বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ০৪:৩৪ অপরাহ্ন

পাঁচ সরকারি হাসপাতালকে প্রস্তুতির নির্দেশ 

শামছুল আরিফ:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৪ মার্চ, ২০২১

সাত মাসে সর্বোচ্চ শনাক্ত তারপরও উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

করোনা রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকায় সরকারি আরো পাঁচটি হাসপাতালকে পুনরায় প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ডা. বিলকিস বেগম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এই নির্দেশ দেয়া হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশে ক্রমাগত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য রাজধানীর মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল, ঢাকা মহানগর হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ডিএনসিসি করোনা আইসোলেশন সেন্টার ও সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে সার্বিকভাবে প্রস্তুত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। প্রসঙ্গত, গত বছর করোনায় আক্রান্ত রোগী বাড়তে থাকায় এই হাসপাতালগুলোকে করোনা ডেডিকেটেড করা হয়। তবে পরবর্তীতে রোগীর সংখ্যা কমে আসায় এসব হাসপাতালে করোনা ইউনিটের পাশাপাশি অন্য রোগীদের জন্যও সেবা চালু করা হয়।
দেশে করোনায় সংক্রমিত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। প্রথম এক-দুই মাস সংক্রমণের হার কম থাকলেও মে মাসের দিকে সেটি বাড়তে থাকে। সে ধারাবাহিকতায় আগস্ট পর্যন্ত শনাক্তের হার ছিল ২০ শতাংশের উপরে। এরপর কয়েক মাস বাড়া-কমার মধ্যেই ছিল করোনা শনাক্তের হার। তবে সর্বশেষ ডিসেম্বরের দিকে করোনা শনাক্তের হার অনেক কমে যায়। যদিও এক মাসের বেশি সময় ধরে করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ফের বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যাও। করোনা মহামারী পরিস্থিতির অবনতি হলেও মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে। যদিও সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার তাগিদ দেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৮০৯ জনের। একদিনে শনাক্তের দিক থেকে গত সাত মাসে সংক্রমণের এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। আর গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৩০, আড়াই মাসের মধ্যে একদিনে যা সর্বোচ্চ মৃত্যু।
এদিকে সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য নতুন করে ভাবতে হচ্ছে সরকারকে। এর অংশ হিসেবে গতকাল রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে কভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসা সেবা চালুর নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজধানীর আরো পাঁচটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত থাকতে বলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালককে পাঠানো একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ক্রমাগত করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যমান করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের সম্প্রসারণ অপরিহার্য হয়ে পড়ায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে কভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসা সেবা চালু করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’ একইভাবে সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজধানীর পাঁচটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব ড. বিলকিস বেগম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা পাঁচটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল, বাবুবাজারের ঢাকা মহানগর হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ফুলবাড়িয়ার সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল।
গত সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৬৮৭। মারা গেছে ৮ হাজার ৭২০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৭৫৪ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ২৪ হাজার ১৫৯। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫ হাজার ১১১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১১ দশমিক ১৯।
বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর পরই গত বছরের ১৬ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন মেয়াদে সাধারণ ছুটি ও লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। তবে করোনার সংক্রমণ কমে গেলে ডিসেম্বর-জানুয়ারি থেকেই শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি উঠতে থাকে। একপর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেয় সরকার। যদিও ফের সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি আবারো অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
এদিকে দেশে গত ৭ ফেব্র“য়ারি থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি করোনার টিকার গণপ্রয়োগ কার্যক্রম চলছে। শুক্রবার ও অন্যান্য ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট টিকা নিয়েছে ৭০ হাজার ৯৩৩ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৪০ হাজার ২১১ ও নারী ৩০ হাজার ৭২২ জন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com