হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও তার সঙ্গীদের নিজ বাড়িতে দাওয়াত করেছেন ফরিদপুরের আলোচিত সংসদ সদস্য মজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন। গত সোমবার (৮ মার্চ) বিকালে ফরিদপুরের ঘারুয়া ইউনিয়নের ঘারুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাঠে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তার এই বক্তব্যর ভিডিও ইতোমধ্যে ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে। যেটি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মামুনুল হকের মতো একজন মাওলানা যিনি ইসলামের দাওয়াত দেন তিনি তার (নিক্সন) বাড়িতে গেলে নিজেকে ধন্য মনে করবেন।
ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ সংসদ সদস্য বক্তৃতায় বলেন, হেফাজতের নেতা মাওলানা মামুনুলকে দাওয়াত করলাম, আপনি যত মাওলানাদের সঙ্গে নিয়ে আসতে পারেন; আসেন। আমি খাওয়াতে প্রস্তুত আছি। মামুনুল হক ফরিদপুর এসে বলেছেন- আমি নিক্সন চৌধুরীর বাড়িতে দাওয়াত খাব, আমার সঙ্গে তার (নিক্সন চৌধুরী) কোনো বিরোধ নাই। আমি বলব আপনি আসেন, আপনার সঙ্গে যত মাওলানা আছে নিয়ে আসেন একবার না একশবার দাওয়াত খান। আপনার দাওয়াত কবুল।
নিক্সন চৌধুরী বলেন, একটু ভুল বোঝাবুঝি আছে। আমি চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। মাওলানা মামুনুল হক আমাদের জাতীয় নেতাদের নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, ওই অনুষ্ঠানে তার তার জবাব দিয়েছি। রাজনীতিতে চিরশত্রু বলতে কিছু নাই। আপনি একজন মাওলানা। আপনি ধর্ম শিক্ষা দেন। আপনি ফরিদপুরের ওয়াজে বলছেন যে, আপনি আমার বাড়িতে দাওয়াত খাবেন। আমি বলব, আপনি না আপনার সঙ্গে যত মাওলানা আছে সবাইকে নিয়ে এসে একবার না একশবার আমার বাড়িতে দাওয়াত খান। আমি আপনাকে কবুল করলাম। কিন্তু আপনি একটা দল করেন হেফাজতে ইসলাম। আমি একটা দল করি যুবলীগ। আমার নেতাকে নিয়ে কিছু বললে অবশ্যই আমি প্রতিবাদ করব। আপনার নেতাকে নিয়ে বললে অবশ্যই আপনি প্রতিবাদ করবেন, সেই প্রতিবাদই আমি চট্টগ্রামে করেছিলাম।
হেফাজত নেতার উদ্দেশে নিক্সন চৌধুরী বলেন, আপনি ফরিদপুরে এসে বলেছেন- আপনি আমার বাড়িতে দাওয়াত খেতে চান। আপনি একজন মাওলানা। আপনি ধর্ম শিক্ষা দেন, ওয়াজ করেন। আমি ফরিদপুরের জনতাকে সামনে রেখে বলছি- আপনি আমার বাড়িতে এলে নিজেকে ধন্য মনে করব। আপনার ওয়াজ শোনার জন্য আমার জনগণকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাব। কারণ আপনি আপনার বক্তব্যে বলেছেন- আপনার মরহুম পিতা (আল্লামা আজিজুল হক) আমাদের জাতির জনকের কাছের মানুষ ছিলেন। আপনার বাবা আমাদের জাতির জনকের প্রশংসা করেছেন। আপনি যেহেতু ফরিদপুরের মাটিতে এসে এই সম্মান জাতির জনককে দিয়ে গেছেন, তাই আমি বলব- ভুলত্রুটি আপনারও হতে পারে আমারো হতে পারে। ভুলত্রুটি ভুলে গিয়ে আসেন আমার বাড়িতে কবে খাবেন। আমি কৃতজ্ঞতা জানাব। আমার তিন থানার জনগণ আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে। আপনার মতো একজন ধর্মগুরু আমার বাড়িতে এলে নিজেকে ধন্য মনে করব। আমি আপনাকে আহ্বান জানাব আসুন একসঙ্গে কাজ করে এই দেশটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
ফরিদপুরের এই সংসদ সদস্য আরো বলেন, আপনার মতো ধর্মগুরু কবে আসবেন, যেদিন আসবেন আমি প্রস্তুত আছি। যে কোনো সময় আমি যেখানেই থাকি না কেন, আপনাকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত আছি। যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিক্সন চৌধুরী বলেন, আপনি আমার প্রতি আস্থা রেখে সারা দেশে যুবলীগকে সংগঠিত করার যে দায়িত্ব আমায় দিয়েছেন, ইনশাআল্লাহ টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথরিয়া সর্বত্র যুবলীগকে আদর্শের সংগঠনে পরিণত করব।
তিনি বলেন, সারা দেশের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন হবে ভাঙ্গায় এবং যুবলীগের ঘাঁটি হবে ফরিদপুরের ভাঙ্গায়। আমরা সারা বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি। তিনি আরো বলেন, আমি গত এক মাসে ৫৪ কোটি টাকার উন্নয়নের কাজ শুধু ঘারুয়া ইউনিয়নে করেছি, যা সারা দেশের কোনো ইউনিয়নে এত বড় উন্নয়ন হয় নাই। আমি তিন থানায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঘারুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিউদ্দিন মোল্লার সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম হাবিবুর রহমান, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেদায়েত উল্লাহ সাকলাইন, সাধারণ সম্পাদক ফাইজুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক সোবাহান মুন্সী, ভাঙ্গা বাজার বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মুন্সী, জেলা পরিষদের সদস্য শেখ শাহিন, আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাপোলো নওরোজ, যুবলীগ নেতা লাভলু মুন্সী, নিরু খলিফা, মতিয়ার রহমান মতি ও বিভিন্ন এলাকার চেয়ারম্যানরা।