মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম এর উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে হাইল হাওরে ধান কাটা উৎসব পালিত হয়। বৃহস্পতিবার সকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের বরুণা গ্রামে এই ধান কাটা হয়। এত সরকারি কর্মকর্তা, ছাত্র, শিক্ষক, সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক কর্মীরা মিলে হাইল হাওরে কৃষকের বোরো ধান কেটে দিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে সিলেট অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যার সম্ভাবনা থাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলমা বুধবার উপজেলা প্রশাসন শ্রীমঙ্গল এর ফেসবুক আইডি ও পেজে স্বেচ্ছাশ্রমে হাওরে কৃষকের ধান কেটে দেয়ার আহবান জানিয়ে একটি পোস্ট করেন। ফেসবুকে তাঁর এ পোস্ট-এ প্রচুর সাড়া পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার সকালে ইউএনওর আহবানে সাড়া দেয়া বিভিন্ন পেশার ১২৮জন মানুষ সক্রিয়ভাবে ধান কাটা উৎসবে অংশগ্রহণ করেন এবং বরুণা গ্রামের কৃষক রুবেল মিয়ার আড়াই কেয়ার ও জসিম উদ্দিনের দেড় কেয়ার ধান কেটে দেন। ধান কাটায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মাঝে উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের ১৯ জন কর্মকর্তা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫০ জন শিক্ষক ও দপ্তরি, ৩০ জন ছাত্রলীগ কর্মী, সবুজবাগ ম্যারাথন গ্রুপের ১২ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় চা সংসদের ৯ জন, উদ্ধীপ্ত তারুণ্য সংগঠনের ৭ জন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি জানান, এবছর উপজেলায় ৯৬৫২ হেক্টর জমিতে বোরু ধানের আবাদ হয়েছে। এরমধ্য ২৭২৭ হেক্টর জমি হাওরের নিম্নাঞ্চলে। ইতোমধ্যে ২০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আর ২০ শতাংশ ধান কেটে ফেলতে পারলে আমাদের কোনো প্রাকৃতিক ঝুঁকি থাকবে না। কৃষক জসিম উদ্দিন জানান, দুর্যোগের পূর্বাভাস জেনে তিনি খুব চিন্তায় ছিলেন। তার জমির ধান কেটে দেয়ায় তিনি এখন চিন্তামুক্ত। কৃষক রুবেল মিয়া জানান, তিনি শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারছিলেন না। এই ধান কাটাতে তার পাঁচ হাজার টাকা খরচ হতো। এখন তার টাকা ও বাঁচলো এবং টেনশন মুক্ত হলো। অংশগ্রহণকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জানা-উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজ দেখে আমরা ইউএনও স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কৃষকের ধান কেটে দিতে পারায় আমাদের খুব খুশি লাগছে। কুঞ্জবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ একরামুল কবির বরেন-ইউএনও স্যারের আহবানে আমাদেও প্রাথমিক শিক্ষক পরিবারের সদস্যরা এই মহত কাজে অংশগ্রহণ করে হলাম কৃষক পরিবারের উপকার করতে পারায় মনে খুব আনন্দ লাগছে। কৃতজ্ঞতা জানাই নির্বাহী অফিসারকে তিনি এমন মহত কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য। কারণ তিনি এমন ভালো উদ্যোগ না নিলে আমরা কেউ ভালো কাজে সামিল হতে পারতাম না। উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা আবহাওয়া অফিস থেকে তথ্য পেলাম সিলেট অঞ্চলে ২১ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে হাওর অঞ্চলে বর্ন্যা হয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে হাওর অঞ্চলে ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। যদি বন্যা হয় তাহলে সব ধান পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে কৃষকদের যেমন ক্ষতি হবে, ঠিক তেমনি আমাদেরও ক্ষতি হবে। কারণ এই ধান থেকে চাল হয়েই আমাদের আহার হয়। মূলত এজন্যই আমরা সেচ্চাশ্রমে কৃষকের ধান কেটে দেয়ার উদ্দ্যোগ নেই। কোনো ফটোসেশনের জন্য কেউ আজ ভালো কাজে সামিল হননি। কৃষকদের ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্য সবাই মিলে কৃষকের বোরো ধান কেটে দিয়েছেন।