প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে দেশের অধিকাংশ এলাকা লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। তারপরও দেখা যাচ্ছে, অনেকে লকডাউন না মেনে বিনা প্রয়োজনে চলাফেরা করছেন। এতে ভাইরাসের বিস্তারের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। যারা লকডাউনের নিয়ম বা আইন লঙ্ঘন করবেন তাদের ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে।
জনস্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি হ্রাসকরণের লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইন লঙ্ঘন করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে। ইতোমধ্যে এই আইনের ক্ষমতা বলেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ‘পুরো দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ)’ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
২০১৮ সালে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইনের ২৪ ধারায় বলা হয়েছে-
২৪ (১) : যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটাতে সহায়তা করেন বা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অপর কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসিবার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি তাহার নিকট গোপন করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ডে বা অনূর্ধ্ব ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান ও নির্দেশ পালনে অসম্মতি জ্ঞাপনের অপরাধ ও দণ্ড
আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়েছে-
২৫ (১) যদি কোনো ব্যক্তি-
(ক) মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তাহার উপর অর্পিত কোনো দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন, এবং
(খ) সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশ্যে মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোনো নির্দেশ পালনে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন,
তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) মাস কারাদণ্ডে বা অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
মিথ্যা বা ভুল তথ্য প্রদানের অপরাধ ও দণ্ড
২৬ ধারায় বলা হয়েছে-
২৬ (১) যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য প্রদান করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ২ (দুই) মাস কারাদণ্ডে বা অনূর্ধ্ব ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ফৌজদারি কার্যবিধির প্রয়োগ
আইনের ২৭ ধারায় বলা হয়েছে-
‘এই আইনের অধীন সংঘটিত কোনো অপরাধের অভিযোগ দায়ের, তদন্ত, বিচার ও আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির বিধানাবলি প্রযোজ্য হইবে।’
অপরাধের অ-আমলযোগ্যতা, জামিনযোগ্যতা ও আপসযোগ্যতা
আইনের ২৮ ধারায় বলা হয়েছে-
‘এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধসমূহ অ-আমলযোগ্য (Non-cognizable), জামিনযোগ্য (Bailable)এবং আপসযোগ্য (Compoundable) হইবে।
অসুবিধা দূরীকরণ
আইনের ৩১ ধারায় বলা হয়েছে-
‘এই আইনের কোনো বিধানের অস্পষ্টতার কারণে উহা কার্যকর করিবার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে, সরকার এই আইনের অন্যান্য বিধানের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সরকারি গেজেটে প্রকাশিত আদেশ দ্বারা উক্ত বিধানের স্পষ্টীকরণ বা ব্যাখ্যা প্রদানপূর্বক উক্ত বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান করিতে পারিবে।’
বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা
আইনের ৩২ ধারায় বলা হয়েছে-
‘এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।’
তফসিল সংশোধনের ক্ষমতা
আইনে ৩৩ ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা তফসিল সংশোধন করিতে পারিবে।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে অকারণে ঘোরাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীজুড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে।
শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় রমনা বিভাগের নিউমার্কেট থানা এলাকায় ৭টি মামলায় ১৫ হাজার জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। লালবাগ বিভাগের সূত্রাপুর থানা এলাকার ৬টি মামলায় ১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
মতিঝিল বিভাগের মুগদা থানা এলাকায় ৫ জনকে ১ হাজার ৫০০ টাকা ও উত্তরা বিভাগের উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় ১৩ মামলায় ১৩ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করে ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এমআইপি/প্রিন্স/খবরপত্র