জনবান্ধব জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন এর কর্মকাল নরসিংদীতে ৩ বছর। এ সময়ে তিনি নরসিংদী জেলার নান্দনিক সৃজনশীল উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য শিক্ষায় শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক, কর্মসংস্থানের জন্য জনপ্রশাসন পদক, জাতীয় শুদ্ধাচার পদক ও ডিজিটাল বাংলাদেশ পদক সহ অনেকগুলো পদক অর্জনে গর্বিত নরসিংদীবাসী। এক কথায় সাহস, সততা এবং কর্ম যোগ্যতা দিয়ে নরসিংদীর মানুষের মনের মণি কোঠায় জেলা প্রশাসক সৈয়দ ফারহানা কাউনাইন। প্রতিটি সমাজেই কিছু নির্মোহ মানুষ থাকে। যারা তাঁদের নিজস্ব আলোয় আলোকিত করে দেয় রাষ্ট্র এবং মুক্ত জীবনের প্রাঙ্গণ। উদ্ভাসিত করে সমাজ-সংসার। বিকশিত করে সামাজিক মূল্যবোধ। আর্ত আর অসহায়দের কল্যাণে নিবেদিত করে জীবনের অফুরান সময়। যারা তাঁদের সৎ ও আদর্শিক কর্ম-প্রতিভার দীপ্তী দিয়ে মুক্ত আকাশে শুকতারা হয়ে জ্বল জ্বল করে জলে। তেমনি একটি তারার নাম-সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। যিনি তাঁর স্বীয় কর্ম প্রতিভার বিছক্ষুরণ দিয়ে স্পর্শ করে চলেছেন প্রতিটি মানুষের মন। উচ্চতর ব্যক্তিত্বের উৎকর্ষতায় হৃদ্ধ প্রিয়ভাষী মুখ। সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন মনে করেন প্রতিটি মানুষ যদি তার স্বীয় কর্মকে সর্বোচ্চ সৃষ্টিশীলতা দিয়ে আন্তরিকতার সাথে নিপুনভাবে সম্পন্ন করে তবে তা অবশ্যই প্রশংসিত হবে। তিনি বলেন, আমি অ্যাওয়ার্ড বা পুরস্কার প্রাপ্তির প্রত্যাশায় কোন কাজ করি না। আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব নীতি এবং আদর্শের মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ সৃজনশীলতা ও আন্তরিকতা দিয়ে করার চেষ্টা করি। এতে যদি কোন প্রাপ্তি এসে যায় নিশ্চয়ই প্রেরণা করি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বখ্যাত অন্ধ লেখিকা হেলেন কেলার আমাদের মতো সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেন- ‘আমি অন্ধ-তোমরা যারা দেখতে পাও, তাদেরকে একটা কথা আমি বলে যেতে চাই-চোখ দু’টোকে তোমরা এমন ভাবে ব্যবহার করো যেনো আগামী কালই তুমি অন্ধ হয়ে যাবে-আর দেখবে না। তোমার অপর সব ইন্দ্রিয়ের বেলায়ও এমন করেই ভাবতে শিখো। সুরের আওয়াজ, পাখির গান, বাদ্যকারের বাজনা এমন ভাবে শুনবে যেন কালই তুমি বধির হয়ে যাবে। প্রতিটি জিনিস এমন ভাবে ছুঁয়ে দেখবে, যেন সর্বশক্তি অবলুপ্ত হবে আগামী কালই। এভাবে নেবে ফুলের ঘ্রাণ আর খাদ্যের স্বাদ, যেন আগামীকাল আর গন্ধ কিংবা স্বাদের অনুভূতি অবশিষ্ট থাকবে না। সকল ইন্দ্রিয়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করো-প্রকৃতির সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করো। হেলেন কেলারের এই উক্তি গুলোর মতোই যদি যেকোন কাজে ইচ্ছে শক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করি সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে স্বীয় কর্মকে সম্পন্ন করা যায় নিশ্চয়ই প্রশংসিত হবে। সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলার এক সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা এডভোকেট সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম ছিলেন তৎকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। পারিবারিক ঐতিহ্যগত কারনেই সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক চেতনায় বড় হয়েছেন। যার ফলে তাঁর সকল কাজে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক চেতনা লক্ষ্য করা যায়। ছোট বেলা থেকেই তিনি ছিলেন আতœপ্রত্যয়ী ও স্বপ্নচারী নারী। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয় সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচ.এস.সি পাশ করেন। পরবর্তিতে তিনি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তিনি ২০০১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। জেলা প্রশাসন নরসিংদী হিসেবে পদায়িত হওয়ার পূর্বে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ শাখায় কর্মরত ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:- জাইকার সহায়তায় জাপানে ইয়াং লিডার ফর বাংলাদেশ/লোকাল এডমিন কোর্স অস্ট্রেলিয়ার * বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেশনাল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম ফর মিড ক্যারিয়ার প্রোফেসনাল এবং সিঙ্গাপুরের ‘কনফিক্ট রেস্যুলুমান এন্ড নোগোসিয়েশান অন্যতম। তিনি গত ১১ মার্চ নরসিংদী জেলার ১৭তম জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। উল্লেখ্য এ জেলার তিনিই প্রথম নারী জেলা প্রশাসক। অর্জন: জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০১৮ এর ১৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসকের সম্মাননা পদক ও সনদপত্র গ্রহণ করেন। এর পূর্বে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকা কালীন সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে শ্রেষ্ঠ ইউএনও হিসেবে সম্মাননা পদক গ্রহণ করেন সৈয়দা ফরহানা কাউনাইন। এছাড়াও জনপ্রশাসন পদক ২০১৯, জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার২০২০, এবং সম্প্রতি পেয়েছেন ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২০। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এতগুলো দেশ সেরা পুরষ্কার একজন সরকারি কর্মকর্তার ক্ষেত্রে বিরল। তথ্য অধিকার অনলাইন প্রশিক্ষণে সারা দেশে অন্যতম সাফল্য ছাড়াও তাঁর ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য পুরষ্কার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন এই কর্মকর্তা একদিন কেবিনেট সচিব হয়ে দেশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হবেন এমন প্রত্যাশাই এ অঞ্চলের মানুষের। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান যদি আজও বেঁচে থাকতেন তবে হয়তো ফারহানা কাউনাইনকে কাছে ডেকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলতেন, ‘মা’ থেমে যাস না, এগিয়ে যা বীর দর্পে। তোকে এই বাংলার মানুষের বড় বেশী দরকার’।