রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৩ অপরাহ্ন

কত বোনাস পাবেন বেসরকারি শিক্ষকরা?

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২১

‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১’ জারির পর বেসরকারি শিক্ষকরা শতভাগ বোনাস পাবেন নাকি ২০০৪ সালের অফিস আদেশ অনুযায়ী বোনাস পাবেন তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। নীতিমালা জারির পর শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ‘শতভাগ বোনাস পাবেন শিক্ষকরা’। গণমাধ্যমে শতভাগ বোনাস পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায় বিদ্যমান ব্যবস্থায় বোনাস দেওয়া হবে। শতভাগ বোনাস দিতে হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে।
শতভাগ বোনাস পাওয়া এবং না পাওয়ার বিষয় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘শতভাগ বোনাস দিতে হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। নীতিমালায় শতভাগ উল্লেখ করতে হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া প্রয়োজন হতো। ‘ প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২২ জানুয়ারির অফিস আদেশে শিক্ষকরা এক মাসের মূল বেতনের ২৫ শতাংশ বোনাস পান। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা বোনাস পান ৫০ শতাংশ। বিগত ১৭ বছর ধরে এই বৈষম্য নিরসনে আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা। অন্যদিকে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের সমান বোনাস দাবি করে আসছেন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।
গত ১৮ মার্চ ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১’ জারির পর শতভাগ বোনাস পাওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় শতভাগ উৎসব ভাতা পাবেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নীতিমালার ‘শিক্ষক ও কর্মচারীদের (স্কুল ও কলেজ) বেতন-ভাতা নির্ধারণ’ অনুচ্ছেদের ১১.৭ এর ‘ঙ’ অংশে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন/বোনাসের নির্ধারিত অংশ/উৎসব ভাতার নির্ধারিত অংশ/বৈশাখী ভাতার নির্ধারিত অংশ সরকারের জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫/সরকারের সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেলের সাথে অথবা সরকারের নির্দেশনার সঙ্গে মিল রেখে করতে হবে। ‘ আর নীতিমালার রহিতকরণ অংশে বলা হয়, ‘এ নীতিমালা জারি হওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ এবং জনবল কাঠামো সম্পর্কিত ইতোপূর্বে জারিকৃত নীতিমালা/পরিপত্র/আদেশের সংশ্লিষ্ট অংশ রহিত বলে গণ্য হবে। ‘নীতিমালায় এই দুই অংশ বিশ্লেষণে দেখা যায় সর্বশেষ নির্দেশনা হচ্ছেÍ ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১’ শিরোনামে জারি করা নীতিমালা। এই নীতিমালার ১১.৭ -এর ‘ঙ’ -এর শেষাংশে বলা হয়, ‘সরকারের সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে অথবা সরকারের নির্দেশনার সঙ্গে মিল রেখে করতে হবে। ‘
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াঁজো ফোরামের মুখপাত্র মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘যেহেতু নতুন নীতিমালা জারির পর এ সংক্রান্ত আগের সব নীতিমালা, পরিপত্র ও আদেশ রহিত করা হয়েছে; সেক্ষেত্রে জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে মিল রেখে অথবা নতুন নির্দেশনার আলোকে বোনাস দিতে হবে। নতুন নীতিমালা জারির পর এখনও কোনও নির্দেশনা, আদেশ ও পরিপত্র জারি করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাই এই পরিস্থিতিতে হয় জাতীয় বেতন কাঠামো অনুযায়ী অথবা নতুন নির্দেশনা জারি করে বোনাস দিতে হবে।’
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বাশিস) ময়মনসিংহ বিভাগের সভাপতি মো. সামছুল আলম বলেন, ‘নীতিমালা জারির আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়ে নীতিমালায় এ সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর দায় মন্ত্রণালয়ের। যদি জাতীয় বেতন কাঠামোর আলোকে বোনাস না দেওয়া হয় তাহলে কোনও আদেশের বলে কত শতাংশ বোনাস দেওয়া হবে? যদি নীতিমালায় অস্পষ্টতা বা সাংঘর্ষিক কিছু থাকে, সে দায় শিক্ষকদের নয়। কারণ নীতিমালা সংশোধনের পর মতামত নেওয়া হয়নি শিক্ষাবিদ এবং কোনও অংশীজনের। ‘
শিক্ষক নেতা মো. নজরুল ইসলাম রনি আরও বলেন, ২০০৪ সালের অফিস আদেশ থাকার কারণে ২০১৮ সালের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় আলাদা করে এই অংশ আনা হয়নি। ফলে ২০০৪ সালের অফিস আদেশ বহাল ছিল। কিন্তু এবার তা নীতিমালায় আনা হয়েছে এবং রহিতকরণ অংশে বলা হয়েছে আগের এ সংক্রান্ত সব পরিপত্র, আদেশ নির্দেশনা রহিত। তার মানে দাঁড়ায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে অথবা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বোনাস দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
নজরুল ইসলাম রনি আরও বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে নীতিমালা সংশোধন করে নতুন নীতিমালা জারি করার কথা ছিল। গত দুই বছরেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে দায় শিক্ষকের হতে পারে না। প্রয়োজনে আগামী ঈদের আগেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করতে পারে। মন্ত্রণালয়কে স্পষ্ট করতে হবে একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বৈষম্য এবং সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বোনাস বৈষম্য টিকিয়ে রাখবে কিনা? জাতীয় বেতন কাঠামো বার বার অমান্য করে শিক্ষকদের অসম্মান করতে চাইলে মন্ত্রণালয় করতেই পাবে। কিন্তু আমাদের দাবি অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজন হলে আইনি লড়াইয়ে যাবেন শিক্ষকরা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com