রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪১ পূর্বাহ্ন

বিয়ের ২২ দিনের মাথায় স্ত্রীকে তালাকের এ্যাফিডেভিট নবজাতককে নিয়ে ঠাঁই হলো না স্বামীর বাড়িতে

ছোলায়মান সরকার সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা) :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বাসিন্দা রোকসানা খাতুন। বিয়ে হয় সাদুল্লাপুর এলাকার রাজা মিয়ার সঙ্গে। এ বিয়ের ২২ দিনের মাথায় তালাকের জন্য এ্যাফিডেভিট করে রাজা মিয়া। সম্প্রতি রোকসানার গর্ভে জন্ম হয় মেয়ে সন্তান। অবশেষে এ সন্তানের ঠাঁই হয়নি রাজা মিয়ার বাড়িতে। সরেজমিনে জানা যায়, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের ধনিয়ারকুড়া গ্রামের রিকশা চালক লুৎফর রহমানের মেয়ে রোকসানা খাতুন। ছাত্রী জীবন অব্যাহত থাকাবস্থায় ৪ বছর আগে প্রথম বিয়ে হয়েছিল সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া এলাকায়। সেখানে তালাকপ্রাপ্ত হয়ে পিতার বাড়িতে বসবাস করে রোকসানা। সেখান থেকে গাইবান্ধা সরকারি কলেজে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে অনার্সে ভর্তি হয়। এ শিক্ষা জীবন চলাকালে রোকসানার দ্বিতীয় বিয়ে হয় নলডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রতাপ গ্রামের মাহাবুর আলীর ছেলে রাজা মিয়ার সঙ্গে। এই রাজা মিয়াও আগে একটি বিয়ে করছিলেন বামনডাঙ্গার কালীবাড়ী এলাকার এক মেয়েকে। এই মেয়েকেও তালাক দেয় রাজা মিয়া। এ নিয়ে মামলা করে প্রথম স্ত্রী। এ মামলাটি আদালতে বিচারাধীন থাকাবস্থায় গত ২০২০ সালের জুন মাসে রাজা মিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করে রোকসানাকে। এরপর সংসারের প্রতি উদাসীন ও বেপর্দা-উৎশৃঙ্খল চলা ফেরার অভিযোগে ২ জুলাই ২০২০ ইং তারিখে অর্থাৎ বিয়ের ২২ দিনের মাথায় গাইবান্ধা নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে রোকসানাকে তালাকের এ্যাফিডেভিট সম্পাদন করে রাজা মিয়া। এরপরও প্রায় ৩ মাস রোকসনার সঙ্গে দাম্পত্য জীবন চলার একপর্যায়ে রাজা মিয়া ঢাকাস্থ মুসলিম সুইটস নামের একটি দোকানে চাকুরি নেয়। সেই থেকে স্ত্রীর সঙ্গে তেমন কোন যোগাযোগ না করে ঢাকায় অবস্থান করে আসছেন রাজা মিয়া। এখনো সেখানে রয়েছেন তিনি। এর মধ্যে রোকসানা গর্ভাস্থায় কখনো শ্বশুর বাড়ি আবার কখনো পিতার বাড়িতে বসবাস করছিলেন। ধারাবাহিকতায় শ্বশুর বাড়িতে থাকাবস্থায় ৮ মার্চ রোকসানার সন্তান প্রসবের জন্য নেয়া হয় রংপুরের সালেহীন ক্লিনিক এ- ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে। সেখানে ফুটফুটে একটি মেয়ে শিশু জন্ম দেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন ফুপি শাশুরি কোহিনুর বেমগ ও মাতা ফাতেমা বেগম। এরপর ১১ মার্চ দুপুরের দিকে রোকসানা তার নবজাতক কন্যাকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে ফিরে আসলে বাড়িরে গেইটে তালা ঝুলতে দেখতে পায়। ঘন্টা দুয়েক অপেক্ষায় শ্বশুবাড়ির লোকজন না আসলেও বাধ্য হয়ে ৯৯৯ কল দেন রোকসানা। ছুটে আসেন সাদুল্লাপুর থানা পুলিশ। এসময় রাজা মিয়ার বাড়িতে কোন লোকজন না পেয়ে ওই গেইটের সামন থেকে নবজাতকসহ রোকসানাকে উদ্ধার করে পিতার বাড়ি সুন্দরগঞ্জে পাঠিয়ে দেন এসআই হান্নান। ভুক্তভোগি রোকসানা জানান, বিয়ের সময়ে সুখের সংসারের জন্য ৮০ হাজার টাকা দিয়ে স্বামী রাজা মিয়াকে সহযোগিতা করেছে রিকশা চালক পিতা লুৎফর রহমান। এরপর থেকে প্রায়ই মোটা অংকের যৌতুকের চাপ দিয়ে আসছিলেন শ্বশুর মাহাবুর আলী ও স্বামী রাজা মিয়া। তাদের এ দাবি মেটাতে না পেরে অসময়ে-অসময়ে মানসিক নির্যাতন করে আসছিলেন তারা। এমতাবস্থায় মেয়ে সন্তান জন্ম হবে জেনে তালাকের কথা লোকমুখে জানা যায়। রোকসানা আরও বলেন, ১১ মার্চ দুপুরে রংপুর ক্লিনিক থেকে নবজাতক কন্যাকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে আসা হলে, শ্বশুর বাড়ির লোকজন গেইটে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে পিতার বাড়িতে পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে শ্বশুর মাহাবুর আলী বলেন, আমার স্ত্রী আছমা বেগম প্রায় ২৫ দিন ধরে ঢাকায় রয়েছে। ১১ মার্চ সকাল থেকে অপর ছেলে আশরাফুল জীবিকার তাগিদে ইলেক্ট্রিশিয়ান কাজের জন্য বাহিরে ছিলো। আর আমি দুপুরের সময় জোহরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে গিয়েছিলাম। এসময় লোকশূণ্য বাড়ির গেইটে তালা দিয়ে যেতে হয়েছে। নামাজ পড়া শেষে লোকমুখে জানতে পারি যে, রোকসানা বাড়িতে পুলিশ নিয়ে এসেছে। তিনি আরও বলেন, রোকসানার কাছে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন বহিরাগত ছেলে আসতো। তারা কেউই পরিচিত নয়। চরিত্র খারাপের কারনে বিয়ের ২২ দিনের মাথায় রোকসানাকে তালাকের জন্য এ্যাফিডেভিট করেছে ছেলে রাজা মিয়া। রোকসানার মামা আব্দুল লতিফ মিয়া জানান, মেয়ে সন্তানের খবর জেনে রোকসানাকে তালাক দিয়েছে এবং এ প্রসূতি-নবজাতককে বাড়ির উঠান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে রাজার স্বজনরা। এ ঘটনায় থানায় যাওয়া হয়েছিল। লিখিত অভিযোগ কিংবা এজাহার করা হয়নি। তবে কোর্টে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সাদুল্লাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুদ রানা জানান, বাড়ির তালাবদ্ধ গেইটের সামনে প্রসূতি রোকসানা তার নবজাতক কন্যাকে নিয়ে বসে থাকার খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে তার পিতার বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com