গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি প্রাক-বাজেট আলোচনা শেষে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, করোনায় স্বাভাবিক কাজ যেমন ব্যাহত হয়েছে তেমনি কৃষিও ব্যাহত হয়েছে। এ কারণেই চালের সরবরাহ কমেছে, ফলে দাম বেড়েছে। তবে অনেক বাজার বিশ্লেষক মনে করেন,ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাজারে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। কিন্তু এই ব্যবসায়ী মূলত কারা? মিলাররা দায়ী করছেন আড়তদারদের। আড়তদার দায়ী করছেন মিলারদের। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা নয়, ওই দুপক্ষই জড়িত। এদিকে আবার আড়তদার ও মিলাররা সুর মিলিয়ে বলছেন, নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে। এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে দাম কমতে শুরু করবে। দেশের চালের মোকাম নামে খ্যাত জয়পুরহাট, বগুড়া ও নাটোরের মিলার ও রাজধানীর বাবুবাজারের আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। অতিবৃষ্টি ও করোনায় শ্রমিকের অভাব ও সর্বশেষ খরায় গতবছর আমনের উৎপাদন কম হয়েছে। এতে চালের সংকট দেখা গেছে বাজারে। আমদানি করেও পূরণ করা সম্ভব হয়নি। তবে দাম বৃদ্ধির জন্য কিছু খুচরা ব্যবসায়ী মিলারদের কারসাজিকে দায়ী করছেন। তাদের দাবি, মোকামের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা মিলার তারাই এতে জড়িত। মিলাররা বলছেন, মোকামে কোনও কারসাজি নাই। যতো সিন্ডিকেট সব আড়তে। রাজধানীর বাবুবাজার, মোহম্মদপুর, গুলশান মার্কেটের চাল ব্যবসায়ীরাই চাল নিয়ে চালবাজি করছেন।
রাজধানীতে চালের শীর্ষ আড়তদারদের কথা হচ্ছে – চালের মোকাম নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া ও জয়পুরহাটে চালের দাম বাড়লে তার প্রভাব সারা দেশে পড়ে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। তাদের যুক্তি হচ্ছে, কমিশনের বিনিময়ে আড়তদাররা চাল বিক্রি করেন। দাম বাড়িয়েও তাদের লাভ নেই। এদিকে মিলাররা বলছেন, তারা প্রতিকেজিতে সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা মুনাফা রেখে চাল বিক্রি করেন। কখনোই কেজিতে এক টাকা মুনাফা করতে পারেন না। কাজেই দাম বাড়ে আড়তে। যেখানে সরকারের সরাসরি মনিটরিং নেই। তৃতীয় ধাপে আড়তের ওপর নির্ভর করে দেশের খুচরা বাজার। আড়তে বাড়লে খুচরা বাজারে দাম বাড়বেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়পুরহাটের মিলার লায়ের আলী জানিয়েছেন, আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে চালের দাম কমতে শুরু করবে। মাঠ থেকে নতুন বোরো ফসল উঠতে শুরু করেছে। তখন আর আড়তদারদের কারসাজি চালের বাজার অস্থির করতে পারবে না।
তিনি জানান, আড়তদাররা মোকাম থেকে নেওয়া নির্দিষ্ট দামের সঙ্গে বাড়তি দাম যুক্ত করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে। তারা যে চালের বাজার নিয়ে খেলছে তা কাগজপত্রই বলে দেবে। কিন্তু তারা কখনোই তাদের বিক্রি সংক্রান্ত কাগজপত্র কাউকে দেখাবে না। ওটা দেখালেই তারা ধরা খাবে।
নওগাঁর মিলার তোফাজ্জল হোসেন জানিয়েছেন, মোকামে কোনও সিন্ডিকেট নেই। এখানে লক্ষ লক্ষ কেজি চাল কেনাবেচা হয়। অল্প মুনাফায় আমরা ছেড়ে দেই। কেজিতে ৩০ বা ৫০ পয়সা পেলেই যথেষ্ট। একদিন চাল ধরে রাখলে বরং আমাদেরই লস বেশি।
এ বিষয়ে বাবুবাজার-বাদামতলীর আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক লক্ষী ভাণ্ডারের মালিক নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, কমিশনের ভিত্তিতে আড়তে চাল কেনাবেচা হয়। মিলাররা যে দর ঠিক করে দেন সেই দরেই বিক্রি করতে হয়। এরপর আসল টাকা তাদের পাঠিয়ে কমিশন আমরা রেখে দেই।
মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারের আড়তদার মোবারক হোসেন জানিয়েছেন, এ অভিযোগ ঠিক নয়। রাজধানীর চালের বাজার সম্পর্কে মিলারদের ধারণা নেই। এ বাজার প্রতিযোগিতাপূর্ণ। এখানে কেজিতে মাত্র পাঁচ পয়সার ব্যবধানে চাল বিক্রি হয়। কারসাজি কে করে? কখন করে? প্রশ্ন মোবারক হোসেনের।
এদিকে পাড়ামহল্লার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের বারবার ঘোষিত বিধিনিষেধের কারণেই চালের দাম বাড়ছে। মিলার ও আড়তদার দুই পক্ষেরই কারসাজি আছে। এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার জানিয়েছেন, নতুন বোরো ফসল উঠতে শুরু করেছে। পাশাপাশি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে আমদানি করা চালও এসে গেছে। কয়েকদিনের মধ্যেই দাম কমতে শুরু করবে।