বিশ্বজুড়ে মহামারী রূপ নেয়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রেখা বাংলাদেশে ফের ঊর্ধ্বমুখী। গত চার সপ্তাহ ধরে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে টানা চতুর্থ দিনের মতো এক হাজারের বেশি ব্যক্তির শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এরপরও রাজধানীতে সামাজিক দূরত্ব বজায়ের কোনো দিক-নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। যেনো অনেকটাই অনীহায় রূপ নিয়েছে এই বাধ্যবাধকতা। পথচারীরা একে অপরের শরীরের সঙ্গে ঘেঁষাঘেঁষি করে চলাচল করছে। আর নগরীর বাজারগুলোতেও শত শত মানুষকে জটলা বেঁধে মাছ সবজি কিনতে দেখা গেছে। এসব জায়গায় সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা বরং মানুষের উপস্থিতিতে জমজমাট চারপাশ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর প্রতিটি সড়ক ও স্থানে মানুষের ভিড়। কোথাও কম, কোথাও বেশি। করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগের কারণে সরকারি সিদ্ধান্তে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দিলেও সেটা অনেকটাই তোয়াক্কা করছে সাধারণ জনগণ।
এদিকে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সংক্রমণ শুরুর প্রথম দিকে সব ধরণের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। কিছুদিন পর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার কর্তৃক স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচলের ঘোষণা দেয়া হয়। সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহনগুলোতে নিয়ম করে দেয়া হয় ‘দুজনের সিটে একজন করে বসবে’। শুরুর দিকে গণপরিবহনগুলো এই নিয়ম যথাযথভাবে পালন করলেও এখন আর এ নিয়ম মানছে না। আর কোনো প্রকার স্বাস্থ্যবিধিও মানা হচ্ছে না। বরং গণপরিবহনগুলোতে এখন আগের মতোই গাড়িভর্তি যাত্রী নিচ্ছে, দুই সিটে একজনের পরিবর্তে দুজন বসাচ্ছে, এমনকি দাঁড়িয়ে লোক নিতে লক্ষ্য করা গেছে।
এবিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে বিশেষ করে মাস্ক পরা নিয়ে লোকজনের উদাসীনতা চরম মাত্রায় উঠেছে। যার ফলে সামনের দিনগুলোয় সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ১৪ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ সময় করোনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
দেশে এ পর্যন্ত মোট ৫ লাখ ৫৬ হাজার ২৩৬ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮ হাজার ৫২৭ জন মারা গেছেন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ১০ হাজার ৩১০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ হাজার ২০৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।
করোনা ভাইরাস নিয়ে মানুষকে সচেতন করার জন্য সংক্রমণের শুরু থেকে সারা দেশের মাঠে নেমেছিলো সেনাবাহিনী। পাশাপাশি বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও মানুষকে সচেতন করতে মাঠে ছিলো।
অন্যদিকে দেশে সংক্রমণ শুরুর দিকে রোগী শনাক্তের হার কম ছিলো। গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর থেকে নতুন রোগীর পাশাপাশি শনাক্তের হারও কমতে শুরু করেছিলো। মাস দুয়েক সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকার পর গত নভেম্বরের শুরুর দিক থেকে নতুন রোগী ও শনাক্তের হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। ডিসেম্বর থেকে সংক্রমণ আবার কমতে শুরু করে।
সামাজিক দূরত্ব না মানার বিষয়ে জানতে চাইলে মিলন নামে এক পথচারী এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই চলাচল করতে চাই। কিন্তু বাসায় বাইরে বের হলে সামাজিক দূরত্ব আর বজায় রাখা যায় না। কারণ অনেকেই এসে গা ঘেঁষে চলাচল করে। ওই সময় তাদেরকে কিছু বললে তারা বলেন, করোনার ভয় পেলে বাইরে বের হয়েছেন কেনো। ‘বাংলাদেশে কোন করোনা নাই’- অনেকে এই কথাও হাসতে হাসতে বলেন। করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণের লক্ষে গত ২৭ জানুয়ারি দেশে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এদিন গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রসঙ্গত, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের ঘোষণা আসে। আর ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরপর ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর আগামী ৩০ মার্চ স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যদিও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বৈঠকে বসবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।