শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

শমী কায়সারকে মামলা থেকে অব্যাহতি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৭ মার্চ, ২০২১

সাংবাদিকদের ‘চোর’ বলে সম্বোধন করায় অভিনেত্রী শমী কায়সারের বিরুদ্ধে করা ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলায় অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবি আই) দেয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলার দায় থেকে তাকে অব্যাহতি দেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় সাক্ষী খুঁজে না পাওয়ায় বিবাদিকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করে গত ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদারের আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন পিবি আইর পরিদর্শক লুৎফর রহমান। পরের দিন ৪ মার্চ মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি রোববার গ্রহণ করে মামলার দায় থেকে বিবাদি শমী কায়সারকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পিবি আইর পরিদর্শক লুৎফর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে কোনো সাক্ষী খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে শমী কায়সারকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করি।
স্টুডেন্টস জার্নাল বিডির সম্পাদক মিঞা মো: নুজহাতুল হাচান ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকা মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূরের আদালতে এ মানহানির মামলা করেন। আদালত বাদির জবানবন্দি গ্রহণ করে শাহবাগ থানার পরিদর্শককে (ওসি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। গত ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর স্টুডেন্টস জার্নাল বিডির সম্পাদক মিঞা মো: নুজহাতুল হাচান পুলিশের দেয়া প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দেন। এ নারাজি শুনানি শেষে আদালত মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য পিবি আইকে নির্দেশ দেন। পরে ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর মামলার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে ঢাকা মহানগর হাকিম জিয়াউর রহমানের আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান।
প্রতিবেদনে মাহবুবুর রহমান উল্লেখ করেন, শমী কায়সারের বক্তব্যে মানহানির মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। মামলার বাদি এ বিষয়ে সাক্ষ্য ও প্রমাণ হাজির করতে পারেননি।
মামলার প্রেক্ষাপট: ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠান থেকে শমী কায়সারের দু’টি মোবাইল চুরি হয়। ওই অনুষ্ঠানে অর্ধশত ক্যামেরাম্যান ছাড়াও শতাধিক মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে স্মার্টফোন চুরির অভিযোগ এনে তাদের আটকে রেখেছিলেন অভিনেত্রী শমী কায়সার। এ সময় দরজা বন্ধ রেখে তিনি প্রায় অর্ধশত সাংবাদিকের দেহেও তল্লাশি করিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, শমীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীরা এক আলোকচিত্র সাংবাদিকের ক্যামেরার লেন্স খুলেও তল্লাশি করতে চেয়েছিলেন বলে ওই সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন। এ সময় আটকে রাখা কোনো কোনো সাংবাদিক বের হতে চাইলে ‘চোর’ বলে তাদের হেনস্তা করেন শমী কায়সারের নিরাপত্তাকর্মীরা। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন সংবাদকর্মীরা। শেষে ক্ষুব্ধ সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে শমী কায়সার ক্ষমা চেয়ে শেষ রক্ষা পান।
শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে শমী অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর এখন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি এবং এফবিসিসিআইর পরিচালক।
ঘটনার সূত্রপাত ওইদিন সকাল ১০টার পর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে। সেখানে ‘বিন্দু ৩৬৫’ নামের একটি টুরিজম কোম্পানির যাত্রা শুরুর অনুষ্ঠান ছিল সকাল ১০টায়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। অনুষ্ঠানে তখনো প্রধান অতিথি উপস্থিত হননি। এর আগেই র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বক্তব্য দিয়ে বের হয়ে যান। এরপর আয়োজকেরা কেক কাটার সিদ্ধান্ত নেন।
চলচ্চিত্র তারকা জয়া আহসান, সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি ও অভিনেত্রী শমী কায়সারের উপস্থিতিতে শুরু হয় কেক কাটা। এরই মধ্যে অভিনেত্রী শমী কায়সার চিৎকার দিয়ে ওঠেন, ‘আমার দু’টি ফোনই চুরি হয়েছে।’ এ সময় পুরো মিলনায়তনে শমী কায়সারকে নিয়ে হট্টগোল শুরু হয়। এ সময় তিনি সাংবাদিকেরা তার মোবাইল চুরি করেছে অভিযোগ করে মিলনায়তনে উপস্থিত সবাইকে আটকে রাখার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকের পকেটে তল্লাশি চালিয়ে ফোন দু’টি খুঁজে বের করা হবে।’ এরপর প্রায় ১০ মিনিট ধরে মিলনায়তনে একাধিক সাংবাদিকের ব্যাগ তল্লাশি করা হয়।
ওই সময় অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত সবাই শমী কায়সারের বিরুদ্ধে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তাদের অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনায় ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানান অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালনে আসা সাংবাদিকেরা। অবস্থা বেগতিক দেখে শমী কায়সার নিজেকে রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান অতিথি আসার আগেই অনুষ্ঠান সমাপ্ত ঘোষণা করেন আয়োজকেরা।
এরপর আয়োজক ও অতিথিদের উপস্থিতিতে সিসিটিভি ও উপস্থিত টিভি ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, কেক কাটার সময় কেকের পাশে থাকা সাদা টি-শার্ট পরিহিত এক তরুণ শমী কায়সারের ফোন দু’টি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। তার পরনে অনুষ্ঠান আয়োজক প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবীদের টি-শার্ট ছিল। তবে ভিডিওতে তার চেহারা দেখা না যাওয়ায় আয়োজকেরা নিশ্চিত হতে পারেননি ওই তরুণ তাদের স্বেচ্ছাসেবী ছিলেন কি না। ভিডিও ফুটেজ দেখার পর শমী কায়সার তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান। তিনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত বাজে একটি দৃষ্টান্ত হলো। ফোন তল্লাশির ঘটনায় অনেকে কষ্ট পেয়েছেন, সাংবাদিকেরা প্রতিবাদ করেছেন। আমি সত্যিই খুব দুঃখিত।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com