশ্বে আজ পারস্পারিক হানাহানি। করোনার মহামারি থেকে রহ্মা পেতে মানব জীবন মোহময় ও অন্ধকারছন্ন। এ মোহময় অন্ধকার দুর করতে জীবনে দুঃখ মোচন ও শান্তি অর্জনের এবং জগতের মঈলার্থে বাংলা ২১ ফাল্গুন ব্যাপক আয়োজনের মধ্যদিয়ে তাঁরা মায়ের মন্দিরের বাৎসরিক পূজা হয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তিনি আরও জানান, শনিবার সকাল থেকে কালী পূজা শুরু হয়। মন্দিরের পুরোহিত অনিল চন্দ্র পূজা অর্চনা করবেন। পূজার দিনে সকালে চন্ডিপাঠ ও শিতলা পূজা, দুপুরে বলিদান, বিকালে গীতাপাঠ, সন্ধ্যায় মায়ের সামনে আরতি প্রতিযেগীতা, রাতে প্রসাদ বিতরণ ও শিবাভোগ, গভীর রাতে ধর্মীয় গান অনুষ্ঠিত হবে। পূজা উপলক্ষে মন্দিরকে আলোক সজ্জায় সজ্জিতসহ বর্নিল সাজে সাজানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে ভারত এবং দেশের গোপালগঞ্জ, খুলনা, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, ঢাকা, বাগেরহাট, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মন্দির ভক্তরা উপস্থিত হয়েছিলো। গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ আফজাল হোসেন জানান, পূজার দিন মন্দির এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়েছিলো। এছাড়া মন্দিরে বাৎসরিক কালীপূজা উপলক্ষে পুস্পাঞ্জলী স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার বলেছেন, মনে রাখতে হবে সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নেই। তাদের পরিচয় তারা সন্ত্রাসী। এদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সোচ্চার হতে হবে। জঙ্গীবাদ কোন ধর্মীয় চেতনা নয়। এটা একটা রাজনীতি। তাকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে। ধর্ম আমাদের পরস্পরের মধ্যে বিরোধ তৈরি করা শেখায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্ম বিশ্বাসী, কিন্তু ধর্মান্ধনন। তিনি ধর্মান্ধতার অভিযান রুখতে একটি ভারসাম্যনীতি অনুসরন করে চলেছেন। বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন। মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত এএসপি শান্তনু ঘোষের সভাপতিত্বে স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আলোচনাসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যান ট্রাস্টি ভানুলাল দে, বার্থী শ্রী শ্রী তাঁরা মায়ের মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য নারায়ন চন্দ্র দে নারু, অমর কৃষ্ণ রায়, শিশির কুন্ডু, মোহনলাল চক্রবর্তী, প্রণবরঞ্জন দত্ত। বক্তব্য রাখেন, পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রদীপ কুমার দত্ত, সহ- সভাপতি চক্রবর্তী নিতাই লাল, ডাঃ মণীষ চন্দ্র বিশ্বাস, সাধারন সম্পাদক অপু রায়, সাবেক সভাপতি বিল্টু রঞ্জন সাহা, পুস্পাঞ্জলী স্মরনিকার সম্পাদক বিশ^জিত সরকার প্রমূখ। এছাড়া সন্ধ্যায় গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মো হারিছুর রহমান মন্দিরে ভক্তদের উদ্দেশ্যে মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ্ পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার ও উপস্থিত ভক্ত এবং নেতৃবৃন্দের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।