বেশি গরম খাবার খেলে অথবা চা-কফিতে চুমুক দিলে জিহ্বা পুড়ে যেতে পারে। গরম খাবারে জিহ্বা, ঠোঁট এবং মুখের তালু পুড়ে যাওয়া খুবই সাধারণ একটা বিষয়। কারণ মানুষ চা, কফি, পিৎজাসহ নানা ধরনের খাবার গরম খেতে পছন্দ করে। অনেক সময় খাবার কিছুটা ঠা-া হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে না, তাই এমনটি হয়ে থাকে।
মুখের ভেতরে যে শ্লেষ্মা ঝিল্লি থাকে তা শরীরের অন্যান্য স্থানের ত্বকের তুলনায় অনেক বেশ সূক্ষ্ম, তাই অল্পতেই পুড়ে যায়। অর্থাৎ গরম খাবারকেই শুধু এর জন্য দায়ী করা যায় না, কারণ এ স্থানের ত্বক নিজেও খুব নমনীয়। অন্যান্য স্থানের পোড়ার মতো জিহ্বার পোড়ার তীব্রতাও বিস্তৃত হতে পারে। গরম খাবার এবং তরল পানীয় থেকে বেশিরভাগ পোড়া সাধারণত প্রথম ডিগ্রির পোড়া হয়, যা দ্রুত জ্বালা সৃষ্টি করে এবং মোটামুটি দ্রুত সেরে যায়, সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যেই।
প্রথম ডিগ্রি জিহ্বা পোড়া বেদনাদায়ক হয় এবং লালভাব বা ফোলা প্রদর্শন করে। কিন্তু আরো গুরুতর লক্ষণ যেমন ফোসকা পড়া দ্বিতীয় ডিগ্রির পোড়া নির্দেশ করে এবং সাদা বা কালো সুস্পষ্টভাবে জিহ্বা পোড়া তৃতীয় ডিগ্রির পোড়ার লক্ষণ। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ডিগ্রির পোড়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
গরম খাবার এবং তরল পানীয় থেকে বেশিরভাগ পোড়া সাধারণত প্রথম ডিগ্রির পোড়া হয়, তাই আপনি ঘরোয়া উপায়ে এ ক্ষেত্রে জিহ্বাকে স্বস্তি দিতে পারেন। জেনে নিন জিহ্বা বা মুখের ভেতরের ত্বক পুড়ে গেলে করণীয় কী।
জিহ্বাকে দ্রুত শীতল করুন: জিহ্বা পুড়ে গেলে প্রথমেই এটাকে শীতল করার চেষ্টা করা উচিত। যত দ্রুত সম্ভর ঠান্ডা পানি মুখের ভেতরে কিছুটা সময় রেখে দিতে হবে। চাইলে কুলি করে নিন ঠান্ডা পানি দিয়ে। এ ক্ষেত্রে বরফের টুকরা মুখের ভেতরে দিলে সেটি ক্ষতস্থানে আটকে গিয়ে আরো ক্ষতি করতে পারে। এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে, সামান্য চিনি ক্ষতস্থানে দেওয়া যেতে পারে, এতে করে ব্যথা কমে যায়।
ঝাল খাবার এড়িয়ে চলুন: জিহ্বা পুড়ে গেলে এটাকে উক্ত্যক্ত করতে পারে এমন খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলুন। এসময় ঝাল বা মসলা জাতীয় খাবার ও গরম পানীয় অবশ্যই পরিহার করা উচিত, অন্যথায় জিহ্বার অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে। অ্যালকোহলও বর্জন করুন। এছাড়া অন্যান্য যেসব খাবার খেলে জিহ্বাতে জ্বালাপোড়া করে বা অস্বস্তি লাগে তাও বাদ দিন। চিপস জাতীয় কর্কশ খাবার খাওয়া যাবে না। নরম ও হালকা খাবার খেতে হবে।
জিহ্বা ব্রাশ করা থেকে বিরত থাকুন: যারা স্বাস্থ্য সচেতনতার গুরুত্ব বুঝেন তারা প্রতিদিন দাঁতের পাশাপাশি জিহ্বাও ব্রাশ করে থাকেন। দাঁতের চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি আপনাকে দিনে দুইবার জিহ্বা ব্রাশ করার পরামর্শ দিতে পারেন, কিন্তু জিহ্বা পুড়ে গেলে এটা মানতে যাবেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, পোড়া জিহ্বার ব্যথা ও সংবেদনশীলতা প্রতিরোধে এটা নিরাময়কালে জিহ্বা ব্রাশ করা উচিত নয়।
দুধ পান করুন: দুধ পান করলে অথবা দুগ্ধজাত খাবার খেলে পোড়া জিহ্বায় আরাম পেতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুধ পোড়া জিহ্বায় প্রলেপ দিতে পারে ও শীতল করতে পারে। এই উপকারিতা পেতে দইও খেতে পারেন।
লবণ-পানি দিয়ে কুলি করুন: প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার লবণ-পানি দিয়ে কুলি করতে পারেন। লবণ-পানি দিয়ে কুলি করলে তা অ্যান্টিসেফটিকের কাজ করে এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ করে। পুড়ে যাওয়া জিহ্বাকে প্রশান্তি দিতে খাবার খাওয়ার পর ও ঘুমাতে যাওয়ার আগে লবণ-পানি দিয়ে কুলি করতে পারেন। এক গ্লাস পানিতে ১/২ চা চামচ লবণ মিশিয়ে লবণ-পানি তৈরি করতে পারেন। এছাড়া জিহ্বার পোড়া স্থান আঙুল দিয়ে স্পর্শ করা যাবে না, কেননা এর ফলে তা আরো অস্বস্তি সৃষ্টি করবে এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটাবে।
ব্যথার ওষুধ খান (যদি প্রয়োজন বোধ করেন): সাধারণত গরম খাবারে জিহ্বা পুড়লে ওষুধের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যদি আপনি অনেক ব্যথা অনুভব করেন তাহলে ব্যথার ওষুধ খেতে পারেন। আমরা সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই যেসব ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করি তা ব্যবহার করলেই চলবে, যেমন- আইবুপ্রোফেন অথবা অ্যাসিটামিনোফেন/প্যারাসিটামল। এক সপ্তাহ পরও সেরে ওঠার লক্ষণ না দেখলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বিবেচনা করুন। তথ্যসূত্র: ইনসাইডার
অন্য একটি সূত্রে আরো কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যেমন: মুখ দিয়ে জোরে শ্বাস নিন: জিহ্বা পুড়ে গেলে মুখ দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করুন। এতে শ্বাসের কারণে বাতাস সৃষ্টি হয় এবং জিহ্বা শীতল হয়। পোড়া ভাবও কম লাগে।
চিনি ও দুধ পাউডার খান: চা- কফি খাবার সময় ভুলবশত জিহ্বা পুড়ে যায়। তখনি চট জলদি পাশে থাকা দুধ পাউডার ও চিনি নিয়ে জিহ্বায় ছড়িয়ে দিন। দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি আরাম অনুভব করবেন। এমনকি জ্বালাপোড়াও কমে যাবে। এটি খুব ভালো ঘরোয়া উপায়।
অ্যালোভেরার ব্যবহার: সাধারণত পুড়ে যাওয়া স্থানে ঠাণ্ডা কিছু দেয়া উচিত। এতে জ্বালাপোড়া ও ব্যথা দূর হয় খুব সহজে। এর জন্য অ্যালোভেরা খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। অ্যালোভেরা খুব দ্রুত সময়ে ব্যথা কমায় এবং পুড়ে যাওয়া স্থানে একটি ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা অনুভূতির সৃষ্টি করে।
বরফের ব্যবহার: পুড়ে যাওয়া স্থানে বরফ লাগান। কারণ বরফ জিহ্বাতে ঠা-া অনুভূতির সৃষ্টি করে এবং জ্বালাপোড়া দ্রুত কমিয়ে দেয়। একান্তই যদি বরফ না পাওয়া যায়, তবে ঠাণ্ডাপানি দিয়ে কুলকুচি করে নিন। ঠাণ্ডা পানিও পোড়া স্থানের জন্য খুবই উপকারী।
ঠাণ্ডা জাতীয় খাবার খান:জিহ্বা পুড়ে গেলে ঠাণ্ডা জাতীয় খাবার ও পানীয় গ্রহণ করুন। যেমন- দই, আইসক্রিম, জুস ইত্যাদি। এসব খুব উপকারী। কেননা ঠাণ্ডা জাতীয় খাবার পুড়ে যাওয়া জিভে শীতলতা প্রদান করে।
মধু লাগান: আক্রান্ত স্থানে আপনি মধু লাগাতে পারেন। কারণ মধু অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও সংক্রমণ রুখে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। সে সঙ্গে পুড়ে যাওয়া প্রদাহ রোধ করে। তাই পুড়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে জিহ্বাতে মধুর প্রলেপ লাগিয়ে নিন। এটি পরবর্তীতে আপনার মুখের ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়তা করবে।
আঁশজাতীয় খাবার গ্রহণ করুন: আঁশজাতীয় খাবার পোড়া স্থানে একটি পাতলা প্রলেপ সৃষ্টি করে থাকে। যার ফলে পোড়া জায়গায় জ্বালা কম হয়। তাই বেশি করে আঁশ জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন।