শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে আটক ১২৭ জন মুসলিম ১৯ বছর পর নির্দোষ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ, ২০২১

মোহাম্মদ আব্দুল হাই ২০০১ সালের ২৬শে ডিসেম্বরের রাতে রাজস্থান রাজ্যের যোধপুর থেকে ট্রেনে চড়ে গুজরাটের সুরাত শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন মোহাম্মদ আব্দুল হাই। সুরাতে মুসলিম শিক্ষার উপর একটি তিন দিনব্যাপী সেমিনারে যোগ দিতে যান তিনি। সেমিনারটির আয়োজন করেছিল অল ইন্ডিয়া মাইনরিটি এডুকেশন বোর্ড। তৎকালীন সময়ে হাই ছিলেন এই বোর্ডের একজন সহযোগী সদস্য ও যোধপুরের জয় নারায়ণ ব্যাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন তিনি। ধারণা করা হয়েছিল, সেমিনারটিতে সারা ভারত থেকে প্রায় ৪০০ মুসলিম প-িত, অধিকারকর্মী ও সাম্প্রদায়িক নেতারা অংশ নেবেন। সেমিনারটি নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন হাই। তখনো তিনি জানতেন না, ঠিক পরদিনই তার জীবন চিরদিনের জন্য বদলে যাবেÍ তাকে ‘সন্ত্রাসী’ তকমা দেওয়া হবে, ১৪ মাস কাটাতে হবে কারাগারে। হাইসহ সেমিনারটিতে অংশ্রগ্রহণকারী আরো ১২০ জন অবস্থান করছিলেন সুরাতের রাজশ্রী হলে। পরদিন আনুমানিক রাত ১১টার দিকে হলটিতে অভিযান চালায় পুলিশ। সন্ত্রাসবিরোধী ‘অবৈধ কার্যক্রম (প্রতিরোধ) আইন (ইউএপিএ)’ আইনে সকলকে হলটিতে অবস্থানরত সকলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ সংগঠন স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া (এসআইএমআই)-এর সদস্য হওয়ার এবং সংগঠনটির পক্ষে প্রচারণা চালানো ও তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। সবমিলিয়ে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১২৭ জন মুসলিমকে।
গ্রেপ্তারের ১৯ বছর পর গত রোববার সুরাতের একটি আদালত মামলা থেকে তাদের সকলকে নির্দোষ সাব্যস্ত করেন। এদের মধ্যে বন্দি অবস্থায়ই প্রাণ হারিয়েছেন ৫ জন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এসএমআইয়ের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছে। এছাড়া, পাকিস্তান-ভিত্তিক কয়েকটি সশস্ত্র দলের সঙ্গেও সংগঠনটি সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগ তুলেছে। সংগঠনটির সদস্য হওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শত শত ব্যক্তিকে। কিন্তু সংগঠনটির দাবি, তারা কেবল ভারতের মুসলিমদের জন্য একটি ‘ইসলামি জীবনদর্শন’ এর প্রচারণা চালিয়ে থাকে। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার পর সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারত সরকার।
২০ বছর মেয়াদী অগ্নিপরীক্ষা: ৬ই মার্চের রায়ে সুরাতের আদালত জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা এসআইএমআই এর সদস্য বা তারা দলটির কার্যক্রমের প্রচারণা চালাচ্ছিলÍ এমন দাবির পক্ষে অকাট্য, নির্ভরযোগ্য ও সন্তুষ্টজনক প্রমাণ সরবরাহ করতে পারেনি প্রসিকিউশন। একারণে তাদের ইউএপিএ আইনের আওতায় দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না। মামলাটি নিয়ে হাই আল জাজিরাকে বলেন, এই মামলা আমাদের ও আমাদের পরিবারের জন্য বহু সমস্যা তৈরি করেছে। অনেকে তাদের সরকারি চাকরি হারিয়েছেন। অনেকে কয়েক বছর চাকরি পারতে পারেননি। ১৪ মাস কারাগারে থাকার পর ২০০২ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে হাইকে জামিন দেন। কিন্তু তার অগ্নিপরীক্ষা সেখানেই শেষ হয়নি। বেশ কয়েক বছর ধরে প্রতি সপ্তাহে বাড়ি থেকে ৭০০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করে সুরাতে পুলিশের সামনে হাজিরা দিতে হতো থাকে। মাসে দুই বার হাজিরা দিতে হতে শহরটির এক ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে। এদিকে, মুক্তি পাওয়ার তিন মাসের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপকের চাকরিতে পুনরায় কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয় থাকে। কিন্তু তখন থেকে মামলার কারণে পাননি আর কোনো পদোন্নতি। ২০১৫ সালে একই পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। হাই’র বয়স এখন ৬৬।
হাই’র মতো একই মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আসিফ ইকবাল (৫৩)। ঘটনার সময় সুরাত মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের একজন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন তিনি। গ্রেপ্তারের পর চার মাস কারগারে কাটান তিনি। এরপর জামিন পেলেও, কাজ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় তাকে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে চূড়ান্তভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়।
ইকবাল বলেন, আমি কর্মকর্তাদের বারবার বলেছি যে, মামলাটি এখনো আদালতে বিচারাধীন আর আমাকে এখনো দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। আমাকে আমার কাজ করতে দিন। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনি ও বরখাস্ত করে দিয়েছে।
ইকবালের ২০২৭ সালে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তিনি বলেন, এই মামলা আমার জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে। দেড় দশক ধরে আমি পুরো বেতন পাইনি। পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তার ৭৫ বয়সী বাবাকে এখনো অটোরিএক্সা চালাতে হয়। এটা তাকে অপরাধবোধে ভোগায় বলে জানান ইকবাল।
আদালত থেকে খালাস পেয়ে আগের চাকরিতে তাকে পুনর্বহাল করার ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। ইকবাল ও হাই’র মতো মামলাটিতে গ্রেপ্তার হওয়া আরেক ব্যক্তি হচ্ছেন আসিফ শেখ (৫১)। গ্রেপ্তার হওয়ার সময় গুজরাট ইউনিভার্সিটিতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনা করছিলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষার্থীদের একজন ছিলেন আসিফ। কিন্তু গ্রেপ্তার হওয়ার পর আর নিজের পছন্দের বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারেননি। তিনি বলেন, আমাকে এসআইএমআই’র সদস্যের তকমা দিয়ে দেওয়া হয়। এই তকমার কারণে কোনো প্রতিষ্ঠান আমায় চাকরি দেয়নি। ভয়ঙ্কর কোনো সন্ত্রাসীর মতো আমাদের বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়েছিল। শেখ বলেন, জামিন পাওয়ার পর একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু মামলার ব্যাপারটি জানাজানি হওয়ার পর তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
তিনি বলেন, আমি একজন সাংবাদিক হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমি মশলা বিক্রি করি। (আল জাজিরা অবলম্বনে)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com