রাজধানীতে করোনা ডেডিকেটেড বড় ছয়টি হাসপাতালের কোনোটিতেই করোনা রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র-আইসিইউ ফাঁকা নেই। গত সোমবার (৫ এপ্রিল) করোন বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর এ তথ্য জানিয়েছে। এই ছয়টি হাসপাতালের মধ্যে কুয়েত- বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের নির্ধারিত ১৬ বেড, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ১০টি, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসাপাতালের ১৬টি, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ৬টি, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ১৫টি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি বেডের সবগুলোতে রোগী ভর্তি রয়েছে। অপরদিকে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২০ বেডের মধ্যে রোগী ভর্তি আছেন ১৯ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৯ বেডের মধ্যে রোগী ভর্তি আছেন ১৭ জন। অর্থাৎ এ দুই হাসপাতালে আইসিইউ বেড ফাঁকা রয়েছে মাত্র তিনটি।
রোগীর চাপের কারণে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ বেড স্থাপন করা হয়েছে ১০টি, তাতে রোগী ভর্তি আছেন দুই জন। এই হাসপাতালে ৮টি বেড ফাঁকা আছে। সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় সাধারণ বেড থাকলেও সেখানে আইসিইউ সুবিধা নেই। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তালিকাভুক্ত সরকারি হাসপাতালের ১২৮টি আইসিইউ বেডে রোগী ভর্তি আছেন ১১৭ জন, বেড খালি রয়েছে মাত্র ১১টি। জানা গেছে, তালিকাভুক্ত বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট আইসিইউ বেড রয়েছে ১৮০টি। এর বিপরীতে রোগী ভর্তি আছেন ১৬৬ জন। বেড ফাঁকা রয়েছে মাত্র ১৪টি। রাজধানী ঢাকায় অধিদফতরের তালিকাভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট বেড রয়েছে ৩০৮টি, এর বিপরীতে রোগী ভর্তি আছেন ২৮৩ জন। বেড ফাঁকা রয়েছে মাত্র ২৫টি। সারা দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য মোট আইসিইউ বেড রয়েছে ৫৯৮টি, আর রোগী ভর্তি আছেন ৪৩৪ জন। বেড ফাঁকা রয়েছে ১৭৪টি।
ডেডবডি নামালেই খালি হচ্ছে বেড: ‘গত ১ এপ্রিল আব্বাকে নিয়ে সারারাত রাস্তায় ঘুরেছি।’ নিজে যে হাসপাতালে চাকরি করছেন সেটার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে ডা. জেসমিন ফেরদৌসী আরও বলেন, ‘সেদিন পুরো রাত ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ঘুরেছি। একটি বেডও পাইনি। সে রাত গেল, পরের দিনও গেল। তার পরদিন বেসরকারি একটি হাসপাতালে বেড ম্যানেজ করতে পেরেছি।’
এদিকে এক স্বজনকে ভর্তি করাতে চাইলেও প্রথমে তা পারেননি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডা. আতিকুল হক। বেড খালি পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে করোনা ইউনিটে দায়িত্বরত এক চিকিৎসক ডা. আতিককে জানান, একজন রোগী মারা গেছেন। সেই বেড ফাঁকা হয়েছে।
সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ এতটাই বেড়ে গেছে যে ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডের পাশাপাশি সাধারণ বেডও ফাঁকা মিলছে না। অনেকক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে কোনও রোগী মারা গেলে তার ডেডবডি নামিয়ে অন্য কাউকে ভর্তি করতে হচ্ছে। ‘এতদিন করোনা আক্রান্তদের জন্য আইসিইউ পেতে সমসা হচ্ছিল। এখন সাধারণ বেডও মিলছে না। ওয়ার্ডগুলোও ভর্তি। ডেডবডি নামালেই বেড খালি হচ্ছে। অবস্থা কিন্তু এমনই খারাপের দিকে যাচ্ছে’ -জানালেন ডা. আতিকুল হক।
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান জানালেন, তিনি নিজেও করোনা আক্রান্ত এক স্বজনের জন্য হাসপাতালগুলোতে অনেক খুঁজেও বেড ম্যানেজ করতে পারেননি। জান্নাতুল ফেরদৌসী নামের আরেক রোগীর স্বজন বলেন, ‘আত্মীয়রা যে যেখান থেকে পেরেছেন চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বেড ম্যানেজ করা যায়নি। পরে নতুন করে করোনা চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেছে এমন একটি হাসপাতালে বেড ম্যানেজ করা সম্ভব হয়েছে।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৩ এপ্রিলের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জন্য বেড রয়েছে দুই হাজার ৫১১টি। রোগী ভর্তি রয়েছে দুই হাজার ৪০৬ জন। ফাঁকা রয়েছে ১০৫টি। এর মধ্যে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে বেড রয়েছে ২৭৫টি। ভর্তি আছেন ৪২৮ জন। অতিরিক্ত ভর্তি আছেন ১৫৩ জন রোগী।অধিদফতরের তালিকাভুক্ত বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বেড রয়েছে তিন হাজার ৪৬৮টি। তাতে রোগী ভর্তি আছে দুই হাজার ৯৯৪ জন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ‘বেড খালি হলেই নতুন রোগী ভর্তি করাচ্ছি। আমাদের কোভিডের রোগী থাকে, সাসপেকটেড করোনা রোগী থাকে। বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে আমাদের এখানে আসেন তারা। তাদেরকে তো ফিরিয়ে দিতে পারি না।’
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. খলিলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই হাসপাতালে করোনা ও নন-করোনা রোগী সবাইকে রাখা হয়। আগে করোনা রোগীদের জন্য ১০০ বেড ছিল। গত সপ্তাহে ৫০টি বাড়িয়ে ১৫০ বেড করা হয়। তাতেও কুলাতে না পেরে আজ (৩ এপ্রিল) থেকে আরও ৫০টি বাড়ানো হচ্ছে।’ তিনি আরও জানান, ‘এতে হয়তো আগামী দুই-একদিন চাপ কম থাকবে। কিন্তু তারপর আবার বাড়বে। তবে আমরা প্রস্তুত আছি, যদি আরও বাড়াতে হয়, বাড়াবো।’