সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন

তীব্র পানির সংকটে লকডাউন ভেঙে রাস্তায় মানুষ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১

একদিকে করোনার বিধিনিষেধ, অন্যদিকে গরম। চলছে রমজানও। এর মধ্যে দেখা দিয়েছে পানির তীব্র সংকট। রাজধানীর ঘরবন্দি বিভিন্ন এলাকার মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। সংকটের জন্য ঢাকা ওয়াসার ব্যর্থতাকেই দুষছেন বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর শাহজাদপুর দক্ষিণপাড়ায় ফেব্র“য়ারির মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত পানির দেখা পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। পানির দাবিতে গত বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে মিছিলও বের করেন তারা। ঢাকা ওয়াসার মডস জোন ৮-এর অফিসের সামনে জড়ো হন শতাধিক বাসিন্দা। গত এক সপ্তাহ ধরেই চলছে এই পানির এই কঠিন সংকট।

তারা ওয়াসার অফিসে প্রবেশে করতে চাইলে ভাটারা থানার পুলিশ বাধা দেয়। জনগণ উত্তেজিত হয়ে পড়লে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মধ্যস্থতার আশ্বাস দেন। পরে বিক্ষোভকারীদের মধ্য থেকে দুই জন প্রতিনিধি ও ঢাকা ওয়াসার মডস-৮-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মজিদ ওয়াসা অফিসে বৈঠক করেন।
জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা শুভ বলেন, ‘ফেব্র“য়ারির শেষ দিক থেকে আমাদের এলাকায় একফোঁটা পানি আসছে না। অনেকদিন ধরে ওয়াসাকে জানাচ্ছি। কোনও সমাধান করছে না। একবার দেখতেও আসেনি। আজ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসার প্রকৌশলীকে নিয়ে এলাকায় এসেছেন। তারা বলেছেন অল্প কয়েকদিনের মধ্যে সমাধান করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘রমজানে পানির অভাবে বেশ সমস্যা হচ্ছে। ওজু পর্যন্ত করা যাচ্ছে না। রান্নাবান্নার সমস্যা তো আছেই। প্রতিদিন পানি কিনে খেতে হচ্ছে। বড় সমস্যা হচ্ছে ৩০ টাকার জার এখন ৫০ টাকা। ওয়াসা বলছে পানির লাইন নাকি উঁচু হয়ে আছে। পানি না আসলেও বিল আসছে আগের মতোই।’
জানতে চাইলে স্থানীয় ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জাকির হোসেন ক বলেন, ‘প্রধান সড়কে পানি আছে। ভেতরের কয়েকটি গলিতে নেই। এক সপ্তাহ আগে জানতে পেরেছি। আজ ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। তারা দেখেছেন। মঙ্গলবারের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে বিকল্প ব্যবস্থা নেবো।’
ওয়াসার আশা নাকি ধোঁয়াশা? এদিকে নগরীর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ওয়াসার অধিকাংশ পাম্প পানি পাচ্ছে না বলেও জানা গেছে। বাড্ডা এলাকার ওয়াসার পাম্পে গিয়ে দেখা গেছে পাইপ তুলে সেগুলো আরও গভীরে বসানোর কাজ চলছে।
মডস-৮ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘শাহজাদপুর এলাকার একটি পানির পাম্পে সমস্যা ছিল। আশা করছি সেটা আজকের মধ্যে ঠিক হবে। বাকি সব এলাকায় সরবরাহ ঠিক আছে। যেহেতু এখন পিক সিজন, তাই একটু সমস্যা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাড্ডা এলাকার পানির সমস্যা অনেকাংশেই ঠিক করে ফেলেছি। দুয়েকটা এলাকায় কিছুটা সংকট রয়ে গেছে। এগুলো ঠিক করতে কাজ করে যাচ্ছি।’
আশকোনার হাজী ক্যাম্প এলাকার চিত্রও একই। ওই এলাকায় বিভিন্ন বাসবাড়িতে দীর্ঘদিন ঘরে পানির সরবরাহ নেই। দুর্ভোগে পড়ে বিধিনিষেধের মধ্যেও অন্য এলাকা থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের।

জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. আনিছুর রহমান নাঈম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মোল্লারটেক, প্রেমবাগান, কাউলার উত্তরপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ১৫ দিন ধরে পানি নেই। গত পরশু পুরো রাত দাঁড়িয়ে থেকে পাম্প ঠিক করেছি। যে পাম্পে আগে উঠতো ১৮শ লিটার, এখন ২৬শ লিটার উঠছে। কিন্তু ওয়াসা বলছে এটা বেশি দিন থাকবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন করে ওয়াসা পাইপ বসানোর কাজ করায় এলাকায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া তারা পাম্প বসানোর জন্য ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি চাচ্ছে। এটা পাওয়া কঠিন। এলাকায় অনেক খাস জমি রয়েছে। কিন্তু তারা সেখানে পাম্প বসাবে না। খুবই যন্ত্রণার মধ্যে আছি।’
নাক চেপে পানি পান: এদিকে, নগরীর তোপখানা রোড ও যাত্রাবাড়ীর দনিয়া এলাকার পানিতে দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। দনিয়ার বাসিন্দা আব্দুল হাই তুহিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত দুই বছর ধরে ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ পাচ্ছি। অভিযোগ করা হলেও সমাধান হয়নি।
একই কথা জানান তোপখানা রোডের বাসিন্দা সমীরন রায়ও। তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকার পানিতে গন্ধ আছে। গত ১০ দিন ধরে এই সমস্যা হচ্ছে।’ যাত্রাবাড়ীর উত্তর মাতুয়াইল এলাকাতেও পানি নিয়ে হাহাকার চলছে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অন্য জায়গা থেকে পানি সংগ্রহ করতে দেখা গেছে বাসিন্দাদের। এলাকাবাসী জানিয়েছেন দীর্ঘদিন ওয়াসাকে জানিয়েও কাজ হয়নি।
একই অবস্থা শনির আখড়া, জিয়া সরণি, পূর্ব জুরাইনসহ আশপাশের এলাকাতেও। এসব এলাকায় পানি সহজে আসে না। এলেও তাতে দুর্গন্ধ থাকে।
জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘জুরাইনের ঋষিপাড়া, দারোগাবাড়ি রোড, মশারী পট্টি ও কলেজ রোডসহ পুরো এলাকায় পানি সমস্যা। পানিতে প্রচুর ময়লা ও দুর্গন্ধ। বাধ্য হয়েই নাক চেপে পানি পান করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।’
ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, কোভিড পরিস্থিতিতে রমজান মাসে ঢাকা মহানগরে পানি সরবরাহ ঠিক রাখতে মডস জোনগুলোর কার্যক্রম তদারকির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ১০টি অ্যাডভাইজরি ও মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার সচিব প্রকৌশলী শারমিন হক আমীর স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে এসব টিম গঠন করা হয়েছে। তবে ওই টিমের দেখা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ নগরবাসীর।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সমস্যার কথা উল্লেখ করে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com