পবিত্র রমজান মাসের ১০ দিন হয়ে গেলো। এর প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। রোজা আসার আগ মুহূর্তে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছিল, সেই সব পণ্যের দাম কমে এসেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, লকডাউন ও রোজার শুরুতে মানুষ কেনাকাটা বেশি করায় বেড়েছিল চাল, ডাল, তেল, সবজিসহ সব ধরনের পণ্যের দাম। কিন্তু এখন আগের মতো চাহিদা না থাকায় জিনিসপত্রের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে ক্রেতারা বলছেন, নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য বাজার পরিস্থিতি এখনও স্বস্তিদায়ক নয়। রাজধানীর কাওরান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, চাল ডাল ও তেলের সঙ্গে কমছে সব ধরনের সবজির দামও। জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কমলেও অস্বস্তি রয়েছে ভোক্তাদের মধ্যে। এ প্রসঙ্গে রাজধানীর মালিবাগের বাসিন্দা পিয়াস ইসলাম বলেন, ‘দুই মাসের বেশি সময় ধরে অধিকাংশ পণ্যের দাম ছিল চড়া। এখন কিছু পণ্যের দাম কমলেও সীমিত আয়ের মানুষদের জন্য পরিস্থিতি এখনও অস্বস্তিকর।’ তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছিল। ক্রেতাদের নাগালের বাইরে থাকা পণ্যগুলো নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে হতাশা রয়েছেই।’ এদিকে সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে দেড় শতাংশ। মাঝারি মানের চালের দাম কমেছে ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কমেছে ৩ দশমিক ০৬ শতাংশ।
খোলা সয়াবিন তেলের দাম কমেছে দশমিক ৮২ শতাংশ। সয়াবিন তেলের ৫ লিটারের বোতলের দাম কমেছে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আর এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম কমেছে এক দশমিক ৮২ শতাংশ।
ছোলার দাম কমেছে ২ শতাংশ। পেঁয়াজের দাম কমেছে ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। রসুনের দাম কমেছে ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আদা আমদানি কমেছে ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। জিরার দাম কমেছে ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। দারুচিনির দাম কমেছে ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ডিমের দাম কমেছে ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ১৭০ টাকা। আজ সেই ব্রয়লার মুরগির দাম ১৩০ টাকা কেজি। সোনালিকা (কক) ২৫০ টাকা এবং লেয়ার (লাল) ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকায় আর খাসির মাংসের কেজি ৮৫০ টাকা। প্রতিহালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকায়। মানিক নগর এলাকার মুদি ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী জানান, পেঁয়াজের দাম কমেছে। এখন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি। দেশি আদা ও রসুন ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এবং চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি দরে। ছোট দানার মসুর ডাল ১০০ টাকা এবং মোটা দানার রসুন ৭০ টাকা, মুগ ডাল ১২০ টাকা, মটর ডাল ১০০ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা, খেসারি ৮০ টাকা এবং ডাবরি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অ্যাংকর ডালের বেসন ৬০ টাকা এবং বুটের ডালের বেসন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেল কোম্পানি ভেদে বিক্রি হচ্ছে এক লিটার ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৬৪০ থেকে ৬৬০ টাকা। প্রতি কেজি খুচরা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩২ থেকে ১৩৫ টাকা এবং পামওয়েল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে সবজির দামও কমেছে। গত সপ্তাহে যে বেগুন বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সেই বেগুন এখন প্রতিকেজি ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। শসা ৫০ টাকা কেজি; গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়। প্রতিকেজি পটোল, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙে, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। কচুর লতি, বরবটি ও করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। পেঁপে ৪০ টাকা কেজি, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা এবং আলু ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। লাউ ও চালকুমড়া আকার ভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। লেবু হালিপ্রতি আকার ভেদে ২০ থেক ৪০ টাকা। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি, ধনেপাতা ও পুদিনাপাতা ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা কেজি। বাজারে নতুন আসা কাকরোল প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। কাকরোলের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি। এক কেজি কচুর লতি কিনতে গুণতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।